Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বাংলা একটি সমৃদ্ধ, সৌন্দর্যমণ্ডিত, শ্র“তিমধুর ও সহজ-সরল ভাষা। মনের আবেগ ও ভাব প্রকাশে বাংলাভাষায় শব্দের প্রাচুর্যতা নিয়ে গর্ব করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের এমন ঘটনা বিরল।

এত আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে ভাষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কথা বলার অধিকার আদায় করলাম, সেই ভাষাকে আমরা বড়ই অবজ্ঞা করি। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভাষাকে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে অবহেলার চোখে দেখা হয়। অপরদিকে আধুনিকতার অজুহাতে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বিকৃত করেই চলছি। ভাষা দূষণ যেন বায়ু দূষণের মতো দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে ভাষা দূষণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের আড্ডায়-বিনোদনে আনন্দ বা হাসি-ঠাট্টা মানেই কতিপয় বিশেষ বর্গীয় শব্দের খুব সাবলীল ব্যবহার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করতে অথবা ইউটিউবের কিছু বিনোদনধর্মী ভিডিওতে বিকৃত শব্দের পাশাপাশি অশ্লীল, নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ও গালাগালিরও বিস্তর সমাহার ঘটেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ কুরুচিপূর্ণ ট্রল বা ভিডিওর প্রতিই সমাজের অধিকাংশ মানুষের বেশি আগ্রহ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের দর্শক সংখ্যা লাখের ওপর। বেশি মানুষ দেখে বলেই অশ্লীলতার গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমনটি নয়। তবে একশ্রেণির নিুমানের দর্শক রীতিমতো এগুলো প্রচার ও উপভোগ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লেখাতে অশুদ্ধ বিকৃত বাংলা বানানের পাশাপাশি অশ্লীল শব্দের ব্যবহার ভয়াবহ আকারে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের বিনোদন দেওয়ার জন্য সচেতনভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বিকৃত শব্দের ব্যবহার করছেন অনেকেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে-বিশেষ বর্গীয় অশ্লীল শব্দ ছাড়া এদের অনুভূতির প্রকাশ সম্পূর্ণ হয় না।

সমাজে বিশেষ করে অল্পবয়সী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা প্রায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমন অনেক তথাকথিত শিক্ষিত পরিবার পাবেন, যারা কথাবার্তা বলার সময় বিকৃতভাবে এ অশ্লীল শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকেন। এমন বাক্যালাপ নিঃসন্দেহে যথার্থ পারিবারিক শিক্ষার অভাব ও ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ।

মায়ের ভাষার বিকৃতি রোধে চাই পারিবারিক সচেতনতা। আপনার সন্তানকে যদি আপনি বাংলা ভাষাকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে শেখান, তাহলে বড় হয়ে সে মাতৃভাষাকে দূষিত করবে না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

সেসব আন্দোলনে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল দেখার মতো। তবে কিছু কিছু আন্দোলনকারীর হাতে এমন কিছু প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে, যেগুলোয় অকথ্য ভাষায় সরকার বা প্রশাসনকে গালি দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কথায় আছে-যে কাজ বন্দুকের গুলি দিয়ে হয় না; সেই কাজ মুখের মিষ্টি কথায় হওয়া সম্ভব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কোনো বিষয়ে কারও মতামত জানানোর থাকলে সেটা মার্জিত ভাষায় জানানো সম্ভব। কোনো বিষয় কারও মতের বিরুদ্ধে চলে গেলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা এখন খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়ে পরিণত হয়েছে; প্রতিবাদটি মার্জিত ভাষায় করা যেত।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপরাধ করলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। তার জন্য আমরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নিজেকে অপরাধ করছি কেন? তাই সবার কাছে আহ্বান করব-অন্যের মতামতকে সম্মান জানিয়ে কোনো বিষয়ের বিরোধিতা করতে হলে মার্জিত ভাষায় করুন, যাতে আমাদের কষ্টার্জিত ভাষার অপমান না হয়।

শিক্ষার্থী : আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এমএম