Menu

‘ওল্ডম্যান আউট’ এই স্লোগানটি নিয়ে এখন সারা বিশ্বের মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কাজাখস্তানের জনগণ বিক্ষোভ করছে তবে বিক্ষোভকারীদের এই স্লোগান বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাশিম জোমার্ট টোকায়েভকে উদ্দেশ করে নয়। তাঁরা ‘ওল্ডম্যান আউট’ স্লোগান দিচ্ছেন কাজাখস্তানের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভকে উদ্দেশ করে। ৮০ বছরের বেশি বয়সী এই নেতা তিন দশকের বেশি সময় দেশ শাসনের পর ২০১৯ সালে তাঁর অনুগত কূটনীতিক টোকায়েভকে প্রেসিডেন্ট পদে বসান।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী সাউলে বলেন, কাজাখস্তানকে নাজারবায়েভদের একটি ব্যক্তিগত কোম্পানিতে পরিণত করা হয়েছে। শহরের ভেতরের অস্থায়ী তল্লাশিচৌকির সামনে বিক্ষোভকারী ইয়েরমেক আলিমবায়েভ বলেন, শুধু একটা গোষ্ঠী ভালোভাবে বসবাস করছে আর বাকি সবাই দরিদ্র। আবার কিছু বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভ দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন তবে আরও অনেক কিছু করতে পারতেন কিন্তু লোভ ও দুর্বলতার কারণে তিনি অনেক কিছু করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভের বিরুদ্ধে মানুষের এমন ক্ষোভ একসময় অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু এখন সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এটা অবশ্য আমার আলোচনার মূল বিষয়বস্তু নয়।

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে কেন ‘ওল্ডম্যান আউট’ এই স্লোগান বেছে নেওয়া হলো। বৃদ্ধরা কি সব জায়গাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে পড়ছে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন প্রজন্মের কাছে বৃদ্ধরা যেন প্রকান্ড এক বোঝা। ‘ওল্ডম্যান আউট’ এই নীতির উপর ভিত্তি করেই নতুন প্রজন্ম তাদের বাড়ির বয়স্কদের পাঠাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। দ্রুত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, ব্যাপক দারিদ্র্য, ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবের কারণে ঐতিহ্যবাহী যৌথ পারিবারিক ও সামাজিক দেখাশোনার পদ্ধতি ভেঙে পড়ছে। যে সমস্ত বৃদ্ধ বাড়িতে থাকছে তাদের সন্তানরা নিজেদের কর্মজীবন ও সাংসারিক জীবন নিয়ে সব সময় এত ব্যস্ত যে বাবা মায়ের কাছে বসে একটু গল্প করা বা তাদের শরীরের খোঁজ নেওয়ার সময় তাদের নেই। পরিবারের বাইরে থেকেও প্রবীণ নাগরিকদের নানা রকম মৌখিক সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। যেমন বাস ট্রেনের মত গণপরিবহন অথবা রাস্তাঘাটে পথ চলার সময় মৌখিক হেনস্তার শিকার হতে হয়।

কেউ কেউ আবার ছেলে মেয়েদের বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা বৃদ্ধ বয়সে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে। একাকিত্ব থেকেই বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা যায় নানা রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। একজন মানুষ যখন বার্ধক্যে পৌঁছে তখন তার মধ্যে শারীরিক অসামর্থ্যতা, অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতা, অদৃষ্টের উপর দায় চাপানোর মতো বিষয়গুলো দানা বেঁধে উঠে। এই সমস্ত কারণে অনেক বৃদ্ধই নিজেদেরকে অবাঞ্চিত, পরিবার বা সমাজের বোঝা মনে করেন।

গত ১৯ শে জানুয়ারি প্যারিসের রাস্তায় ৬ ঘণ্টা তুষারে পড়ে থাকায় হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুইস চিত্র শিল্পী বেনে রবার্ট। ৮৪ বছরের এই প্রতিভাবান ফটোগ্রাফার রাস্তায় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ব্যস্ত সড়কের ফুটপাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা পড়ে থাকলেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। একসময় তার মৃত্যু হয়।

গত ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের ব্যবসায়ী আবু মোহসিন ফেসবুক লাইভে এসে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। এই আত্মহত্যার একটি বিশেষ কারণ হলো তার একাকিত্বের দুর্বিষহ জীবন।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার ৭ থেকে ৮ শতাংশ প্রবীণ। ২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ লাখ অর্থাৎ ওই সময়কার মোট জনসংখ্যার ২২ থেকে ২৩ শতাংশ থাকবে প্রবীণ। আর বাংলাদেশে মানুষের আয়ু যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী ৩২ বছর পর দেশের প্রতি পাঁচজনে একজন থাকবেন প্রবীণ।২০৫০ সালে বিশ্বের বয়ষ্ক জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমানে ৬৫ বছর বা তার বেশী বয়সী মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে ৫.১% আর সমগ্র বিশ্বের সংখ্যা ৮.৫%।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৪ ফেব্রুয়ারি  ২০২২ /এমএম

 


Array