প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: শুরু হলো বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মাস। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বাক্ষর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাস দেশে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসে। ডিজিটালাইজেশন ও উন্নয়নের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলেও পূর্ণ গণতন্ত্রের বিকাশ, সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থায়ী হলে বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার দেশে পরিণত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির পর এবার আমরা উদযাপন করছি বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। সরকার ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করা হয়, যেখানে ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল, ডিজিটাল ও আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান-যাকে পারিবারিকভাবে আদর করে ডাকা হতো খোকা, জনতার দেওয়া নাম ‘বঙ্গবন্ধু’, কেউ বলে স্বাধীনতার মহানায়ক, কেউ বলে রাজনীতির কবি, বাংলাদেশের সংবিধান তাকে দিয়েছে জাতির পিতার স্বীকৃতি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মাসে জাতির পিতাসহ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মত্যাগকারী ও অবদান রাখা সবার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত যত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিটির মুখ্য চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ-পুরোটাই বঙ্গবন্ধুময়। পাশাপাশি মওলানা ভাসানী, জাতীয় চার নেতা, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অসংখ্য বীর যোদ্ধার অসামান্য অবদান রয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে।
আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি এবং উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আমরা আধুনিক ও উন্নত দেশে পরিণত হব ইনশাআল্লাহ। দেশে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক ও জরিপে এগিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ বিজয়ের মাসে পেছন ফিরে তাকালে আমাদের স্বস্তির অনেক কারণ পাওয়া যায়। এ ৫০ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। হয়তো অর্জন আরও বেশি হতে পারত; তবে যা হয়েছে তা খুব সামান্যও নয়, এক কথায় অসামান্য। বাংলাদেশ এখন বিশ্বদরবারে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের আরও গভীর মনোযোগ দিতে হবে। যেমন, সুশাসন ও গণতন্ত্র। এ জন্য রাজনৈতিক সহাবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। ৫০ বছরে আমাদের যে উন্নয়ন, তার মধ্যে সুশাসনের অভাব প্রকট। সুশাসন না থাকা সত্ত্বেও যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু উচ্চ প্রবৃদ্ধি সুশাসনের বিকল্প নয়। প্রবৃদ্ধি ও সুশাসন পাশাপাশি চলতে হবে। ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, উড়াল সেতু ইত্যাদি বৃহৎ অবকাঠামোর কারণে জাতীয় প্রবৃদ্ধির উচ্চহার বজায় থাকলেও শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সুশাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সূচকগুলোতে আমাদের অবস্থান সম্মানজনক বলা যায় না। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এ আনন্দঘন ক্ষণে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা শুরু হোক, এটিই সবার আন্তরিক প্রত্যাশা।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০২ ডিসেম্বর ২০২১ /এমএম





