Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে বাড়তে আকাশছোঁয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের আয় কমলেও দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গত অক্টোবরে প্রতি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫০৫ টাকা।এরপর থেকে তা বেড়েই চলেছে। গত ১ জুলাই থেকে প্রতি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১২ টাকা। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের নামে আবার বাজারে পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে; যা বাড়াবে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

কিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টন। আর পাম অয়েল আমদানি করা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। এ থেকে বোঝা যায়, দেশে সয়াবিনের তুলনায় পাম অয়েল তেল আমদানি হয়েছে ২ লাখ টন বেশি। তবে খুচরা বাজারগুলোতে সয়াবিন তেলের পরিমাণই বেশি; তেমন দেখা যায় না পাম অয়েল তেল।

তাহলে প্রশ্ন, পাম অয়েল যায় কোথায়? পাম অয়েল সয়াবিন তেলের সঙ্গে মিশিয়ে তা সয়াবিন তেল বলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে অজান্তেই ক্রেতাদের হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যা রোধ করা খুবই জরুরি।

সরকারি এক গবেষণায় জানা গেছে, দেশে গত চার বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি তেল খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৫ কেজি বেড়েছে। ২০১৫ সালে মাথাপিছু খাবার তেল ব্যবহারের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩.৮০ কেজি; সেখানে ২০১৯ সালে জনপ্রতি ১৮.৭ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে তেলসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

টিসিবি সয়াবিন প্রতি লিটার বোতলজাত তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা এবং ডাল ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করে থাকে। তবুও তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। আর এ জন্য তেলের দাম অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।

উদ্বেগজনক হলো, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য কালোবাজারে যাওয়ার ফলে করোনা মহামারিতে ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। টিসিবির দায়িত্ব ছিল ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া মানুষদের মাঝে স্বল্পমূল্যে সরকারি পণ্য বিক্রয় করা। সেটি না করে সরকারি গুদাম থেকে টিসিবির পণ্য তুলে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে; আবার অনেকে বিক্রি না করে পণ্য গোপনে মজুত করে রাখছে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না হয়ে উল্টো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি নজরে এনে টিসিবি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অসাধু ৩৭ ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করেছে। তবে শুধু লাইসেন্স বাতিল নয়; তাদের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।

সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য। ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতি বছর দেশে প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্যানসার, দুই লাখ মানুষ কিডনি রোগ এবং দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ছাড়াও গর্ভবতী নারীরা অন্তত ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছে। এর বাইরে হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই ভোক্তাদের উচিত, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। অন্যদিকে ভেজাল খাদ্য বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। একইসঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত ডিলার নিয়োগ দিয়ে টিসিবির পণ্য গ্রামগঞ্জ পর্যায়ে বিক্রির পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৩ আগস্ট ২০২১ /এমএম


Array