প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দেশে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর অন্যতম সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনায় এ দ্বীপটির অবস্থান।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়।
এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে ওঠে। এর ১০০ বছর পর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে ওঠে। প্রায় ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে দ্বীপটি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল জাজিরা। পরবর্তীকালে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। বিভিন্ন কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা যায়. প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে এ এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।
স্বচ্ছ পানি ও চারপাশজুড়ে প্রবাল পাথরবেষ্টিত দ্বীপটি খুবই মনোরম। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের পার্শ্ববর্তী ৮.৩ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এটির অবস্থান। দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপ সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্রও।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্কা বা কড়িজাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৫ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২ প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল।
এসব প্রাণীর অনেকগুলোই এখন বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এ জীববৈচিত্র্য। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাশে ছেঁড়া দ্বীপ এ দ্বীপের চারদিকে রয়েছে প্রবাল, পাথর, ঝিুনক, শামুকের খোলস, চুনা পাথরসহ কয়েকশ প্রজাতির সামুদ্রিক জীব।
অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ, যথেচ্ছ হোটেল-মোটেল নির্মাণ, নির্বিচারে গাছ কেটে বন উজাড়, মানুষের মলমূত্রসহ নানা বর্জ্য ও প্লাস্টিক সামগ্রীর বর্জ্যে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির পরিবেশ-প্রতিবেশে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এছাড়া পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে প্রতিনিয়ত মিষ্টি পানি উত্তোলন, বহুতল ভবন নির্মাণ, ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং খোলা পায়খানা নির্মাণসহ নানা পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য।
দ্বীপটিতে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে আরও ১০ হাজার পর্যটক সেখানে অবস্থান করে। ফলে ২০ হাজার মানুষের চাপ নিতে হয় দ্বীপটিকে। তাই দ্বীপটি এতটাই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে যে হারাতে বসেছে তার রূপ-সৌন্দর্য। চারদিকের বাতাসে দুর্গন্ধ। বলতে গেলে সেন্টমার্টিন তার জীববৈচিত্র্য খোয়াতে খোয়াতে এখন মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে।
পরিবেশবাদী কিছু সংগঠন ছাড়া এর অযত্ন ও অবহেলা নিয়ে কাউকে চিন্তিত দেখা যায় না। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় যে কোনো ধরনের প্লাস্টিক মোড়কজাত খাবার, ক্যান ও প্লাস্টিকের বোতলসহ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা জরুরি। সেন্টমার্টিন ও ছেড়াদ্বীপের আন্ডার ওয়াটার ক্লিনিংয়ের জন্য পানির নিচে যে প্লাষ্টিক ও অন্যান্য ময়লা রয়েছে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
পর্যটকদের আগমনকে নিরুৎসাহিত না করে বরং সহনীয় নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত। তাহলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ টিকে থাকবে শত-হাজার বছর। রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্যও।
মো. শিব্বির আহমেদ তাশফিক : মাস্টার্স শিক্ষার্থী এবং সহকারী গবেষক; বুয়েট
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৯ জানুয়ারি ২০২১ /এমএম





