প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ২০২০ সাল। ভয়াবহ এই বছরটাকে বিশ্ববাসী এক অনাকাঙ্ক্ষিত মহামারীর কারণে ভুলে থাকতে চাইবে। একটি মহামারী কতটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে, মানবসম্প্রদায় খুব ভালোভাবে তা প্রত্যক্ষ করেছে এ বছর।
যখন বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বজুড়ে এবং এক পর্যায়ে এটিকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; দেশে দেশে লাশের মিছিল যখন ক্রমাগত বাড়তে থাকল আর কিছুতেই যখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না সেই মৃত্যুর মিছিল, তখন সংক্রমণ ঠেকাতে কী না করেছে দেশগুলো! এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, ওশেনিয়া-লকডাউনে গেছে সবাই।
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যর্থ। অতএব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চল; কাজ বন্ধ করে ঘরে বসে থাক সবাই। মানুষের সঙ্গে মানুষ দেখা করতে পারবে না-কী এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়াটাও অশুভ, অন্যায়। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো পড়ে গেল নানা সংকটে। লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বহু মানুষ কাজ হারাল। জীবীকার সংকট পৌঁছাল চরমে। দরিদ্র, অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা গেল বেড়ে। দেখা দিল খাদ্যসংকট। বিভিন্ন সমস্যা মহামারীকালে ভয়াবহ রূপ নিল। এ এক অভূতপূর্ব ক্রান্তিকাল।
করোনাকালে এবার বর্ষায় দফায় দফায় বন্যায় দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পান তাণ্ডব চালিয়েছে গত মে মাসে। এসব দুর্যোগের সময় মানুষের ক্ষেতের ফসল ডুবেছে।
ভেসেছে ঘেরের মাছ। বহু মানুষ হয়েছে গৃহহীন। মানুষের আশ্রয় মিলেছে গবাদি পশুর সঙ্গে একই মাচায়, সড়কে, সেতুতে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষ নিরাপদ পানি ও খাদ্যের সংকটে পড়েছে; অথচ মহামারীর কারণে দুর্যোগকবলিত এলাকায় ত্রাণতৎপরতা ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ফল হিসেবে দেশে দেশে নারকীয় দাবানল ও রেকর্ডসংখ্যক বন্যা দেখা দিচ্ছে। এ জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যেও মহামারীর কারণে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন কপ-২৬ বাতিল করা হয়েছে।
মহামারীকালে স্বাভাবিক জীবনে আরও কত ছন্দপতন ঘটল! দৈনিক পত্রিকাগুলোর কলেবর গেল কমে। ২০-২৪ পৃষ্ঠার জাতীয় দৈনিকগুলো নেমে এলো ১২-১৬ পৃষ্ঠায়। শুধু কলেবর হ্রাস নয়, অনেক পত্রিকার মুদ্রণ বন্ধ হয়ে গেছে এই দুঃসময়ে। বাধ্য হয়েই তারা এ কাজটি করেছেন; যাদের অনেকেই আর হয়তো কখনো ছাপা কাগজে ফিরবেন না। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পত্রিকার প্রকাশনা।
বছরের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অনলাইনে, টেলিভিশন, রেডিওতে পাঠদান চললেও তা খুব বেশি কার্যকর হয়নি। অবশ্য দেশের উদ্যমী ও মেধাবী তরুণরা একদম অলস হয়ে ঘরে বসে থাকেনি। তাদের কেউ কেউ কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন। কেউ ছবি এঁকেছেন। কেউ রান্না শিখেছেন। কেউ করেছেন অনলাইনে বিভিন্ন শিক্ষণীয় কোর্স।
করোনায় চেনা-অচেনা অনেক প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি আমরা। কবি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, নার্স, সংস্কৃতিকর্মী-বাদ যায়নি কোনো পেশার মানুষ। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও মানুষ আশায় বুক বাঁধছে। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ইতোমধ্যে করোনা আমাদের সবার জীবনে বহু ক্ষতি করেছে। তবে মানুষের আশা, ভাইরাসটি দু-তিন বছরের মধ্যে নির্মূল হবে। আর সেটা হবে টিকার কল্যাণেই। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। এটি নিরাপদ এবং ৯৫ শতাংশ কার্যকর। আরও একাধিক নিরাপদ ও কার্যকর টিকা খুব শিগগিরই পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। অন্য কোনো মহামারীর ক্ষেত্রে এত দ্রুত টিকা উদ্ভাবনের ইতিহাস নেই। তবে অভিযোগ আসছে, ধনী দেশগুলো করোনার টিকা মজুদ করে রাখছে। এতে বিশ্বজুড়ে টিকার সমবণ্টন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নতুন বছর ২০২১ আসছে। আমাদের প্রার্থনা: এই অনিশ্চয়তাকে দূরে ঠেলে নতুন বছরে মহামারী নির্মূলের পথে অনেকদূর এগিয়ে যাবে পৃথিবী। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষকে টিকা থেকে বঞ্চিত করে মহামারী নির্মূল করা যায় না-এই বোধোদয় হোক উন্নত রাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে। মানুষ পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।
আর যেন শুনতে না হয়: করোনার তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ঢেউ মোকাবেলা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আবারও লকডাউনে গেছে কিংবা দেশে দেশে জারি হয়েছে কারফিউ অথবা জরুরি অবস্থা।
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০১ জানুয়ারি ২০২১ /এমএম





