Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ ক্রমেই দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। প্রতিনিয়ত ভাঙছে মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্ধলক্ষ ছাড়িয়েছে আক্রান্ত। মারা গেছেন হাজারের বেশি। সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা বলছে, রোগী বৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসাসেবা ও অক্সিজেন সরবরাহ করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

একই আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও। তারা করোনার লাগাম টানতে প্রয়োজনে কারফিউ জারির পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা কয়েক গুণ বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন তারা।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে দুই সপ্তাহের পরিপূর্ণ লকডাউন দিতে হবে। মানুষকে ঘরে রাখতে প্রয়োজনে কারফিউ জারি করতে হবে। দৈনিক কমপক্ষে এক লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারকে আইসোলেশন করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর কয়েক মাস বাড়ে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ থেকে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় টানা বিধিনিষেধ চলছে।

চলমান করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপর। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে। সবশেষ গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায় ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক দিনে মারা গেছেন ২০১ জন। আর শনাক্ত ১১ হাজার ২৬২ জন।

তথ্য অনুযায়ী এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৬৩৯ জনের। এই পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৫৯৩ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত জানুয়ারি মাসে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬২৯ জন, যা এপ্রিলে লাখ ছাড়িয়ে যায়। আবার জুন মাসে তা বেড়ে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জনে পৌঁছায়। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ৫৬ হাজার ৯ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ১০৯০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, রোগী শনাক্তের হার থেকে বোঝা যায় কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। সংস্থাটির হিসেবে কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে রোগী শনাক্তের হার ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

তাই দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী জুলাই মাসের সংক্রমণ গত জুন এবং এপ্রিল মাসকে ছাড়িয়ে যাবে। আর রোগীর সংখ্যা দিন দিন এভাবে বাড়লে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন যে আংশিক লকডাউন হচ্ছে এর সুফল হয়তো মিলতে পারে কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ পর। কিন্তু এর আগে যদি মানুষকে ঘরবন্দি করা না যায়, কোথায় কে আক্রান্ত সেটা চিহ্নিত করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এখনই হাসপাতালগুলোতে জায়গা হচ্ছে না। অক্সিজেনের সংকট শুরু হয়ে গেছে। সামনে আরো খারাপ হতে পারে।’

আক্রান্ত ও মৃত্যু ব্যক্তিরা পঞ্চাশোর্ধ্ব

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, গত ৫ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত মৃতের যে সংখ্যাটি আমরা দেখি, সেখানে ষাটোর্ধ্ব যারা আছেন তারাই বেশি। সেদিন আমরা ষাটোর্ধ্ব ৯১টি মূল্যবান প্রাণ ঝরে যেতে দেখেছি। সেখানে পঞ্চাশোর্ধ্ব ছিলেন ৩০ জন। সব মিলিয়ে ৫০ বছর থেকে ষাটোর্ধ্ব যারা আছেন, তারাই করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৮  জুলাই ২০২১ /এমএম