Menu

শুরু হয়ে গিয়েছিল চূড়ান্ত ক্ষণগণনা। প্রথম দুই মিনিট কাউন্টডাউনও হলো। কিন্তু শেষ মিনিটে এসেই থমকে গেল সেকেন্ডের কাঁটা। রকেটের যাত্রা (স্টার্টআপ মোড) শুরু হওয়ার সময়েই তা বন্ধ হয়ে গেল। জানানো হলো, গতকালের জন্য উড়ছে না বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। তবে আজ শুক্রবার ফের চালু হবে কাউন্টডাউন। আজ বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি অতিরিক্ত দিন হাতে রাখা হয়। কারণ, প্রথম দিন কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্বিতীয় দিনটি কাজে লাগানো যায়। আগে থেকেই স্পেসএক্স জানিয়ে রেখেছিল, দ্বিতীয় দিনটি (ব্যাকআপ ডে) শুক্রবার।

স্পেসএক্স এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়েছে। রকেট ও স্যাটেলাইট ভালো অবস্থায় আছে। আজ নির্ধারিত সময়ে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি ফের শুরু হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু-১ নিজস্ব কক্ষপথে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। এখন এক দিন পিছিয়ে আজ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে হাজির ছিলেন পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি। তাঁদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, আবার কেউ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। উপস্থিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল।

কেনেডি স্পেস সেন্টারের দুটি স্থান থেকে দর্শনার্থীদের জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সরাসরি দেখার ব্যবস্থা ছিল। একটি স্থান অ্যাপোলো বা স্যাটার্ন-৫ সেন্টার, উৎক্ষেপণস্থল থেকে যার দূরত্ব ৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল দর্শনার্থী ভবন (মেইন ভিসিটর কমপ্লেক্স) থেকেও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখার ব্যবস্থা ছিল। উৎক্ষেপণস্থল থেকে এটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চিং প্যাড, স্যাটেলাইট ও রকেট পরিদর্শনে। একই সময়ে লঞ্চিং প্যাড দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সব কটি বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। দুর্লভ এ মুহূর্ত সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সও উৎক্ষেপণ মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখতে গভীর রাতে ঢাকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশনের বড় পর্দার সামনে ছিলেন। এমন দৃশ্য চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে।

স্পেসএক্সের যে মহাকাশযানে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে, সেটি হলো ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫। দুটি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।

দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শেষে গত ৩০ মার্চ এটি উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের রকেটে করে স্যাটেলাইটটি আজ মহাকাশে যেতে পারে। স্যাটেলাইট তৈরি এবং ওড়ানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি গ্রাউন্ড কনট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন।