Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: সারা বিশ্বে মাছের সংখ্যায় বিপর্যয় ঘটেছে এবং প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতির মাছ এখন বিপন্ন হওয়ার মুখে। বিশ্বে মিঠা পানির মাছের ওপর এক রিপোর্ট বলছে এই তথ্য। পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো বলছে, ৮০টি প্রজাতি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে গত এক বছরের মধ্যে।রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে মাছের সংখ্যাও কমেছে এক তৃতীয়াংশ। আর একই সময়ে ‘মেগা ফিশ’ নামে পরিচিত বড় জাতের মাছের সংখ্যা কমেছে শতকরা ৯৪ ভাগ।

বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য মিঠা পানির মাছ এবং এই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন আরও বহু লোক। এখন পরিবেশ দূষণ, নির্বিচার শিকার, নদীতে বাঁধ নির্মাণ এবং জলাভূমি বিনষ্ট হওয়ার ফলে মাছের প্রজাতিতে ধস নেমেছে।ডাব্লিউডাব্লিউএফ, লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটি, গ্লোবাল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশনসহ ১৬টি পরিবেশবাদী সংগঠন মিলে ‘দ্যা ওয়ার্ল্ডস ফরগটেন ফিশ’ নামে এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের কৃষি তথ্য সার্ভিস এইআইএস-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিলুপ্ত প্রায় মিঠা পানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৬৪টি। ট্যাংরা, মহাশোল, সরপুঁটি, টাটকিনি, বাগাড়, রিঠা, পাঙাশ আর চিতল মাছের প্রজাতিগুলো চরম হুমকিতে রয়েছে।গত কয়েক দশক ধরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয়গুলোর আয়তনে সংকোচন, নদী বা জলাশয়ের পানির অপরিমিত ব্যবহার, কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশকের দ্বারা পানির দূষণ এবং মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের সংখ্যা কমছে।

তবে গত এক দশকে কৃষিপণ্য হিসেবে মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র মুখ থেকে ফিরে এসেছে এমন দেশি মাছের সংখ্যাও এখন বাড়ছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করছে।পরিবেশ গ্রুপগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপেও মিঠা পানির মাছ কমছে উদ্বেগজনক হারে। স্টার্জন, বার্বট ইত্যাদি মাছ ব্রিটেনের মিঠাপানি থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে। ইউরোপিয়ান ঈল বিলুপ্ত হওয়ার মুখে রয়েছে।

পরিবেশবাদী সংস্থা ডাব্লিউডাব্লিউএফ মিঠা পানির মাছের সংখ্যা কমার পেছনে নদীর বেহাল দশা, দূষণ, বাঁধ নির্মাণ এবং পয়োনিষ্কাশনকে দায়ী করেছে।বাংলাদেশে মিঠা পানির মোট প্রজাতি সংখ্যা ২৬০টি। এর মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩টি। দেশে যে পরিমাণ মৎস্য উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ছোট মাছের অবদান শতকরা ৩০ ভাগ।

ডাব্লিউডাব্লিউএফ বিশ্বের সরকারগুলোকে পরামর্শ দিচ্ছে, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও পরিবেশ-রক্ষা আইনকে জোরদার করে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে।এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ডেভ টিকনার বলছেন, সারা বিশ্বে মিঠা পানির আবাসস্থলে বহু প্রজাতির মাছ থাকে। কিন্তু এই রিপোর্টে দেখা গেছে যে, তাদের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে কমছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা দা নেচার কনসারভেন্সির কর্মকর্তা কারমেন রেভেঙ্গা বলেন, বহু বৈচিত্র্যের মিঠা পানির মাছ শুধু নদী কিংবা জলাশয়ের জন্যই প্রয়োজনীয় নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ, বিশেষভাবে যারা দরিদ্র, খাদ্য ও জীবিকার জন্য এই মাছের ওপর নির্ভরশীল।এখন যা জরুরি তা হলো আমাদের একসাথে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ দেখাতে হবে এবং সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে মিঠা পানির মাছ রক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। -বিবিসি বাংলা

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এমএম