বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: হঠাৎই অগ্নি পরীক্ষায় বাংলাদেশ। এই অগ্নি পরীক্ষায় বাংলাদেশকে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা অনায়াসেই ৯১ রানে জিতে যাওয়াতেই বাংলাদেশের সামনে চলার পথ আর মসৃণ থাকেনি। কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়াতেই বাংলাদেশের সামনে অগ্নি পরীক্ষা হোক আর কাঁটা বিছানো হোক চলে এসেছে। কারণ সময়ের দাবিতে শ্রীলঙ্কার আর আগের শক্তি নেই। বাংলাদেশ সেখানে অনেক শক্ত প্রতিপক্ষ। এমন একটি দল যদি ৯১ রানে হেরে যায়, তা’হলে তাদের বিরাট প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। যে প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে কিংবা সিরিজের সবকিছুকে নিজেদের অনুক‚লে নিয়ে আসতে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। এই পথ এমনই কঠিন যে আর কোনো ম্যাচ হারা চলবে না। সিরিজ জিততে জলে কিংবা টিকে থাকতে হলে আজ দ্বিতীয় ম্যাচ জিততেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। হারলেই সিরিজ শেষ। তখন শেষ ম্যাচ থাকবে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। বাংলাদেশকে এখন নেই ঝলন্ত অগ্নিকুই পাড়ি দিতে হবে। কলম্বোর সেই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেই হবে সেই পরীক্ষা। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের নিয়মিত দলপতি মাশরাফির অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়া নতুন নেতা তামিম ইকবালকে তার দলবল নিয়ে নামতে হবে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য।
শক্তির মানদন্ডে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও চলমান সিরিজে সেই ফারাক খুব একটা নেই। কারণ বিশ্বকাপের সেরা একাদশে নিয়মিত খেলা তিন সেনানি মাশরাফি, সকিব ও সাইফউদ্দিন নেই এই সিরিজে। এদের ঘাটতিই প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে প্রথম ম্যাচে। তা ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং এই তিন বিভাগেই। দেখে মনে হবে বাংলাদেশ সেই আগের জায়গায় ফিরে গেছে, যেখানে খেলতেই নামত হারকে মেনে নিয়ে। সাথে মাঠে ফুটে উঠত দৈন্যদশা। বিশ্বকাপে যে বাংলাদেশের ব্যাটিং সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেই ব্যাটিং লাইনই লঙ্কান বোলিংয়েন সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে ছিলেন না শুধু বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে আট ম্যাচেই ধারাবাহিক (২ সেঞ্চুরি, ৫ হাফ সেঞ্চুরি) ভালো খেলা সাকিবের অভাব কেউ পূরণ করতে পারেননি। একই সাথে তা বোলিং আক্রমণের ওপরও প্রভাব ফেলে। কারণ সাকিবের ১০ ওভারও কেউ পূরণ করতে পারেননি। বলা যায় এক সাকিবকে হারিয়েই বাংলাদেশ শক্তিতে অনেক পিছিয়ে পড়ে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশর যা কিছু চমক ছিল এই সাকিবকে ঘিরেই এবং অবশ্যই তার ব্যাটিং। আবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ছিল আসরের সব থেকে দুর্বল। সেখানে সাকিবের সাথে নেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও দলনেতা মাশরাফি। এর ফলে বোলিং আক্রমণে দুর্বলতা আরো প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। এই সুযোগে লঙ্কানরা তিনশোর্ধ রানের ওপর পুঁজি গড়ে। যদিও এক সময় তা সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে শেষের দিকে বোলাররা কিছুটা নিজেদের ফিরে পেলে লঙ্কানদের ৩১৪ রানে আটকে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ফিল্ডিংয়ে মাহমুদউল্লাহর সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়া যেন বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাব্বিরের আর ভারতের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ক্যাচ ফেলাকেই মনে করিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। তিন বিভাগের এসব দুর্বলতার সাথে ছিল নেতৃত্বের অভাবও। মাশরাফির মতো পুড় খাওয়া বিজ্ঞ দলনেতার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়া তামিম ইকবাল কিছুটা ছিলেন নার্ভাস। তার নেতৃত্বের অভিষেকে কোনো কিছুই তার পক্ষে যায়নি। টস হারা দিয়ে শুরু। পরে নিজে ব্যাট হাতে কোনো রান করতে না পারা। সবশেষে ৯১ রানে হার। এসব পেছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাতে চান চট্টগ্রামের এই ছেলে। প্রথম ম্যাচ হারের পর তিনি বলেন, ‘আমি কিছুটা ধুঁকছি অবশ্যই। আমি যখন অধিনায়ক, শুরুতেই আমার ভালো পারফর্ম করা উচিত। কিন্তু হয়নি। আমাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
প্রথম ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে চলে গেলেও তামিম ইকবাল মনে করেন এখার থেকেও ফিরে আসা সম্ভব। তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন। তামিম ইকবাল বলেন, ‘আমাদের এখনো দুই ম্যাচ বাকি। ভালো দিক হলো সিরিজে এখনো টিকে আছি। ছেলেদের নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। শুধু তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের গুছিয়ে নিতে হবে। আশা করছি ভালো করতে পারব।’ সিরিজে ফিরে আসতে হলে শুধু সিনিয়রদের নয়, পাশাপাশি জুনিয়রদেরও দায়িত্ব নেয়ার কথা জানান তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব সবারই নেয়া উচিত। আমার মনে হয় শুধু একজনকে (মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ ফেলা নিয়ে) দায় দেয়াটা ঠিক না। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। জাতীয় দলের হয়ে দশ বছর খেলুক কিংবা দুই বছরই খেলুক, দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে। এক বা দুজনকে দোষ দেয়াটা ঠিক না।’
ম্যাচ জিততে হলে সেরাটা দিতে হবে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হারের পর সেই আগের একাদশ নিয়ে কী আদৌ নামা হবে! কারণ ম্যাচ জিতলে সেরা একাদশে পরিবর্তন নেহাত কমই হয়। কিন্তু হারলেই চলে কাটা-ছেঁড়া। সিরিজে টিকে থাকতে মরিয়া বাংলাদেশ দল কি তা’হলে আজ সেরা একাদশে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে? স্টিভ রোডস চলে যাওয়ার পর কোচের দায়িত্ব পাওয়া খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় ছিল না পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তিনি জানান, পরিবর্তনের কথা তিনি ভাবছেনই না বলে জানান। প্রথম ম্যাচে তিনি সেরা একাদশই নামিয়েছিলেন। তারা হয়তো সেরাটা দিতে পারেনি। কিন্তু তাদের প্রতি সে আস্থা তার আছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে বলে জানান খালেদ মাহমুদ। তবে সেরা একাদশে পরিবর্তন আসবে কি না সে ব্যাপারে টিম মিটিংয়েই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। যেখানে তার ভ‚মিকা থাকবে অপরিবর্তিত একাদশ! এদিকে একদিন বিরতি দিয়ে আজ আবার খেলতে নামার কারণে গতকাল কোনো অনুশীলন ছিল না দলের। তবে ঐচ্ছিক অনুশীলনে তামিমসহ তিনজন ক্রিকেটার নিজেদের হালকা গা গরম করে নেন।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ২৮ জুলাই ২০১৯/ এমএম





