Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গণহারে অনার্স-মাস্টার্স পড়া কমানো হবে। খুবই ভালো কথা। এটা নিঃসন্দেহে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার একটা প্রকাশ।কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা আসলে কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ব্রিটিশ আমল থেকে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার যে কাঠামো গড়ে উঠেছে (প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়), মূলত সেই কাঠামো ধরেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চলছে।

একথা মোটামুটি সবাই স্বীকার করবে যে, আমরা এখনো বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শোচনীয় অবস্থা দেখলে এটা আরও স্পষ্ট বোঝা যায়। এর মানে হলো, আমাদের কাছে কাঠামো আছে; কিন্তু আমরা প্রত্যাশিত আউটপুট পাচ্ছি না।

যদিও সরকার বসে নেই; নানা পরিকল্পনা, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, সিলেবাস পরিবর্তন ইত্যাদি চলছে। কিন্তু এ সময়ে এসেও সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেসব কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তা যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক নয়। আমরা কোথায় যেন মূল বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছি। মূল সমস্যার সমাধান ও মূল জায়গায় কাজ না করে, পরিবর্তন না করে আমরা অন্যদিকে হাঁটছি।

আমরা জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছি (কোনো কোনো জেলায় তো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে), অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান তলানিতে। এমনকি আমাদের শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি না।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার ধরেই নিয়েছে, গণ্ডায় গণ্ডায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশ উচ্চশিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে। অথচ আমাদের মূল কাজ ছিল আগে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা, তারপর শিক্ষার পরিধি বাড়ানোর দিকে অগ্রসর হওয়া। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হাজারো সমস্যায় জর্জরিত।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সারা বছরই নানা ধরনের গণ্ডগোল লেগে থাকে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে দল, উপদল, গ্রুপিংয়ের শেষ নেই। বলা বাহুল্য, এগুলো শিক্ষা-গবেষণার সহায়ক নয়। তাছাড়া আবাসন, গবেষণা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা সব জায়গায় রয়েছে ঘাটতি। নিরাপদ ক্যাম্পাস, পর্যাপ্ত গবেষণার সুবিধা ও প্রণোদনা, বিশেষজ্ঞ শিক্ষক, সর্বোপরি স্থিতিশীল পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বাড়াতে একান্ত প্রয়োজন।

আমরা কেন জানি এ দিকটা দেখেও না দেখার ভান করে আছি। এর বদলে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে চলছি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা অধরাই থেকে যাচ্ছে। মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রজন্ম। সবশেষে বলতে হয়, শুধু সংখ্যা নয়, এদেশের উচ্চশিক্ষার মানও বৃদ্ধি পাক। তবেই শিক্ষা খাতে সরকারের বিনিয়োগ সফল হবে, জাতি উচ্চশিক্ষার সুফল পাবে।

তৈয়ব শাহনূর : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৯ এপ্রিল ২০২২ /এমএম

 


Array