বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: জানের ঢল ও ভারি বর্ষণে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা বাদে দেশের বাকি সকল নদীর পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া গতকাল সোমবার জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় ধলেশ্বরী নদী এলাশিন পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অপরদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম ও বান্দরবন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ২৬টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার ও নেপালে ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে দেওয়ানগঞ্জে, ১৫০ মিলিমিটার।
অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের পানিতে নদী তীরবর্তী বেশিরভাগ জনপদ তলিয়ে গিয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় জনবসতি তলিয়ে গিয়ে খাবার পানির সঙ্কটসহ তীব্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে কলাগাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্য সঙ্কট আরো তীব্র হচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ঘরবাড়ি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খামারীরা বিপাকে পড়েছেন তাদের পোষা গবাদিপশু হাঁস-মুরগি নিয়ে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ডুবে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার বড় রকমের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শিগগিরই ব্যাপক আকারে ত্রাণ ও জরুরি ওষুধসেবা পৌঁছে দেয়া হবে। তবে কয়েকটি এলাকায় এরইমধ্যেই ত্রাণ সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় স্থানীয় চিকিৎসকদেরও যথাযথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সিলেটের বিশ্বনাথে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি গ্রামের রাস্তঘাট,স্কুল মাঠ ইতোমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৫০ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ২০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে সোমবার একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। সোমবার উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কশিম বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিক মো. আলমগীর কবির। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৬টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবার। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুর অংশে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অনেক বসতবাড়ি। টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নতুন করে আরো ৭৫ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু করা হবে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার হাজার হাজার পরিবার কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নৌকাযোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। নীলফামারীতে বন্যায় ২১টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ১৬টি স্কুল। দিনাজপুরের কাঁকড়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭০টি বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়ক, মৌলভীবাজার সড়ক, স্টেশন সড়ক, চৌমোহনা চত্বর এলাকায় ঘুরে দেখা যায় বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ১৬ জুলাই ২০১৯/ এমএম





