Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ গত ঈদুল ফিতরে কমপক্ষে তিনশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তিনশ তাজা প্রাণ ঝরে যায়। আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে ঈদযাত্রা।গত ঈদযাত্রা থেকে এবারের ঈদযাত্রা হবে অনেকটাই ব্যতিক্রম। কারণ গত দুই বছর ঈদ আনন্দে বাদসেধেছে মহামারি করোনাভাইরাস। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে সরকারের বিধিনিষেধে ঈদ কেটেছে অনেকটা ঘরবন্দি-নিরানন্দ।

এবার সামগ্রিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার ঈদে গত দুই বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। আনন্দ যাত্রা যেনো কোনো কারণেই কান্নার পরিবেশ সৃষ্টি না করে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবারই সতর্ক করা হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে ঘটে দুর্ঘটনা।

এবারের ঈদযাত্রা উপলক্ষে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের ঢাকা ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। আর এই হিসেবের বাস্তবতাও রয়েছে। একই সঙ্গে গণপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কিত শঙ্কার কথা বলছে সংগঠনটি।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারে এবং বিআরটিও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াতে মানুষকে অসহনীয় যানজটে পড়তে হতে পারে। এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন, বিশেষ করে বৈধ-অবৈধ রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন স্থানে টোল আদায়ের কারণে মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদযাত্রায় স্বস্তি আনতে সড়কে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যানবাহনে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির আশঙ্কা
গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মো.মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবারের ঈদযাত্রায় নানা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

তিনি দাবি করেন, যানজটের কারণে ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে রাজধানীবাসী। যানজট নিরসনে তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সব রাস্তা ও ফুটপাত হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক জানান, করোনা থেকে মুক্তির কারণে এবারের ঈদে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, সব পথের প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

কিন্তু যানজট ও অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে। বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় যানজটে পড়তে হতে পারেন যাত্রীরা। এসব স্থানে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাবে।

সড়কের গুরুত্বপূর্ণ চার পয়েন্ট নিয়ে টেনশন
এবারের ঈদে চিন্তা বাড়াচ্ছে সড়ক ও ফেরি পারাপারের ভোগান্তি। ঢাকা থেকে বের হওয়ার একটি রুট গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় চলছে উন্নয়ন কাজ। বাড়তি মানুষের চাপ আর সেসব উন্নয়ন প্রকল্প মিলিয়ে সড়ক ও নৌপথের কিছু স্থানে তৈরি হতে পারে অচলাবস্থা।

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেসব পয়েন্টে ঘরমুখী মানুষকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব সড়কে বাড়তি ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার সড়ক। এ পথে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন নির্মাণের কাজ চলছে।

শঙ্কা রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ বাইপাস পর্যন্ত সড়ক নিয়ে। সেখানে চলছে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনের কাজ। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি অংশ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং নৌপথের মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দুর্ভোগ হতে পারে
চলমান যানজটের মধ্যে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে যাত্রী পারাপারে দুর্ভোগ আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফেরি ও ঘাট সংকটসহ নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে কিছুদিন ধরে এ রুটে যানজট লেগে আছে।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। তাই আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌরুটে যাত্রী পারাপারে ভোগান্তি কমাতে ফেরি ও ঘাট বাড়াতে হবে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে চার হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদের আগে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ, সঙ্গে তীব্র আকার নেয় দুর্ভোগও।

ফিটনেসহীন যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে
ঈদের সময় অধিক চাহিদা থাকায় সড়কে ফিটনেসহীন যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের প্রবণতা যেমন দেখা যায়। তেমনি নৌপথে পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চে রং মাখিয়ে ‘নতুন’ করে চালানো হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার অদক্ষ চালক দিয়ে যানবাহন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সড়কে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে এসব দিকে নজর দিতেই হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে, গত ঈদুল ফিতরে তিন শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব প্রাণহানি ঠেকাতে এবার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। এমনিতেই দেশের অনেক সড়ক ত্রুটিপূর্ণ থাকায় অথবা মেরামতের অভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরছে। ঈদের সময় নানা কারণে সড়ক আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই যাত্রীর নিরাপত্তায় এ সময়ে প্রশাসনের বিশেষ তৎপরতা চালাতে হবে।

লেখক: হাসান আল বান্না, সংবাদকর্মী

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৪ এপ্রিল ২০২২ /এমএম