Menu

মারলিন ক্লারা: আমি রাজনীতি করিনা। তবে আমি সচেতন নাগরিক। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় বার নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বে। তাই নিয়ে তখন পক্ষ বিপক্ষ উভয়েরই কতো হাসাহাসি!

ব্যঙ্গ করে করে “ডিজিটাল ” শব্দটা অনেকেই উচ্চারণ করেছে তখনো, এখনো করে অনেকে। কিন্তু এখন, এই ২০১৮ তে বসে বলুন দেখি, আমরা কি বিশ্বায়নের পথে এগিয়ে যাইনি অনেক দূর!

আগে স্কুল পর্যায়ের বোর্ডের বইগুলোর পেছনে লেখা থাকতো ” বিনামূল্যে বিতরণের জন্য” বা “বিক্রয়ের জন্য নহে” কিন্তু বইগুলো সবসময় কিনেই আনতে হতো।প্রকাশ্যে লাইব্রেরীতে সেগুলো বিক্রি হতো। কোথাও শুনিনি বিনামূল্যে কেউ সে বই পেয়েছে। আমার সন্তানকেও সে বই কিনেই দিয়েছি। আর এখন? এই যে এতো গুলো বছর ধরে সারা দেশে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব হয়,সেটা কি বন্ধুরা ভুলে গেছেন?

কলেজের ভর্তি পরীক্ষার মৌখিকে রংপুর থেকে আগত ছাত্রদের জিজ্ঞেস করেছি “মংগা” সম্পর্কে কী জানো? উত্তরে বলেছে এটা কি তারা জানেনা! অথচ রংপুর অঞ্চলে এই “মংগা” কী বিভীষিকা ছিলো! দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে প্রতিবছর কতো লোক অনাহারে মারা যেতো! মতিয়া চৌধুরী কৃষি মন্ত্রী হয়ে ভিজিএফ কার্ড চালু করে সঠিক সময়ে তা বিতরণ করে প্রথম থেকেই কিভাবে মংগা মোকাবেলা করেছিলেন একটু ফিরে দেখুন,ভাবুন।

পরবর্তী সরকার এসেই ভিজিএফ কার্ড বাতিল করে দিলো। যখন মানুষ অনাহারে মরতে শুরু করলো, তড়িঘড়ি কার্ড এবং চাল বিতরণ শুরু করলো। ততো দিনে কিছু লোকের আয়ু শেষ। পেপারে খবর পড়েছি, ছবিও দেখেছি,,,,চাল নিতে এসে অশীতিপর বৃদ্ধা তিনদিনের অনাহারে কাতর দেহ নিয়ে থলিতে দশ কেজি চাল নিয়েই লুটিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিলো। আজ সেই অঞ্চলের কিশোর যুবকেরা মংগার নাম জানেনা।যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সেখানকার অবস্থা ফিরিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা কি উন্নয়ন নয়?

মোবাইল কোম্পানি ছিলো মুষ্টিমেয়, তাই খরচ ছিলো বেশি। এখন অনেক কোম্পানি, তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কম খরচে সর্বনিম্ন আয়ের লোকটিও এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে। বলতে পারেন এর অপপ্রয়োগের ফলাফলের কথা। আমি কিন্তু কোনো অপ নিয়ে বলতে চাইছিনা। কারণ সবকিছুরই অপ সাধারণত খারাপ ফল আনে। সেটা ব্যবহারকারীর দায়।এখন প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও মা, স্ত্রী, বাবা তাদের প্রবাসী আত্মীয়ের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলে বিরহের তাপ অনেকটাই কমাতে পারে। নিজের বেড়ে উঠতে থাকা শিশুটিকেও দেখতে পায়! ভেবে দেখুনতো, এটা ডিজিটাল হবার পথে এগিয়ে যাওয়া কি না!

বিভিন্ন সেতু,আন্তঃ জেলা রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, নতুন রেলগাড়ি, উন্নত বগি, শাহ আমানত বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণের সুবিধা ইত্যাদি নাহয় নাইই বললাম।

কাজের লোক পান না কেন সহজে? হুম্ম,গার্মেন্টস শিল্পে আমরা বিশ্বে প্রথম সারিতে।তাই সেখানে প্রচুর মানুষ কাজ পেয়েছে। আগেকার উকুন বাছা হাতগুলো কর্মীর হাতে রুপান্তরিত হয়েছে। এতে ক্রমশ বাড়ছে মাথাপিছু আয়। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় গ্রামে গ্রামে ধান শুকানোর জন্য চাতাল তৈরি হয়েছে। তাতে ধান শুকানো, চাল ভাঙানোর কাজে গ্রামের মহিলারা নিয়োজিত। কাজ সেরে তারা ঘরে ফিরে যেতে পারে,নিজ সংসারে। তাই স্বল্প বেতনে খুন্তির ছ্যাকা খেতে বাসাবাড়িতে তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা। পেলেও গুনতে হচ্ছে উচ্চ বেতন। এসব কি উন্নয়ন নয়?

কথায় কথায় বাজার দরের উপমা টানেন! কই,বেতন কতো বেড়েছে সেটা তো উল্লেখ নেই! এতোই যদি অভাব থাকতো এখনো তাহলে এতো লোক নিজস্ব ফ্লযাটে থাকে কিভাবে। শহরে মানুষ কী হারে বাড়ছে প্রতিনিয়ত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে পানি,বিদ্যুৎ, গ্যাসের চাহিদা। ভাবুনতো, সেই হারে কি ঘাটতি হচ্ছে? একবার লোডশেডিং হলেই কিছু লোক সরকারের পিন্ডি চটকাতে লেগে পড়ে। ভুলেও তুলনা করেনা,আগে কতো বার বিদ্যুৎ যেতো।

আমাদের শিক্ষার হার, রেমিটেন্স ইত্যাদি অনেক বেড়েছে। গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা চালু হয়েছে,অথচ একচোখা দানবের মতো দুর্জনেরা কেবল নাই নাই করে যাচ্ছেন। দেখুন, এক লাফে কেউ শিখরে উঠতে পারেনা। আমরাও পারবো না।কিন্তু ২০/৩০ বছর আগের বাংলাদেশের সাথে তুলনা করে দেখুন তো, অনেক বিরোধিতা,ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের পরেও আমরা কি উন্নয়নের পথে অনেকদূর এগিয়ে আসিনি?

লেখিকা: মারলিন ক্লারা (সহকারি অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা)