Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশে কত কিছুই না ঘটছে; আবার কত কিছুই না হারিয়ে যাচ্ছে- তার কতটুকুই বা আমরা নজরে আনি; আনতে পারি। আবার ছোট কোনো কিছুই হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতি জন্য অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। ব্যস্ত জীবনের সামান্য একটি ঘটনাই হয়তো অসামান্য হয়ে গেঁথে যায় আমাদের জীবনে।

একটি বিশেষ কাজে রাজশাহী গিয়েছিলাম। রাতের গাড়িতে গিয়ে আবার রাতের গাড়িতেই ফিরে আসা। এ সময়ের মধ্যে কত কিছুই না জানতে পারলাম! ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’- কথাটা উপলব্ধি করলাম মর্মে মর্মে। আমার কাছে বিষয়টা অভূতপূর্ব হলেও রাজশাহীর মানুষের কাছে তার মূল্যই বা কতটুকু। ভরা বর্ষায় বৃষ্টির লুকোচুরির খেলার মধ্যে পূর্ণ যৌবনা পদ্মার পাড়ে বসে ‘আচারি পেয়ারা’র অভূতপূর্ব স্বাদ আমার কাছে অসামান্য হয়ে ধরা দিলেও পদ্মাপারের বাসিন্দাদের কাছে তার মূল্যই কী?

সারা দিনের কাজের শেষে সন্ধ্যার আগমুহূর্তে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছিলাম পদ্মা গার্ডেনে। অনেকে বড়কুঠিও বলে। পদ্মা গার্ডেন রাজশাহীর একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে আসেন। কপোত-কপোতীর সংখ্যাও কম নয়। সরকারি ছুটি কিংবা উৎসব-পার্বণে কানায়-কানায় ভরে ওঠে পদ্মা গার্ডেন।

পদ্মা গার্ডেন বিহারে সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় এক সাংবাদিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), স্থানীয় বাসিন্দা সদ্য মেডিকেলে ভর্তি হওয়া এক ছাত্রী ও আমার মেয়ে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে অটো থেকে নেমে একটু এগিয়ে যেতেই চোখ পড়ল আচারি পেয়ারার দিকে। ভ্যানের ওপর থরে থরে সাজানো পেয়ারা, শসা, বিভিন্ন ধরনের মশলা আর আচার। সামনে দিয়ে অনেকটা স্থানজুড়ে চেয়ার পাতানো। অনেক চেয়ারই পরিপূর্ণ।

প্রথমে পাত্তা না দিলেও নতুন স্থানে নতুন খাবারের স্বাদ নিতে নিয়ে নিলাম ২ প্লেট আচারি পেয়ারা। পদ্মার নির্মল বাতাসের মধ্যে অনন্য স্বাদের আচারি পেয়ারার স্বাদ যেন আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল। আবেগে আপ্লুত আমি কথা বললাম আচারি পেয়ারার কারিগর আরমান-মর্জিনা দম্পতির সঙ্গে। শুনলাম তাদের আচারি পেয়ারার গল্প।

১৫ বছর ধরে পদ্মা গার্ডেনে ব্যবসা করছেন আরমান-মর্জিনা দম্পতি। তাদের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। এখন রাজশাহী সিটি করপোরেশরনর ২৪নং ওয়ার্ডে ভাড়া থাকেন। তাদের দুই মেয়ে; তারা লেখাপড়া করছে।

সেই সকাল থেকে স্বামী আরমানের (৫০) সঙ্গে ব্যবসায় সহযোগিতা করেন মর্জিনা খাতুন (৪৫)। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা ব্যবসা করেন; ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৭-৮শ টাকা তাদের লাভ হয়। তবে একটি বিষয় শুনে খুব ভালো লাগল; তা হলো- এখানে কোনো ভাড়া দিতে হয় না তাদের। আর নেই কোনো চাঁদাও। এ কারণেই তারা ন্যায্যমূল্যেই বিক্রি করতে পারেন তাদের আচারি পেয়ারা।

আরমান জানালেন, এখানে ব্যবসার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সহযোগিতা করেন। ২৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. আরমান আলী তাদের চেনেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন। ওয়ার্ড কমিশনারের অনেক প্রশংসাও করলেন তিনি।

আরমান-মর্জিনা দম্পতি জানান, কেজি দরে পেয়ারা কিনে আনেন তারা। ভালো করে ধুয়ে কেজি দরেই বিক্রি করেন। ক্রেতাদের চোখের সামনে পেয়ারা কেটে টুকরা করে বাড়িতে বানানো মশলা আর আচার দিয়ে মাখিয়ে প্লেটে করে বিতরণ করেন। তারা এর নাম দিয়েছেন আচারি পেয়ারা।

সঙ্গে থাকা আমার সেই সাংবাদিক বন্ধুটি বললেন, আমি শহর থেকে অনেকটা দূরে থাকি। কোনো কাজে শহরে আসলে আচারি পেয়ারার স্বাদ নিতে ভুলি না। বিনোদনের পাশাপাশি পেটের জ্বালাও কিছুটা মেটে।

সিলেট মেডিকেল কলেজে সদ্য ভর্তি হওয়া (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) মারজিয়া সুলতানা রিদিকা বলেন, পাশেই আমার খালার বাসা। অধিকাংশ সময়েই এখানে থাকি। একটু সুযোগ পেলেই চলে আসি পদ্মা গার্ডেনে আচারি পেয়ারার স্বাদ নিতে। প্রতিবারই এর স্বাদ নতুন লাগে। মনে হয় এবারই প্রথম খাচ্ছি।

সেদিন রাতের গাড়িতেই ফিরে আসলাম যান্ত্রিকনগরী ঢাকায়। সামান্য সময়ের মধ্যে দেখা পদ্মা গার্ডেন ও আচারি পেয়ারার স্বাদ এখনো ভুলতে পারছি না। কেউ রাজশাহী গেলে পদ্মার পাড়ে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রে যেতে ভুলবেন না; আচারি পেয়ারার স্বাদ নিতেও ভুলবেন না।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ /এমএম