Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: কি ভাবছেন হিলারি ক্লিন্টন আর তার বন্ধুরা? সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ই বা কি ভাবছেন? যাদের হয়ে বিশ্বব্যাংক এর কর্তারা একের পর এক বাংলাদেশের রাজনীতিক আর আমলাদের চরিত্র হননে হন্যে হয়ে শর্তের বেড়াজালে শেখ হাসিনার সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন তারা ই বা কি ভাবছেন?

বিশ্বব্যাংকের মতো মেগা মুরুব্বিদের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মাসেতুর মতো প্রকল্প নিজস্ব তহবিলে বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন সেক্টরে এর ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়,বলে যে সব বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা সরকার কে প্রেসক্রিপ়্শন দিচ্ছিলেন, এরা ই বা কি ভাবছেন?

গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ৪১তম স্পেনের মাধ্যমে মাওয়া আর জাজিরা সংযুক্ত হয়ে আলোচিত পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান। আর দশ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল সারা দেশের সাথে সড়ক নেটওয়ার্ক এর আওতায় আসবে, বাংলাদেশের বিস্ময়কর সক্ষমতার গল্প ছড়িয়ে যাবে বিশ্বময়।

অর্থনীতির সুবাতাস হবে আর ও বেগবান। বাংলার কোটি কোটি মানুষ আজ আনন্দ আবেগে আপ্লুত,পদ্মাসেতুর সড়ক আর রেলপথের উদ্ভোধনী না জানি বাংলার মাটিতে কোন আনন্দের বন্যা বইয়ে দেবে!

খরস্রোতা সুগভীর জটিল ভূ প্রকৃতির পদ্মায় সেতু নির্মান এক সময় একটি আকাশ কুসুম কল্পনা মনে হলেও, এখন তা ই বাস্তব। তবে এ কল্পনা কে বাস্তবে রূপায়িত করতে কম মূল্য দিতে হয়নি, প্রারম্ভিক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন কে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে হয়েছিল, সচিব মোশাররফ হোসেন কে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, উপদেষ্টা ডঃ মসিউর রহমান কে দায়িত্ব বিরতি নিয়ে আরও অনেক রাজনীতিক আর আমলার সংগে দূর্নীতির মামলায় কলংকিত হতে হয়েছিল।

যে প্রকল্পে অর্থ ই বরাদ্ধ হয়নি, সেখানে ১০% উৎকোচের উদ্ভট গল্প সাজিয়ে সরকার তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ভূলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টা হয়েছিল। শুরু থেকেই শেখ হাসিনা যে আষাঢ়ে গল্পের প্রতিবাদ করে আসছিলেন, কানাডার আদালতে পরবর্তীতে সেই সত্যটি ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এতোসবের পরে ও শেখ হাসিনা যখন প্রয়োজনে নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর কথা বলছিলেন তখন আমাদের ঝানু অর্থনীতিবিদরা আঁতকে উঠেছিলেন, এমন চিন্তাকে অলীক মনে করে যে কোন মূল্যে বিশ্বব্যাংক কে পাশে পাওয়া ই যেন একমাত্র পথ্য ছিল, তাই ষড়যন্ত্রমূলক অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মনোবাসনা পূর্ণ ই যেন ছিলো একমাত্র সমাধান। তাই তো সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী খোদ মুহিত সাহেব ও শেষ অবধি আন্তর্জাতিক মহাজনি সংস্থা বিশ্বব্যাংক এর সন্তুষ্টি অর্জনে ই ব্যস্ত ছিলেন।

আমি অর্থনীতি বুঝি না, এর জটিল পরিভাষা কখনো আমার বোধগম্য হয় না, আর আমার দেশের বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদরা ও মনে করেন, এটি সাধারণের বিষয় নয়, তাই একে জটিল করে রাখলেই যেন তাদের কুলীনতা বজায় থাকে।

তাই আমার মতো সব সাধারন মানুষ অর্থনীতির বিষয়ে ঝানু মাথার অর্থনীতিবিদদের সিদ্ধান্তকে ই নিরাপদ মনে করি। তবে এতটুকু বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না নিজস্ব উৎস থেকে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ও বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারা নিম্নমূখী হয়নি, ২০১৪ থেকে ২০১৯ গড়ে ৭% বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পজিটিভ ধারা অব্যাহত ছিল, মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৬৪ ডলার, বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ বেড়ে বর্তমানে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেই সাথে বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা ও জীবন যাত্রার মান।

তাই দৃঢ়তার সাথে বলতে বাঁধা কোথায়, সামর্থ্যের পদ্মাসেতু আজ আমার মতো হাজারো মানুষের অর্থনীতির ধারণাকে ও পালটে দিয়েছে। সাহিত্যের ছাত্রী, শেখের বেটি শেখ হাসিনা ই এখন আমার কাছে সেরা অর্থনীতিবিদ। শুধু রাজনীতি, সমাজনীতি, মানবতাবোধ আর আন্তর্জাতিক কুটনীতিতে নয়, অর্থনীতির সেরা মুকুটটি ও এখন তার ই প্রাপ্য।

৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ১৮.১০ মিটার প্রশস্ত পদ্মাসেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিন- পশ্চিমাঞ্চলের দুরুত্ব কমবে ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার, যাতায়াত আর পন্য পরিবহনে ঘটে যাবে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।

এই নান্দনিক প্রকল্প শুধু ই যে উত্তর দক্ষিনের সংযোগ ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে তাই নয় দেশের অর্থনীতিতে ও নিয়ে আসবে এক ঈর্ষনীয় সাফল্য। বিশ্বব্যাংক সমীক্ষা বলছে, এই মেঘা প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে তিন কোটি মানুষ, এডিবির তথ্যমতে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত হবে ১.২%, বছরে দারিদ্র্য কমবে ১.৯ শতাংশ, নতুন নতুন শিল্প কারখানা আর পর্যটনের বিশাল কর্মযজ্ঞে কর্ম সংস্থান হবে দুই কোটি মানুষের। নদী আর সেতুটি ঘিরে সাংহাই আর সিংগাপুরের আদলে গড়ে উঠবে অত্যাধুনিক শহর, উম্মোচিত হবে উন্নয়নের এক নয়া দিগন্ত।

শেখ হাসিনার জেদের ফসল পদ্মাসেতু আজ জাতিকে এক নতুন আত্নমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। উন্নয়নশীল দেশের উপর ছড়ি হাঁকিয়ে যে আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক খবরদারি করে বেড়াতো, বাংলাদেশের সক্ষমতা আর শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় তারা আজ অভিভূত।

আমার মতো প্রবাসী বাঙালীরা মর্যাদা আর গৌরবে উদ্বেলিত। পদ্মা সেতুর সফল পরিসমাপ্তি জাতিকে যেমন গৌরবগাঁথায় উজ্জীবিত করবে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত বাসনা সুখী, সুন্দর, দূর্নীতিমুক্ত,বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে ও শেখ হাসিনার সংগ্রাম কে করবে আরও গতিশীল।

লেখকঃ কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক

ক্যালগেরী, আলবার্টা, কানাডা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১১ ডিসেম্বর ২০২০/এমএম


Array