Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: যে সব দেশের সংগে কুটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সে সব দেশে নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষায় কুটনীতিক মিশন স্থাপনের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর ‘কারো সংগে বৈরিতা নয়, সবার সংগে বন্ধুত্ব’ এই রীতিতে ই বাংলাদেশ পৃথিবীর দেশে দেশে কুটনৈতিক মিশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সমর্থনকারী দেশগুলো বিবেচনায় প্রাধিকার পেলেও ক্রমান্বয়ে এর বিস্তৃতি ও প্রসার ঘটে।

অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে শিক্ষা, চাকুরী, প্রশিক্ষণ ও অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় প্রতিনিয়তই স্থানান্তরিত হচ্ছে এক বিশাল জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ও যার ব্যতিক্রম নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশ থেকে প্রবাসে স্থানান্তরিত এই বিশাল জনশক্তি নিজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছে যুগান্তকারী ভূমিকা, এমনকি এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সচল রাখছে স্বদেশের অর্থনীতির চাকাও । বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ লক্ষ ত্রিশ হাজার প্রবাসী শ্রমিক নিয়মিত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও নিরদ্বিধায় বলা যায়, প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের হিসাব করলে সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

ড. খলিলুর রহমান, কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার

প্রবাসে বসবাসকারী বিশাল এই বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর নিয়মিত দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশসমূহে অবস্থিত কূটনীতিক মিশন, দূতাবাস বা হাইকমিশনের। পাসপোর্ট,ভিসা, ইস্যু, নবায়ন, জাতীয়তা, নাগরিকত্ব সনদ, সত্যায়ন-প্রত্যয়ন, পাওয়ার অব এটর্নি সহ ইত্যকার নিয়মিত কনসুলেট সার্ভিস ছাড়াও প্রবাসে শ্রমবাজার সৃষ্টি, শিক্ষা -প্রশিক্ষণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক বানিজ্যের সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সরকার বা রাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিটি দূতাবাস বা হাইকমিশনের ই রয়েছে দেশের জন্য অবদান রাখার এক যুগান্তকারী সুযোগ, আর প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা ও মনে করেন দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই নিজ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সুখ দুঃখের আশ্রয়স্থল, আশা-প্রত্যাশার শেষ ঠিকানা কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মানে, গুণে যেমন সেবা প্রত্যাশীদের বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারেনি তেমনি অর্থ, বানিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা- সংস্কৃতির সম্প্রসারণে ও প্রত্যাশিত কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। বিপরীতে রাষ্ট্রীয় অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার,ব্যক্তিগত উচ্চাশা পূরণে ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের আইন কানুনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে গন মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে কোন কোন সময় নিজ দেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অতীত ইতিহাস ও আছে।

গত একযুগে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্য আজ সর্বজন স্বীকৃত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এসডিজি সহ নানাবিধ কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একটি সুখী সমৃদ্ধ অর্থনীতির অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ। আর এটিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকার পাশাপাশি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রবাসের বাংলাদেশ মিশনগুলো ও নিতে পারে নানাবিধ যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

কানাডায় আমার প্রবাস জীবন একযুগের ও বেশী, নিয়ত অভিজ্ঞতায় দেখেছি এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি বৃহৎ অংশ কঠোর পরিশ্রম করেও বাংলাদেশকে কঠিন ভাবে হ্রদয়ে ধারন করেন, আর একটি অংশ শুধু ধারণ করেই ক্ষান্ত না হয়ে, বাংলাদেশী কমিউনিটি কে তুলে ধরতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আর সামাজিক সাফল্যের অংশীদার হতে স্বেচছাশ্রমে নিয়ত প্রানান্তকর প্রচেষ্টা ও চালিয়ে যান।

এই তো সেদিন কানাডা প্রবাসী প্রখ্যাত সাংবাদিক নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কানাডায় উচ্চ শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা ও মিলিয়ন ডলারের বানিজ্য সম্ভাবনার মতো পৃথকভাবে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের আয়োজন করলেন, সমস্যা আর সম্ভাবনা কে চিহ্নিত করে উপায়গুলো ও তুলে ধরলেন, কিন্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হলো কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন। বরাবরের মতো এমন মহতি উদ্যোগ আর আলোচনাগুলো সম্ভাবনার দিগন্তে আলো ছড়াতে না পারলেও, এবার যেন ব্যতিক্রমের পূর্বাবাস ই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আমাদের আমলাতন্ত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রজাতন্ত্রের সেবক বলা হলেও, মোসাহেবী ভাব নিয়ে আমালারাই যখন প্রজার সেবা পাওয়া কে নিয়মে পরিনত করেছে, সেই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম নিশ্চিতভাবেই সুলক্ষণের হাতছানি, প্রত্যাশিত পথে এগিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস। সম্প্রতি কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ড. খলিলুর রহমান, প্রারম্ভের প্রথম সপ্তাহে ই, শত মিলিয়ন ডলারের বানিজ্য সম্ভাবনার আলোচনা টি উনার দৃষ্টি গোচর হয়, বারংবার যোগাযোগ করে কথা বলেন সংলাপের আয়োজক শওগাত আলী সাগর এর সংগে, স্বপ্নবাজ ব্যবসায়ী সাদ আলম আর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি উদ্যোক্তা রাফি সাইদের সংগে আলোচনা করে বানিজ্য সম্ভাবনা কে বাস্তবে রূপায়িত করার সুদৃঢ় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উত্তরাধিকারে পাওয়া আমাদের চিন্তা চেতনাকে ভুল প্রমান করে মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কানাডিয়ান ডাইরেক্ট স্ট্রিমে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সরকারের সংগে কাজ শুরু করার সুসংবাদটি ও জানালেন। ক্যালগেরী প্রবাসী একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসেবে তার দেশপ্রেমে আমি অভিভূত, সেই সাথে স্বাগত কৃতজ্ঞতা ও সাফল্যের পথে অবিরাম শুভকামনা।

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, মই মাচাং ব্যবহার করেও একজন হাইকমিশনারের দেখা পাওয়া দুষ্কর, এমন অভিজ্ঞতা যখন হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশীর, ঠিক সেই সময়ে কুটনীতিক ড. খলিল স্বপ্রণোদিত হয়ে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের সংগে যোগাযোগ করছেন,বানিজ্য আর বিনিয়োগ সম্ভাবনার অনুসন্ধানে মনোযোগী হয়েছেন, কোয়ারান্টাইনে থেকেও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির সংগে, কানাডা- বাংলাদেশ সম্পর্ককে নিজ দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

একজন প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে মান্যবর হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমানের কর্মকান্ড ইতিমধ্যেই আমার মতো হাজারো প্রবাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছে, বিভিন্ন গন মাধ্যমের সংগে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ তার প্রতিশ্রুতিশীল মানসিকতার ই বহিঃপ্রকাশ। একজন সদ্য যোগদানকৃত হাইকমিশনার যখন নিজ উদ্যোগে প্রবাস বাংলা ভয়েস এর প্রধান সম্পাদক আহসান রাজিব বুলবুল এর মায়ের মৃত্যুতে শোক সহানুভূতি প্রকাশ করেন, তখন আমরা আবেগে আপ্লূত হই, খুঁজে পাই একজন মানবিক মানুষ কে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ সোনার বাংলার জন্য, সোনার মানুষ চাই’। প্রত্যাশা করি সততা, নিষ্ঠা আর কর্তব্যে অবিচল থেকে ডঃ খলিল দৃষ্টান্ত হবেন, কুটনীতিতে সফল হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন।

আমরা আশাবাদী হয়েছি,বিশ্বাস করতে চাই ড. খলিলুর রহমান এর নেতৃত্বে ই উন্নয়ন আর কুটনীতির ইতিহাসে এক নতুন দিনের সূর্য উদিত হবে। পুরাতন জীর্ণতাকে পিছনে ফেলে, সকল অন্ধকার কে দূরীভূত করে পৃথিবীর দেশে দেশে আমাদের কুটনৈতিক মিশন গুলো এভাবে জেগে উঠলে, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে আমাদের উন্নয়নের গতি; অচিরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন সমৃদ্ধ অর্থনীতির সুখী, সুন্দর সোনার বাংলাদেশ।

লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক

ক্যালগেরী, আলবার্টা, কানাডা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৩ ডিসেম্বর ২০২০/এমএম


Array