Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের কিছু অভিযোগ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এটি প্রধানমন্ত্রীর গণভবনে পাঠানো হয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের প্যাডে। ইতিমধ্যে এটি স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ও বেগমান হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া সেই অভিযোগগুলো হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো :

বরাবর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণভবন
শেরে বাংলা নগর, ঢাকা।

বিষয় : আইনমন্ত্রীর কোটি কোটি টাকা আয়ের অভিনব আরো একটি উৎসসহ অন্যান্য দুর্নীতির কিছু ঘটনা।

মহাত্মন,
মাননীয় আইনমন্ত্রী কিভাবে দুর্নীতিবাজ ও বড় বড় অপরাধের আসামিদের জামিন দিতে বাধ্য করছেন বিচারকদের তার কিছু তথ্য এবং বিচার বিভাগে পোস্টিং, পদোন্নতি, নিম্ন আদালতে লোক নিয়োগ ও উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে কিভাবে দুর্নীতি করছেন পূর্বে তা জানিয়েছিলাম। আমরা চরম অসহায়। আরো কিছু নতুন তথ্য জানাতে চাই।
১. বাংলাদেশের সকল বড় বড় সড়ক ও সেতুর টোল আদায় ব্যবস্থাপনার মাফিয়া সিন্ডিকেট সিএনএস (CNS) নামক একটি কোম্পানি। যার মালিক বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান। ইজারা প্রদানকারী সড়ক বিভাগ এর নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যায়ের সকলকে ম্যানেজ করে তারা মেঘনা-গোমতি এবং যমুনা সেতুসহ সকল মহাসড়ক ও সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নেয়। সরকারকে আদায়কৃত টাকার ১ দশমাংশ টাকাও দেয় না। তাদের ইজারা পাবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় একটি প্রভাবশালী মহল। তখন আইনমন্ত্রীর স্বরনাপন্ন হয় সিএনএস কোম্পানি। সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর ঘনিষ্ট একটি মহলের মধ্যস্থতায় আইনমন্ত্রী শর্ত জুড়ে দেন যে, তাকে বেনামীতে লাভের ২৫ শতাংশ দিতে হবে। শর্ত অনুযায়ী কম্পিউটার ব্যবসায় নিয়োজিত ভাইকে সিএনএস-এর অংশীদার করা হয়। যা, প্রকৃতপক্ষে আইনমন্ত্রীর বেনামী অংশ গ্রহণ। আইনমন্ত্রী বিচার বিভাগের উপরে হস্তক্ষেপ করে নিষেধাজ্ঞা দিতে বাধ্য করেন নতুন টোল আদায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত সব-ই তার হাতের মুঠোয়। ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বিঘ্নে নাম মাত্র টাকা সরকারকে দিয়ে মাসে ৬০-৭০ কোটি টাকা পকেটস্থ করছে এই কোম্পানি। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ শতাংশ টাকা পাচ্ছেন আইনমন্ত্রী। সড়ক ও সেতু মন্ত্রী কিছুদিন এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেও হঠাৎ চুপ হয়ে যান। এর সঙ্গে জড়িত সালমান এফ রহমান। তিনি আইনমন্ত্রীর অনেক অবৈধ কাজের পার্টনার। বিষয়টি সম্প্রতি লোকসমক্ষে চলে আসে যখন মধ্যস্থতাকারী একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে (সড়ক) চুক্তি মোতাবেক কমিশন না দিয়ে, তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করানো হলে- তিনি সব ঘটনা ফাঁস করে দেন, কেন কিভাবে আইনমন্ত্রী কোনরূপ বিনিয়োগ ছাড়া কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছেন প্রতিমাসে।
২. ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপালের বাসায় ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়ায় দুর্নীতির মামলা হয়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ তার জামিন নামঞ্জুর করে। মামলার বিচার নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর শেষ করার নির্দেশ দেয়। ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জনাব ইকবাল হোসেনকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে সচিব সরোয়ার সাহেব বলেন যে, আইনমন্ত্রীর ডিজেয়ার, পার্থ গোপালের জামিন হোক। বিচারক ইকবাল হোসেন বলেন যে, ১৪ জন স্বাক্ষী হয়েছে এবং উচ্চ আদালতে জামিন নামঞ্জুর করার পরে জামিন দেয়া সম্ভব না। তিনি আরো বলেন যে, তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা পাওয়ার ঘটনা খুবই স্পর্শকাতর এবং সকল টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। এইরূপ পরিস্থিতিতে জামিন দেয়ার কোন গ্রাউন্ড নেই। তখন আইন সচিব সরোয়ার তাকে বলেন যে, অথরিটির সঙ্গে তর্ক করে ঢাকায় থাকা এবং ভালোভাবে চাকরি করা যাবে না। অসহায় হয়ে বিচারক ইকবাল হোসেন বলেন যে, জামিন দেবার পরে যদি উচ্চ আদালত কৈফিয়ত চায়, তিনি কি জবাব দেবেন? উত্তরে সচিব সরোয়ার বলেন সেটা মন্ত্রী মহোদয় ম্যানেজ করবেন। ভালোভাবে চাকরি করা ও ঢাকার পোস্টিং ঠিক রাখতে পার্থ গোপালকে কিছুটা গোপনীয়তার মধ্য থেকে জামিন দেন। এই ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে হাইকোর্ট কৈফিয়ত চেয়ে রুল জারি করেন। অসহায় বিচারক কৈফিয়তের মুখখামুখি। তিনি কি হাইকোর্টে বলতে পারবেন, কার নির্দেশে জামিন দিতে বাধ্য হয়েছেন? না, তা হয়তো তার বলা সম্ভব হবে না। এভাবেই আমরা অধস্থন আদালতের বিচারকেরা প্রতিনিয়ত অন্যায় ও অবৈধ আদেশ প্রতিপালন করতে বাধ্য হচ্ছি। এর কি কোন প্রতিকার নেই?

অতীতের কিছু ঘটনা
১. সে কোম্পানির কারখানায় বাইরের থেকে তালা দিয়ে রাখার ফলে আগুন লেগে যাবার পরে শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস কোম্পানির কারখানায় বের হতে পারেননি। উপর থেকে তারা চিৎকার করে বাঁচাও বাঁচাও করার পরেও বাহির থেকে দেওয়া তালা খুলে দেওয়া হয়নি। সেখানে ৫১ জন লোক পুড়ে কয়লা হয়ে যান। আরো প্রায় ৫০ জন পুড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম নিয়ে বেঁচে আছেন।
২. এই ঘটনায় দেশ ও বিদেশে তীব্র সমালোচনা হয়। থানায় মামলা হলে আসামিদের ১০.০৭.২০২১ তারিখে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ড শেষে ১৪.০৭.২০২১ তারিখে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বাইরে পুড়ে মারা যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তীব্র ক্ষোভ চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে হাসেম সাহেবের ২ ছেলেকে জামিন দিতে বাধ্য হন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট।

৩. এছাড়া ১৯.০৭.২০২১ তারিখে সি.আর. মামলা মূলে মূল আসামি হাসেম ও তার অপর দুই পুত্রকে জামিন দিতে বাধ্য হন নারায়ণগঞ্জের জেলা জজ। ৪ দিনের মধ্যে দুই জন এবং ৯ দিনের মধ্যে অপর তিনজন এর জামিন হয়ে গেল। ততক্ষণে স্বজনেরা পুড়ে যাওয়া আপনজনদের লাশও বুঝে পাননি। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয়নি। ৫২ জন লোকের হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা লাশ হস্তান্তরের পূর্বেই ৪ দিন এবং ৯ দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গেলেন।
৪. নারায়ণগঞ্জ আদালতে জামিনের রেওয়াজ হলো, কোন হত্যা মামলা ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দেন না। ১টি ইয়াবা ট্যাবলেট পেলে একদিন, ১০টি পেলে ১০ দিন এর পূর্বে জামিন শুনানিও করা হয় না। এইক্ষেত্রে ৫২ জন লোকের হত্যাকারীরা এতে জামিন পেয়ে গেল।
৫. আসল ঘটনা হলো, মাননীয় আইনমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের সচিব সরোয়ার সাহেবের মাধ্যমে আসামিদের জামিন না দিলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জজকে স্ট্যান্ড রিলিজসহ বদলী করে দিবেন, এই হুমকি দেবার পরে অসহায় হয়ে জামিন দিতে বাধ্য হন। জানা যায়, ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের মধ্যস্থতায় ব্যবসায়ী হাসেম সাহেব মাননীয় মন্ত্রীর পার্টনার এবং সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা করিমের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার পরে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়। তাহলে প্রশ্ন, ৫২ টি জীবনের মূল্য কি ২ কোটি টাকা?
৬. ঢাকার বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমণির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নাসির উদ্দিন ও অপর এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইন ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে ২টি মামলা হয়। ঢাকা কোর্টের রেওয়াজ অনুসারে উচ্চ আদালতে (জেলা জজ ও নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচার্য্য সিজিএম কোর্ট, অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জামিন দেন না। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রিমান্ড থেকে কোর্টে পাঠান না আসামিদের একই দিনে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়। একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও একজন সাবেক এমপির মধ্যস্থতায় মাননীয় মন্ত্রীর পক্ষে ম্যাডাম তৌফিকা করিম ২ কোটি টাকা মূল্যের ডলার ও ইউরো বুঝে নেন। এর পরেই মন্ত্রীর ডিজায়ারের কথা বলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটদের জামিন দিতে বাধ্য করা হয়। ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কখনোই নারী নির্যাতন ও মাদকের এ জাতীয় মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি কখনো। এক্ষেত্রেও বদলীর ভয় দেখিয়ে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়।

৭. ফারমার্স ব্যাংকের লোন দুর্নীতির মামলায় চিশতি পরিবার এর জামিনের আবেদন আপিল বিভাগেও নামঞ্জুর হয়। ৫০+২০+১০+৫, মোট ৮৫ কোটি টাকা নগদ প্রদান এবং মামলায় জামিন পাবার পরে একমাসের মধ্যে বাকী ৫০ কোটি টাকা দেবার চুক্তি হয়। মামলাটি থেকে চূড়ান্তভাবে খালাস করিয়ে দেবার পরে বাকী টাকা দেবার শর্তে উপরোক্ত লেনদেন হয়। মোট চুক্তি হয় ২০০ কোটি টাকার। চুক্তি অনুসারে ৮৫ কোটি টাকা লেনদেনের পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ থেকে জামিন করিয়ে দেয়া হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করলে জামিন স্থগিত হয়ে যায়। এর পরে মাননীয় আইনমন্ত্রীর পছন্দের কোর্টে (বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার) শুনানি হয় নতুন করে। তিনি জামিন বহাল রাখেন আইনমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে। এই আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এর নিকট স্থগিত আদেশের আবেদন করেন। উক্ত বিচারপতির কাছেও তদবির করেন আইনমন্ত্রী। ফলে, মাননীয় বিচারপতি বিব্রতবোধ করেন এই মামলা শুনতে। তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, উক্ত আবেদন শুনানির জন্য মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেন। তিনি শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। এইরূপ পরিস্থিতিতে বাবুল চিশতির পরিবারের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত চাওয়া হয়। বর্তমানে তাদের ফোন আইনমন্ত্রী বা তার চেম্বারের কেউ রিসিভ করেন না। উপরন্ত ভয় দেখানো হচ্ছে যে, বাড়াবাড়ি করলে চিরদিন জেল খানায় থাকতে হবে। এদিকে চিশতি পরিবার বিভিন্ন সোর্স থেকে উচ্চ সুদের লোন এনে দিয়েছিলেন। তারা এখন চরম অসহায়। মন্ত্রী মহোদয়ের ডিওএইচএস-এর অফিস, গুলশান অফিস, তৌফিকা করিমের চেম্বার বা বাসা কোথাও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না চিশতি পরিবারের লোকদের।
৮. সিলেটের বিজ্ঞ জেলা জজ অত্যন্ত সৎ মানুষ, তিনি অগ্রহণযোগ্য অনুরোধ না শুনায় তাকে বদলী করে মন্ত্রণালয়ে এনে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এভাবে যখনি কোন বিচারক অনৈতিক কোন অনুরোধ শুনতে না চান, তার উপরেই নির্যাতন নেমে আসে। বিচার বিভাগে চরম নৈরাজ্য চলছে। স্বাধীনভাবে কেউ কোন বিচার করতে পারছেন না। এইরূপ পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগ অতীতের সকল সময়ের চেয়ে আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েছে।
৯. মাননীয় আইনমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করেছেন। বিনিয়োগ বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করায় অস্ট্রেলিয়া সরকার তাকে ইতোমধ্যে পিআর (পারমানেন্ট রেসিডেন্ট তথা স্থায়ী বসবাসকারী) কার্ড দিয়েছে।
১০. মাননীয় আইনমন্ত্রী শুধু অস্ট্রেলিয়ায় নয়, যুক্তরাজ্যেরও নিউ ক্যাসেলে বিলাস বহুল বাড়ি কিনেছেন। তিনি যুক্তরাজ্য গেলে নিউ ক্যাসেলে যান। তার বাড়ি দেখাশুনা করেন দুরসম্পর্কিত এক আত্মীয়। বাড়ির একটি অংশ ভাড়া দিয়েছেন। নিউ ক্যাসেলে অধ্যায়নরত বাংলাদেশের কয়েকজন ছাত্র ঐ বাড়িটিতে গিয়েছেন। বাড়ির দলিল হয়েছে মাননীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ট এক ব্যক্তির নামে। মধ্যস্থতা করে বাড়িটি ক্রয় করে দিয়েছেন লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী, নোয়াখালীর অধিবাসী, যিনি এক সময়ে মন্ত্রী মহোদয়ের বাবার এক জুনিয়র ছিলেন, বর্তমানে ব্যারিস্টার। এই ক্ষেত্রে যোগাযোগ করেছিলেন মন্ত্রী মহোদয়ের জুনিয়র-কম ভাগ্নে এক নতুন ব্যারিস্টার।
১১. মাননীয় মন্ত্রী ইতোমধ্যে আমাদের সমিতির কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, সমিতি যদি তার বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তিনি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কাউকেই ঢাকায় থাকতে দিবেন না এবং চাকরিচ্যুত করবেন। তিনি অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন। কিভাবে সকল তথ্য বাইরে চলে যায়, তাও বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হুমকি দিয়ে আরো বলেন যে, প্রধান বিচারপতিকে এই পদে তিনিই এনেছেন। ফলে, তিনি যা চাইবেন, সেটাই হবে।

১২. ঘুষ, দুনীতির সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বিচার ব্যবস্থাকে বিক্রি করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হাজার কোটি টাকা আয় করে তৈরি করেছেন সিটিজেন ব্যাংক লি.। ব্যাংকের চেয়ারম্যান করেছেন তার বান্ধবী/রক্ষিতা তৌফিকা করিমকে। কে এই তৌফিকা করিম। তিনি কুখ্যাত রাজাকার, কট্টর বিএনপিপন্থী পিয়াস করিম (যিনি টকশোতে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন), তার আপন বোন। বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পিয়াস করিম এর বোন তৌফিকা করিমকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাত থেকে মানবাধিকারের স্বর্ণ পদক দেয়ার মত নিকৃষ্ট ঘটনাও ঘটিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তৌফিকা করিমকে খুশি করতে, পিয়াস করিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিব্রতকর সমালোচনার মুখে পড়েন আইনমন্ত্রী। শুধু কি তাই, আইনমন্ত্রী নিজের টাকায় তৌফিকা করিমের বাবার কবর বাঁধিয়ে দিয়েছেন কুমিল্লা শহরের কবরস্থানে। মেয়রকে ডেকে কবর বাধাতে নির্দেশ দেন, সকল খরচ বহন করেন মন্ত্রী। পুলিশ প্রটেকশন ছাড়াই তৌফিকার বাসায় যান প্রাইভেট গাড়িতে। মন্ত্রী সাহেব মন্ত্রণালয়ের আসেন না ৬ মাস। গুলশানের অফিসেও বসেন না।
ডিওএইচএস-এ ভাড়া নিয়েছেন বিরাট ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাটেই হয় সব কিছু। ঘুষের টাকার লেনদেনসহ সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
১৩. ১/১১ সরকার সময়ে মাননীয় আইনমন্ত্রীই ছিলেন সেই সরকারের প্রধান আইন উপদেষ্টা। এডভোকেট শামীম আহসান ও এডভোকেট শরফুদ্দিন মুকুল, এডভোকেট হাফিজ প্রকাশ্যে বলেন যে, মঈনুদ্দিন-ফকরউদ্দিন সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াসহ বড় বড় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যে সকল মামলার এজাহার করেছিলেন, তার ড্রাফট ভ্যাটিং করার দায়িত্বে ছিলেন তাদের প্রধান আইন উপদেষ্টা বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তৈরি করা হয় জরুরি আইন। তার পরামর্শেই প্রধানমন্ত্রীর হাইকোর্টে পাওয়া জামিন বাতিলে সুপ্রীমকোর্টে যায় কেয়ারটেকার সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ঐ দুর্দিনে তিনি ছিলেন তার শক্র, অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান আইন উপদেষ্টা। বিনা ভোটে ২০১৪ সালে এমপি ও মন্ত্রী হন তিনি। টাকার লোভে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে বিচার বিক্রির নজিরবিহীন রেকর্ড করেছেন। কিছু বিচারপতি ও নিম্ন আদালতের কিছু বিচারকেরা তার কর্মচারী হিসাবে কাজ করছেন। কাউকে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ, কাউকে সুপ্রীম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ, কাউকে ভালো পোষ্টিং দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিচার বিক্রি করাচ্ছেন তিনি। দুর্নীতি মামলার ৯৫% জামিন ও মামলা স্থগিত হচ্ছে তার চেম্বার থেকে, তার জুনিয়রদের মাধ্যমে। তার চেম্বারের বাইরে গিয়ে কেউ জামিন নিলে, ঐ জামিন বাতিলের ভয় দেখিয়ে নেয়া হয় কোটি টাকা। সম্রাট শাহজাহন “তাজমহল” গড়েছিলেন তার প্রিয়তমার মৃত্যুর পরে। আইনমন্ত্রী সিটিজেন ব্যাংক নামে “তৌফিকা মহল” করে দিলেন তৌফিকার জীবদ্দশায়।
১৪. পিয়াস করিমের বোন তৌফিকা করিম জীবনে কোন দিন কোর্টে গিয়ে ১টি মামলাও করেননি। তার ব্যাংক একাউন্টে ৫ লক্ষ টাকাও ছিল আনিসুল হক মন্ত্রী হবার পূর্বে। আনিসুল হকের পিতা সিরাজুল হকের কাছে এসেছিলেন ওকালতি শিখতে। কিন্তু করলেন তার ছেলের সাথে প্রেম। আনিসুল হকের স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তাকে আর বিয়ে করতে দেননি এই তৌফিকা। লীভ টুগেদার-ই তাদের জীবন। আনিসুল হক মন্ত্রী হলে তার ঘুষের দালালি করতেন তার জুনিয়র জীবন। সে উপজেলা চেয়ারম্যান হবার পরে, ঘুষের দেনদেনের দায়িত্ব পান তৌফিকা করিম। প্রেমিকাকে সম্মান দিয়ে তাকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য করেন আইনমন্ত্রী। তাতেও তার অভিমান শেষ না হলে তাকে ব্যাংকের পরিচালক দেখান ১০০ কোটি টাকার শেয়ার হোল্ডার হিসাবে। আমরা খুশি করার জন্য এবার তাকে করলেন চেয়ারম্যান। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে তৌফিকা করিম-ই মন্ত্রীর কাছে প্রিয় ও নির্ভরযোগ্য।

১৫. আমাদের মাধ্যমে বিচার বিক্রি করে, সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগবদলী করে, দেশের সব আদালতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ নানাভাবে প্রকাশ্যে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তৈরি করলেন “সিটিজেন ব্যাংক লি.”। বিচার বিভাগ ও কোর্ট এলাকায় বংকের ভিন্ন নাম, “তৌফিকা ব্যাংক” বা “তৌফিকা মহল”। সবাই অন্ধ হয়ে দেখছেন দুনীতির এই ভয়াবহ ঘটনাকে। বিচার বিভাগ ধ্বংসের চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন আইনমন্ত্রী।
১৬. মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব আনিছুল হক বিচারকার্যে হস্তক্ষেপে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী জামিন, হাতে পাঠানন, ইনজাংশন দেওয়া ও রায় ডিক্রি দেয়া না হলে যে কোন মুহুর্তে ঐ বিচারককে প্রত্যাহার করে ডাম্পিং পোষ্টিং ও পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়। তাছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হয়।
১৭.শুধু নিম্ন আদালতেই নয়, উচ্চ আদালতেও মন্ত্রী মহোদয় তদ্বির করেন। মন্ত্রী মহোদয়ের ও আইন সচিবের দ্বীরের কথোপকথন (কবর) রেকর্ড করা আছে একাধিক বিচারপতি ও নিম্ন আদালতের অনেক বিচারকের মোবাইল ফোনে। আপনার নিকট সে সকল তথ্য-প্রমান পৌছে দিতে চাই।
১৮. বিচারকদের পদোন্নতি ও ভালো পোষ্টিং-এর লোভ দেখিয়ে তদবির করা হয়। সিনিয়র ভাজদের পদোন্নতি দিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি কানে লোভ দেখানো হয়। তদ্বির না শুনলেই সংশ্লিষ্ট বিচারককে চরম হয়রানী করা হয়। মন্ত্রী মহোদয় আজ্ঞাবহ কয়েকগুন স্টাফ/অফিসার দ্বারা ভ‚য়া দরখাস্ত দিয়ে শোক-বিভাগীয় প্রসিডিং এবং অপমানজনক পোস্টিং দেয়া হয়।
১৯. বেআইনি তদবির শোনার পুরস্কার হিসাবে অত্যন্ত জুনিয়র জজদের পুরাতন জেলায় ভোলা জজ হিসাবে পোষ্টিং দেয়া হয়। অন্য দিকে জেলা জজ হিসাবে দীর্ঘ দিন সুনামের সহিত দায়িত্ব পালনকারী বিচারক, যারা তদবির গুনেন না, তাদেরকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল জেলা জজের অধস্থন জন নিরাপত্তা সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে পোস্টিং দেয়া হয়। এই অভিযোগের সত্যতা গানের জন্য সকল জেলার জেলা জজ বিশেষ জজদের পোস্টিং-এর লিস্ট এবং সিনিয়রিটি লিষ্ট তলব করলেই প্রমানিত হবে কিভাবে স্বেচ্ছাচারিতা করে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করা হচ্ছে।

২০. সাব রেজিস্ট্রার পোস্টিং-এ করা হয় নাটক। বলা হয় লটারীর মাধ্যমে পোস্টিং দেয়া হয়। বাস্তব হলো, সর্বোচ্চ টাকা যে দিতে পারে, তাকেই ভালো কর্মস্থল দেওয়া হয়। গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানা যাবে কে কি পরিমান টাকা দিয়ে পোস্টিং নেন। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে পোস্টিং এর জন্য নির্দিষ্ট টাকার চুক্তি হবার পরে, অন্য একজন আরো বেশি টাকা দিলে পূর্বের জনকে বাদ দেয়া হয়। এসব নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে পোস্টিং প্রত্যাশি সাব-রেজিস্টার, মধ্যস্থতাকারী দালাল ও মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত লোকদের সঙ্গে। এছাড়া মন্ত্রী মহোদয় এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নের নামে প্রায়ই বড় অংকের টাকা দিতে বাধ্য করেন রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসের লোকদের। মন্ত্রী মহোদয়ের সাবেক এপিএস (বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান) এর বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট এবং তাদের দেওয়া অপর কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট চেক করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
২১. আমরা অনেকেই ছাত্রলীগ করেছি। সংসদ নির্বাচনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। সাবেক সচিব শেখ আবু সালেহ মো. জহিরুল হক দুলাল স্যার যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেভাবেই কাজ করেছি। ন্যায় অন্যায় দেখতে যাইনি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে, এটাই আমাদের প্রতি নির্দেশ ছিল। জামাত-বিএনপি-জাসদ-এর লোকেরা টাকার বিনিময়ে ভালো পোষ্টিং পাচ্ছে। অথচ আমরা ছাত্রলীগ ক্যারিয়ারের অনেকেই অবহেলিত ও অপমানিত। অতীতেও মন্ত্রী মহোদয়েরা তদবির করতেন, তবে তা ছিল অনুরোধসুচক এবং খুবই কম। অথচ বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়ে তদবিরের ধরণ এবং পরিমাণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তিনি খুবই খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন। তার অনেক
টেলিফোনিক তদবির ও খারাপ ভাষার রেকর্ড আছে আমাদের কাছে। অনুপায় হয়ে আমরা সাংবাদিকদের দিতে বাধ্য হব।
২২. দুর্নীতি মামলা বিচারের দায়িত্ব প্রাপ্ত বেঞ্চের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম, এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস মহোদয়সহ বেশ কয়েকজন বিচারপতি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের তদবিরে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। চারজন বিচারপতির কাছে মন্ত্রী মহোদয়ের তদবিরের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা আছে। এছাড়া বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি সালমা মাসুদ ও বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এম, আর, হাসান, সাবেক বিচারপতি আলতাফ হোসেন সহ অনেককেই তিনি ফোনে, লোক পাঠিয়ে তদবির করান, যার প্রমান আছে। তিনি নিজে, অতিরিক্ত এ্যাটনী জেনারেল মুরাদ রেজা, আইন সচিব, নিজ চেম্বারের আইনজীবীকে বিচারপতির বাস কামরায় পাঠিয়ে ফোনের মাধ্যমে তদবির করেন। বিচারপতিদের সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে দিয়ে বরখাস্ত করার ভয় দেখান। কাউকে বা আপিল বিভাগে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে তদবির করেন। মন্ত্রী মহোদয়ের তদবিরের বিষয় মহামান্য প্রধান বিচারপতি ও মাননীয় এ্যাটর্নী জেনারেল মহোদয় জানেন।

২৩. মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থেকেও তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক রিট মামলা করেন সুকৌশলে। তিনি নিজেই মামলার ড্রাফট করে দিয়ে বড় বড় আইনজীবীদের দিয়ে কোর্টে মামলা মুভ/পরিচালনা করান। কোন কোর্টে মামলা দায়ের করতে হবে, তাও বলে দেন এবং সংশ্লিষ্ট বিচারককে তার পক্ষে রায় দিতে বলেন। এভাবে তিনি সরকারের অনেক মূল্যবান সম্পত্তির মামলার রায় করিয়ে নিয়েছেন।
২৪. তদবিরের টাকা এক সময়ে নিতেন মন্ত্রী মহোদয়ের সাবেক এপিএস জীবন সাহেব। বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির মামলার তদবিরের লেনদেন এক সময়ে হতো মন্ত্রী মহোদয়ের গুলশানের অফিসে। কিন্তু, সেখানে লোকের ভীড় হওয়ায় এখন গোপন অফিস, ডিওএইএস-এর মধ্যে, সেখানেই নিরাপদে সকল লেনদেন। এপিএস সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যান হবার পরে সকল লেনদেন হয় মন্ত্রী মহোদয়ের জনিয়র তথা বান্ধবী এডভোকেট তৌফিকা করিম ম্যাডাম এর মাধ্যমে। তদবিরের টাকা আরো লেনদেন হয় মন্ত্রী মহোদয়ের ভাগ্নে এক নতুন ব্যারিস্টার এর মাধ্যমে। ঐ ভাগ্নে এখনো হাইকোর্টের উকিল-ই হয়নি। তবে, সব বড় বড় মামলার দুর্নীতির আসামিদের জামিনের গ্যারান্টি দেন। বড় বড় ক্রিমিনালদের হাইকোর্ট-সুপ্রীমকোর্টে জামিন না মঞ্জুর হবার পরেও নিম্ন আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেন। অসহায় বিচারকেরা ঢাকায় পোষ্টিং বহাল রাখা এবং ভবিষ্যতে হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার আশায় তদবির শুনতে বাধ্য হন। কিন্তু, পরবর্তীতে এই জাতীয় বেআইনি কাজের খেসারত হিসাবে হাইকোর্টের শোকজ খেতে হয় তাদেরকে।
২৫. নতন বিচারপতি নিয়োগে ঘুষ নেবার মত ঘটনা অতীতে ঘটেনি। চরম অযোগ্য ও ঘুষখোর ৩ জন জেলা জজ এবং ৫ জন অযোগ্য আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে টাকার বিনিময়ে ম্যাডাম তৌফিকা করিমের মাধ্যমে। অযোগ্যদের নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে বলা হয় যে, “প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার”। একটু অনুসন্ধান করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, গত তিন ব্যাচে কোন কোন বিচারপতির পরিবার জমি অলংকার বিক্রি করেছেন এবং কে কে ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। একজন নতুন বিচারপতি টাকার অভাবে তার নতন স্ত্রীর সকল অলংকার বিক্রি এবং নিজ ফ্ল্যাট একটা লিজিং কোম্পানিতে বন্ধক রেখে টাকা এনে দিয়েছেন। বেতনের টাকা দিত অনলাকার কিস্তি দিতে পারছেন না। অপরদিকে তার স্ত্রীও বাবার বাড়িতে বলতে পারছেন না স্বর্ণালংকার কোথায়? কে কে খবর কার জমি বিক্রি করেছেন, স্ত্রীর অলংকার বিক্রি করেছেন তা স্থানীয় সাব-রেজিস্টার অফিস ও ঐ সকল নতুন বিচারকদের বে। একইভাবে কোন কোন বিচারপতি নিয়োগের সময়ে ব্যাংক থেকে পরিবার/আতীয় স্বজনদের নিকট খোজ নিলে তথ্য পাওয়া যাবে। একইভাবে কোন কোন বিচারপতি নিয়োগের সভোব (অসময়ে) ভাঙ্গিয়েছেন তার তথ্য আনলে প্রমানিত হবে যে, নিয়োগের পূর্ব মুহুর্তে এত টাকা কেন তারা জোগাড় করেছিলেন এবং কাকে দিয়েছেন?

অসংখ্য ঘুষ গ্রহণের মধ্যে কয়েকটি উদাহরণ
২৬. ফার্মার্স ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতকারী রাশেদুল হক চিশতীকে হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্ট জামিন দেননি। সোথ সেই আসামি ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালতের বিচারককে বাধ্য করে জামিন করান মন্ত্রী মহোদয়। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। তখন সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারপতিকে সুপ্রীমকোর্টে পদোন্নতির লোভ দেখিয়ে নিচের কোর্টের আদেশ বহাল করতে বলেন মন্ত্রী মহোদয়। এরপর দুদক সুপ্রীমকোর্টে আপিল করেন। সেখানেও চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এর নিকট তদ্বির করেন মন্ত্রী মহোদয়। তার তদবিরে ব্ৰিতবোধ করে বিচারপতি নুরুজ্জামান ১৮.০৬.২০২০ তারিখে মামলার ফাইল প্রধান বিচারপতির কাছে ফেরত পাঠান। প্রধান বিচারপতি, নতুন করে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে ঐ মামলার শুনানির দায়িত্ব দেন। তখন শুনানি শেষে জামিন স্থগিত করা হয়। নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টে জামিন করিয়ে দেবার শর্তে এ পর্যন্ত মোট ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন মাননীয় মন্ত্রী। তবে অধিকাংশ টাকা ডলারে করে দিতে হয়েছে।
২৭. হলমার্কস গ্রুপের দুর্নীতির মামলায় সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত জামিন পায়নি আসামি জেসমিন। বিপুল টাকা নিয়ে নিম্ন আদালতে চাপ সৃষ্টি করে জামিন করিয়ে দেন মন্ত্রী মহোদয়। বিনিময়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তবে দুর্ভাগ্য হল ঐ জামিন উচ্চ আদালত স্থগিত করে দিয়েছেন। মধ্যস্থতাকারীরা টাকা ফেরত চাইলে মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচারের সময়ে খালাস করিয়ে দেবেন।
২৮. বঙ্গভবনের নিরাপত্তা নষ্ট করে তৈরি মিজান টাওয়ারের মালিক মিজান সাহেব ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের আসামি। তাকে সুপ্রীমকোর্টও জামিন দেয়নি। অথচ মহানগর দায়রা জজকে হাইকোর্টের বিচারপতি করার লোভ দেখিয়ে জামিন করায়ে দেন মন্ত্রী মহোদয়। এই ঘটনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতিও প্রধান বিচারপতির নিকট ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ঐ মহানগর জজকে দিয়ে আরো অনেক মামলায় জামিন করান মাননীয় মন্ত্রী। পরে তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দেন।
২৯. বিএনপি নেতা ও সাবেক হুইফ সৈয়দ শহিদুল হক জামাল তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির প্রায় ১ ডজন মামলা বাতিলের জন্য হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করে ব্যর্থ হন। সে সকল মামলা থেকে তাকে খালাস করিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে ৫ কোটি টাকা নেন মন্ত্রী মহোদয়। সংশ্লিষ্ট বিচারককে হাইকোর্টের বিচারপতি করার লোভ দেখিয়ে এতগুলো দুর্নীতির মামলায় খালাসের ব্যবস্থা করান। এই ঘটনা জামাল সাহেবের ছেলে ও জামাতা (হাইকোর্টের দুই ব্যারিস্টার)-কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রমানিত হবে। তাদের কাছ থেকে টাকার অংকের সমপরিমাণ ডলার নেয়া হয় গুলশানে মন্ত্রীর অফিসে।

৩০. ঢাকার গুলশানে একটি বড় বিল্ডিং-এ আগুন লেগে বেশ কয়েকজন লোক মারা গেলে মামলা হয়। ঐ বিল্ডিং এর মালিক ডেভেলপার এর নিকট থেকে মোটা টাকা নিয়ে তদবির করিয়ে জামিন করান মন্ত্রী মহোদয়। এই টাকার লেনদেন হয় তার গুলশানস্থ অফিসে। তিনি অফিসকালীন সময়ে অনেক দিনই মন্ত্রণালয়ে আসেন না। ঐ সময়ে গুলশানের অফিসে বসে লেনদেন ও তদবিরের কাজ করেন।
৩১. চাঞ্চল্যকর সুলতান হত্যা মামলার আসামিকে জামিন করার শর্তে বিপুল টাকা নেন মন্ত্রী মহোদয়ের ভাগ্নে নতুন ব্যারিস্টার। বিচারপতির খাস কামরায় গিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে তদবির করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। একজন সৎ বিচারপতি তদবির না শোনায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঐ মামলা বিচারপতি নাঈমা হায়দারের কোর্টে নিয়ে জামিন করানো হয়।
৩২. মন্ত্রী মহোদয়ের তদবিরে বড় বড় অপরাধীরা জামিন পাবার পরে ঐ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল না করার জন্য তিনি সরকারি উকিল/ দুদকের উকিলকে নির্দেশ দেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইঙ্গিত করেন যে, “উপরের নির্দেশেই এসব করা হচ্ছে। অতিষ্ট হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের উকিল খোরশেদ আলম খান সাহেব পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন সৎ ও দক্ষ আইনজীবী যিনি তারেক ও খালেদা জিয়ার মামলায় সাহস ও সততার পরিচয় দিয়েছেন।
৩৩. দক্ষিনাঞ্চলে একই কর্মস্থলের দুই বিচারক, যথাক্রমে স্বামী ও স্ত্রী। অস্বাভাবিক তদবির করা হয় মহিলা বিচারকের কাছে। সৎ মহিলা বিচারক ঐ তদবির না শোনায় রাতারাতি তাকে দুরে বদলী করা হয়। দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান নিয়ে তাকে চলে যেতে হয় স্বামীকে ছেড়ে দূরের কর্মস্থলে। অথচ সরকারি নিয়ম অনুসারেই স্বামী-স্ত্রী একই কর্মস্থলে কাজ করার সুযোগ পাবার কথা। এতটা নির্দয় ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় তদবির না শুনলে। অন্যান্য বিচারকদেরকে এই উদাহরণ দেখিয়ে ভয়ের মধ্যে রাখা হয়। নারী বান্ধব প্রধানমন্ত্রীর আমলে এমন ঘটনা আমাদের দেখতে হচ্ছে অসহায়ের মত।

৩৪. লোক নিয়োগেও চরম দুর্নীতি। আইন মন্ত্রণালয় ও রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিসের অধীনে সারা দেশে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির লোক নিয়োগ করা হয়। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত জেলা জজ আদালত সহ যেখানেই জারীকারক, নকল নবিশ, অফিস সহায়ক, একাউন্টটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেখানেই তিনি নির্ধারণ করে দেন, কে কে চাকুরী পাবে। অধিকাংশ স্থানে বাক্ষণবাড়িয়ার লোকদের চাকরি দিতে হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ক্ষেত্রে জেলা কোটা ও অন্যান্য কোটা পদ্ধতি বহাল যেতে। কিয়, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেন কোটা বিষয়ক কথা উল্লেখ না থাকে। মন্ত্রী মহোদয় আমলে যে সকল নিয়োগ হয়েছে তার রেকর্ড। তথ্য তলব করা হলে দেখা যাবে তিনি সকল জেলায় ৮০% নিজের জেলার লোক নিয়োগ করেছেন এবং প্রায় সকলের কাছ থেকেই টাকা নেয়া হয়েছে।
৩৫. চট্টগ্রামের কারাগারের বরখাস্তকৃত জেলার সোহেল রানার নিকট থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা নেয়া হয়েছে জামিন করার শর্তে। কিন্তু, দুর্ভাগ্য ২৩.০৬.২০২০ তারিখে ঐ জামিন স্থগিত হয়ে গেছে হাইকোর্টে।
৩৬. বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৫টি মামলায় নেয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা এবং যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যার দুজন আসামিকে জামিন করাবার শর্তে নেয়া হয়েছে ২ কোটি টাকা। তাদের জামিন হয়নি, অথচ টাকাও ফেরত দেয়া হচ্ছে না।
৩৭. গুলশানের রেইন্ট্রি হোটেলের ধর্ষণ ঘটনায় মূল আসামিকে জামিনের শর্তে নেয়া হয় ২ কোটি টাকা এবং ঐ টাকা ডলারে দিতে হয়। ঐ ঘটনায় আমিন জুয়েলার্স সহ কয়েকটি জুয়েলারীতে পাওয়া অবৈধ স্বর্ণের মামলায় সকলকে জামিন করিয়ে দেবার শর্তে নেয়া হয় ৫ কোটি টাকা। নির্ধারিত আইনজীবী রয়েছে মন্ত্রী মহোদয়ের। তাছাড়া কোন কোর্টে মামলা করতে হবে, তাও তিনি নিজে ঠিক করে দেন।। ৩৮. পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধারদের জামিনের দরখাস্ত সকালে দাখিল করা হয়, দুপুরেই শুনানি এবং সন্ধ্যার মধ্যে আসামি জেল খানা থেকে ছাড়া পায়। দুদক আপিল করার ও মামলায় শুনানি করার সুযোগও পায়নি। যেখানে সপ্তহর পর সপ্তাহ অপেক্ষা করেও মামলার শুনানি হয় না, সেখানে রকেটের গতিতে সব হয়ে গেল। আসলে গতি টাকার এবং টাকার বিনিময়ে মাননীয় মন্ত্রীর তদবির।
৩৯. তিনজন সাব-রেজিস্টার দুদকের ট্রাপ কেসে হাতে-নাতে টাকা সহ ধরা পড়লেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টে তাদের জামিন হলো না। কিভাবে তারা নিম্ন আদালত থেকে রাতারাতি জামিন পেলেন, তা সংশ্লিষ্ট বিচারককে জিজ্ঞাসা করলেই প্রমাণ পাবেন। ঐ বিচারক আত্মরক্ষার জন্য। মন্ত্রী মহোদয়ের তদবির রেকর্ড করে রেখেছেন। তাকে বলা হয়েছে হাইকোর্ট সুপ্রীমকোর্টে কোন অসুবিধা হলে তিনি দেখবেন। এরুপ অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যা বিচার বিভাগে গ্রহণযোগ্যতা শেষ করে দিচ্ছে।

৪০. তিনটি দুর্নীতির মামলায় একজন সাবেক এমপি ও তার স্ত্রীর মধ্যে দুইটি মামলায় সাবেক এমপি এবং তার স্ত্রীকে জামিন দেন জেলা জজ। সাবেক এমপি মহোদয়কে একটি মামলায় জামিন না দেয়ার পরে আসামি পক্ষের লোকেরা জজ সাহেবকে চরম অপমান করেন কোর্টের মধ্যেই। মুহূর্তের মধ্যে উক্ত বিচারককে বদলী করিয়ে তার অধীনস্থ একজন জুনিয়র বিচারককে দিয়ে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়। বিচার বিভাগের ইতিহাসে এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। একের পর এক নগ্ন হস্তক্ষেপে প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা অভিযোগ জানাই। বিরক্ত হয়ে মহামান্য প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তখন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ভীষণভাবে অনুরোধ করায় তিনি পদত্যাগ করা থেকে বিরত হন। সংশ্লিষ্ট জেলা জজের এহেন পরিণতির দৃষ্টান্তের ভয় দেখিয়ে তদবির করা হয় অন্যান্য জজ সাহেবদের কাছে। অপমান ও হয়রানীর ভয়ে এখন মন্ত্রীর ইচ্ছাতেই চলছে বিচার বিভাগ।
৪১. মন্ত্রী মহোদয়ের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নেই। কেন তার এত টাকার দরকার, এমন এক আলোচনায় মুখ ফসকে ম্যাডাম তৌফিকা করিম ও মন্ত্রী মহোদয়ের ব্যারিস্টার ভাগ্নে বলে ফেলেন যে, ব্যাংকের লাইসেন্স পেয়েছেন মন্ত্রী মহোদয়, তার প্রাথমিক ফান্ডের টাকা এখনও জমা করা সম্ভব হয়নি। তাই টাকার দরকার। ঐ ব্যাংকের পার্টনার হলেন মন্ত্রী মহোদয়ের বান্ধবী ম্যাডাম তৌফিকা করিম। বিচার বিভাগকে বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক করার চেয়ে অন্য কোন ফান্ড থেকে মন্ত্রী মহোদয়কে আর্থিক সাহায্য করা হলে বিচার বিভাগ রক্ষা পেতো।
৪২. তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, প্রধান বিচারপতি সহ অনেক বিচারপতি তার দ্বারা নিয়োগ পেয়েছে, ফলে তিনি যা চাইবেন, তাই-ই হবে। কোথাও অভিযোগ করে লাভ হবে না।
৪৩. বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে অধিকাংশ বিচারকেরাই মন্ত্রী মহোদয়ের এহেন নজির বিহীন তদবিরে অতিষ্ট। বিচারকদের মনে।
এতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অতীতে আর কখনো হয়নি। সে মতে আবেদন, অনুগ্রহ পূর্বক বিচার বিভাগকে রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে মর্জি হয়।

ধন্যবাদান্তে
আপনার বিশ্বস্ত
সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন

সূত্র: ভিশনবিডি২৪.কম

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৩ নভেম্বর  ২০২১ /এমএম