বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: প্রত্যেক বাবা মায়েরই প্রত্যাশা থাকে তাদের সন্তান গড়ে উঠবে সৎ, চরিত্রবান ও দয়াবান হয়ে। পৃথিবীর কোনো বাবা মা-ই চান না, তাদের সন্তান খারাপ হোক কিংবা কেউ খারাপ বলুক।
সন্তান নৈতিকতার উচ্চাসনে উঠুক, তা সব পিতা-মাতার কাম্য। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবতা কী? আদৌ কি সন্তানরা নৈতিকতা শিক্ষা পাচ্ছে? বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে কি সুশিক্ষা দিতে পারছেন? নাকি উদ্ভট উটের পিঠে সবাই চড়ে বসে আছে?দেশে আশঙ্কাজনক হারে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ০.১০ শতাংশ অর্থাৎ ৫৬ হাজার।
আর ১৮ থেকে উপরে বয়সীদের মধ্যে মাদকাসক্ত ৩.৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ব্যাধির নাম পর্নোগ্রাফি আসক্তি। এর অবস্থা আরও ভয়াবহ।২০১২ সালে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের ওপর গবেষণায় দেখা যায়, ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী সুযোগ পেলে পর্নো দেখে। শতকরা ৭৬ জন শিক্ষার্থী মোবাইল ব্যবহার করে।
ইউএনডিপি ও সিএমএসএসের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণা অনুসারে (যেটা ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলে) দেশে স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৬১.৬৫ শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। ইন্টারনেটের পাশাপাশি খুব সহজভাবেই এগুলো সংগ্রহ করা যাচ্ছে।বিভিন্ন ফটোকপি কিংবা মেমোরিতে গান লোড করার দোকানগুলোয় বছরে ২ দশমিক ৫ কোটি টাকার পর্নো বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে ৩ কোটি টাকার মতো পর্নো ডাউনলোড করা হয়। এটা ইইঝ এর রিপোর্ট।পর্নোগ্রাফি আসক্তি সমাজে অন্য আরও নানা ব্যাধি ছড়াচ্ছে। ৭০.৫৫ শতাংশ কিশোর পর্নো দেখে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে চায়। Bitdefender-এর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দশজন পর্নোগ্রাফি আসক্তের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছরের নিচে।
অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রথমবার পর্নোর সঙ্গে পরিচিত হয় ১১ বছর বয়সে আর ১২-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি আসক্তি বেশি। এর কারণে মানুষে মানুষে ভালোবাসা কমে যাচ্ছে, সংসারগুলো টিকছে না, দেশে ধর্ষণের হার বেড়ে গেছে।সন্তানকে নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারার ফলে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল, বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি। মানুষের আয়ুষ্কাল আর কতটুকুই! প্রথম বয়সে পড়াশোনা, যৌবনে সংসার আর বৃদ্ধ বয়সে অবসর কাটানো। এ সামান্য বয়সেরও শেষ সময়ে এসে যদি কাউকে বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হয়, তাহলে সেটা কতটা নির্মম হতে পারে?
বৃদ্ধ বয়সে এসে কেউ যদি নাতি-নাতনির সঙ্গে, সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারেন, তাহলে তিনি সারা জীবন কাদের জন্য করে গেলেন? অথচ দেখা গেছে, বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন; তাদের অধিকাংশই সচ্ছল পরিবার থেকে আসা। ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াশোনা করিয়েছে, প্রতিষ্ঠিত করেছে; এখন আর তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকছে না।এ থেকে উত্তরণে ও সামাজিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই সময় দিন। যেখানেই পড়াশোনা করুক, আগে নৈতিকতা শিক্ষা দিন। প্রচুর পড়াশোনা করেও যদি নৈতিকতা শিক্ষা না পায়, সে শিক্ষার দাম নেই।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ২৪ জুলাই ২০১৯/ এমএম