Menu

জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফেরানো হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: মাছ চাষ বাড়াতে জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘মৎস্য সপ্তাহ ২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের যত জলাশয় আছে। পুকুর, খাল, বিল, নদী যা আছে সেগুলি আমাদের স্থানীয় সরকার থেকে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বক্ষেত্রেই আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি যে, আমাদের প্রতিটি জলাশয়, সেগুলোকে আমরা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নদীগুলোর ড্রেজিং কাজ শুরু করেছি। ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ ও পানির ধারণক্ষমতা যেন বৃদ্ধি পায় সেদিকেও আমরা কাজ শুরু করেছি।

এ সময় ২১০০ সাল পযন্ত নেয়া ডেল্টা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী; যে পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য নদী খনন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা। যত বেশি পানি প্রবাহ বাড়বে আমাদের মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। মানুষের চাহিদা পূরণ হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৮.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তার সরকারের লক্ষ্য মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়া। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় এবং মৎস্য চাষে পঞ্চম। ইলিশ আহরণে বিশ্বে প্রথম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে আমি অনুরোধ করব, বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে বহু জলা-ডোবা পড়ে থাকে। কোনো একটা জায়গা যেন পড়ে না থাকে। এ লক্ষ্যেই তার সরকারের সময় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দিয়েছি। মানুষকে উৎসাহিত করছি। এর ফলে দেশের ভেতরেও যেমন চাহিদা বাড়বে আবার বিদেশে রফতানিও বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা যে মাছ বিদেশে রফতানি করি, এই রফতানির ক্ষেত্রে মানটা বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। কারণ আমাদের দেশে অতীতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পেয়েছিলাম চিংড়ি রফতানিই বন্ধ হয়েছিল। আমরা অনেক দেন-দরবার করে সেটা আবার চালু করেছি। বর্তমানে মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিরূপণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ শতাংশে নেমে আসায় মানুষের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। তিনি বলেন, আগে একজন দিনমজুর সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা আয় করত, তা দিয়ে হয়তো তার চাল কিনতেই ফুরিয়ে যেত। আজকে কিন্তু সে অবস্থা নেই। আজকে সে খাদ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাছও কিনতে পারে। অর্থাৎ আমিষও গ্রহণ করতে পারে। মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মৎস্য হ্যাচারি আইন ও বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং বিভন্ন জায়গায় মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নীতি গ্রহণ করেছি, জাল যার জলা তার। সেই নীতিতেই জলমহালগুলো সত্যিকার জেলেদের হাতে যেন থাকে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদটা অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, এখানে ৪৩০ প্রকার মৎস্য সম্পদ রয়েছে। কাজেই সেগুলোকে আহরণ করে আমরা দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে পারব। সমুদ্র সম্পদ আহরণে বøু ইকোনমি নামে নীতিমালা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমুদ্রের সম্পদগুলো আহরণ করা এবং তার মধ্যে মৎস্য একটা, সেগুলো আমরা আমাদের অর্থনীতিতে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেদিকে আমরা ইতোমধ্যে দৃষ্টি দিয়েছি।

ইতোমধ্যে জরিপ জাহাজ ‘আর ভি মীনসন্ধানী’ কেনা হয়েছে। গভীর সমুদ্রে টুনা জাতীয় মাছ আহরণে ৯টি লং লাইনার ও ৭টি পার্স সেইনার প্রকৃতির ফিশিং লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি জাহাজ ভাড়া করার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।

উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের জরিপ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, সামুদ্রিক মৎস্য চাষ, উপক‚লীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা হবে। অপ্রচলিত মৎস্য পণ্য যেমন কাঁকড়া, ওয়েস্টার, কোরাল মাছের চাষ, সি-উইড ইত্যাদির চাষ প্রযুক্তিও সম্প্রসারণ করা হবে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ১৯ জুলাই ২০১৯/ এমএম


Array