Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ আমরা সবাই পরিবর্তনের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত। আমরা প্রয়োজনের তাগিদে পরিবর্তিত হই। তবে সব পরিবর্তন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয় যেমন ভৌগোলিক এবং জলবায়ু। আমরা মানিয়ে নিতে শিখেছি কিছু কিছু পরিবর্তন যেমন কালচারাল, ভাষাগত, বর্ণ, ধর্ম ইত্যাদি। ভাষা এবং পরিবেশগত দিক দিয়ে আমরা পরিবর্তিত হয়ে চলেছি। আমি যেমন সুইডিশ ভাষা শিখেছি, সুইডিশদের অনেক জিনিষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শিখেছি ইত্যাদি।

এটা আমার ব্যক্তিগত পরিবর্তন। কিন্তু একজন পুরুষ হঠাৎ মহিলা হলো বা দুইজন মহিলা বা পুরুষ পরস্পর পরস্পরকে ভালোবেসে একত্রে বসবাস শুরু করল। এটাও কিন্তু ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিবর্তন। তবে সব পরিবর্তন আমরা মানুষ জাতি সহজে মেনে নিতে পারি না। মেনে না নিতে পারার অনেক কারণ থাকতে পারে। যে কারণটি বেশি লক্ষ্যণীয় তা হলো পাছে লোকে কিছু বলে। অন্যে কি ভাববে বা বলবে এটার উপর যারা বেশি গুরুত্ব দেয় তাদের জন্য পরিবর্তন মেনে নেয়া যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি ভাবে পরিবর্তিত হওয়াও কঠিন। পৃথিবীতে প্রকৃতি নিজেই পরিবর্তনের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। হয়ত আমি পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে ব্যর্থ, এর জন্য আমরা পরিবর্তনকে দোষারোপ করতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাকেই পরিবর্তিত হতে হবে। কথাটি যত সহজ ভাবে লিখতে পারলাম বাস্তবে ততোটা সহজ নয়। সহজ নয় বলেই সারা বিশ্বের মানুষ আজ সমস্যায় জর্জরিত।

আমি যদি আমার জীবনের পরিবর্তন গুলো নিয়ে একটু রিফ্লেক্ট করি কী দেখতে পাই? বাংলাদেশে থাকতে সব কিছুই সহজ ভাবে পেয়েছি। একই আশা, একই ভাষা, একই মায়ের ভালোবাসা। কোন কিছুরই পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু সুইডেনে আসার পর অনেক পরিবর্তন হয়েছি। আমার পরিবর্তন হওয়াটা আমাকে কোন অবস্থাতেই ছোট করেনি। বরং আমি সহজেই সব জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে, অন্যের প্রতি রেসপেক্ট দেখাতে শিখেছি। আমি নিজেকে যত পরিবর্তন করেছি ততো খাপ খাইয়ে চলতে শিখেছি। খাপ খাইয়ে চলতে পারার কারণে আমার ব্যক্তিত্ব মজবুত হয়েছে। আমি আমার মজবুত ব্যক্তিত্বের ওপর ভিত্তি করে শেয়ার ভ্যালু এবং এগ্রি ট্যু ডিজ এগ্রি কনসেপ্টে বিশ্বাসী হতে পেরেছি।

বর্তমানে পৃথিবীতে মতো এবং দ্বিমত এটাই হচ্ছে সব সমস্যার মূল কারণ। আমরা কী দেখতে সবাই এক রকম? আমাদের চেহারা, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম কী এক? না। তাহলে আমাদের চিন্তা চেতনা কী ভিন্ন হতে পারে না? এই সহজ জিনিষটি যদি আমরা বুঝতে শিখি তবে শুধু আমার নয় পৃথিবীর অর্ধেক সসস্যার সমাধান হবে। বাকি অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে যখন এই সহজ কাজটি সবাই যার যার জায়গা থেকে পালন করতে শুরু করবে।

আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমেরিকান এক বন্ধুর কথা। ১৯৯০ সালে সে সুইডেনে লেখাপড়া করতে আসে। পরে এক সুইডিশ ছেলের সঙ্গে তার ইন্টিমেট সম্পর্ক হয়। বিষয়টি আমার কাছে তখন পছন্দ হয়নি। তাকে আমার পছন্দ না হবার কারণটি জানালে সে বলেছিল রহমান Get a life. তার এই কথাটির অর্থ সেদিন আমার বোধগম্য হয়নি। পরে তারা দুইজনে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার। কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা বিয়ে করে এবং সংসার করতে শুরু করে। সপ্তাহ খানেক একসঙ্গে বসবাস করার পর হাজারও সমস্যা শুরু হয় তাদের মাঝে। কী করা? গেল একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর কাছে। মনোবিজ্ঞানী তাদের দুজনার কথা শোনার পর বললেন, আমি কুঁড়ি বছরের অভিজ্ঞতায় এতটুকু বলব তোমাদের যে সমস্যা সেসব জীবনে আসে যারা কমপক্ষে পনেরো বছর ধরে একত্রে বসবাস করছে। আর তোমরা মাত্র এক সপ্তাহ হলো একত্রে বসবাস শুরু করেছো। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে সুখ তো দুরের কথা জাহান্নাম তোমাদের সামনে। বেটার ডিভোর্স দিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো (get a life)। মনোবিজ্ঞানীর কথা শুনে তারা উত্তেজিত হয়ে বললো আমরা এসেছি তোমার কাছে সমস্যার সমাধান পেতে আর তুমি আমাদের ডিভোর্সের পরামর্শ দিলে! শুনেছি তুমি বড় ধরণের মনোবিজ্ঞানী, এখন দেখছি তুমি good for nothing এই বলে দুই সমকামী বাড়ি গিয়ে তাদের সমস্যা তারা নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করল। সেই থেকে আজ ত্রিশ বছর অবদি তারা একত্রে সংসার করছে।

মনোবিজ্ঞানী ইচ্ছে করলে তাদেরকে দশবার তার চেম্তাবারে পরামর্শের জন্য আসতে বলতে পারত সেইসঙ্গে পরস্পরের সম্পর্ককে জটিল থেকে জটিলতর করতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে সহজ ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল Get a life বেশ সহজ একটি উপদেশ। আমি এতটুকু বলব যা শিখেছি আমার দৈনিন্দন জীবনে, তা হলো নিজের পরিবর্তন নিজেকেই করতে হবে। কাউকে পরিবর্তন করা যায় না, তবে উপদেশ দেয়া যেতে পারে কী করণীয় বা কী বর্জনীয়।

একজন আদর্শ বিশ্বনাগরিক হতে এবং কোয়ালিটি লাইফ পেতে হলে এডজাস্ট করে চলা শিখতে হবে। আমি এডজাস্ট করে চলা শিখেছি; যার ফলে সম্ভব হয়েছে একটি সুন্দর কোয়ালিটি লাইফ পাওয়া। আমি যখন পেরেছি সেক্ষেত্রে আমি বিশ্বাস করি চেষ্টা করলে যে কেউ তা পারবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৩ এপ্রিল ২০২২ /এমএম


Array