Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: চলতি মাসের শুরু থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। ফলে দেশের করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে রোগীর চাপও। ফলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে হ্রাস পেতে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজনীয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) সাধারণ আসন সংখ্যা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১০ দিনের ব্যবধানে সাধারণ আসনে রোগী বেড়েছে ৩১৯জন, আর আইসিইউ বেডে রোগী বেড়েছে ১৬ জন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগতির দিকে যাচ্ছে। শীত যত বাড়বে সংক্রমণের হার ততই বাড়তে থাকবে। তাই দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর সময়ের মতো চিকিৎসার জন্য হাহাকার তৈরি না হয় সেদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।

সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উচিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা।

নতুন ইউনিট করতে গেলে জনবলের সংকট দেখা দেবে। সে ক্ষেত্রে পুরনো ব্যবস্থাপনায় কিভাবে নতুন করে সচল করা যায় সেদিকে নজর দেয়া দরকার। পাশাপাশি নতুনগুলোর জন্য জনবল তৈরি করার ওপর নজর দিতে হবে। নয়তো মানুষের এমন দুর্দশা সামনে আরো বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বাড়ানোর কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারে (সিএমএসডি) যে ভেন্টিলেটরগুলো রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার তা করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।

তিনি বলেন, ‘গত সোমবারও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা দ্রæত আরো শক্তিশালী ও কার্যকরভাবে প্রস্তুত রাখতে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেসবিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০ দিন আগের অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৯টি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের সাধারণ ৩৫২৫টি আসনের মধ্যে ১৯৮৭টি আসনে ছিল রোগী ভর্তি। খালি ছিল ১৫৩৮টি বেড। আর ৩০৯টি আইসিইউ আসনের মধ্যে ২০৮টি আসনে ছিল রোগী ভর্তি। ফাঁকা ছিল ১০১টি বেড। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১০টি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের সাধারণ ৭৭০টি আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসনে রোগী ভর্তি। ফাঁকা ছিল ৬০১টি আসন।

আর ৩৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টিতে ছিল রোগী ভর্তি। বাকি ২২ টি আইসিইউ বেড ছিল খালি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে সারাদেশে ৭ হাজার ১৬৪টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৫২৩টি আসনে ছিল রোগী ভর্তি। বাকি ৬ হাজার ৬৪১ টি আসন ছিল ফাঁকা। আর ২১১টি আইসিইউ আসনের মধ্যে ৬৬টি আসনে ছিল রোগী ভর্তি। বাকি ১৪৫টি আসন ছিল খালি।

এর ঠিক ১০দিন পর গতকাল শনিবারের তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৯টি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের সাধারণ ৩৪০৪ টি আসনের মধ্যে ২২১৬ টি আসনে রোগী ভর্তি রয়েছে। খালি আছে ১১৮৮ টি বেড। আর ২৯৭ টি আইসিইউ আসনের মধ্যে ২১৭টি আসনে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফাঁকা আছে ৮০টি বেড। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১০টি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের সাধারণ ৭৭০টি আসনের মধ্যে ২১৯টি আসনে রোগী ভর্তি রয়েছে। ফাঁকা রয়েছে ৫৫১ টি আসন।

আর ৩৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৯ টিতে রয়েছে রোগী ভর্তি। বাকি ২০ টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে সারাদেশে ৭ হাজার ১৬৪টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৫৬৩ টি আসনে রয়েছে রোগী ভর্তি। বাকি ৬ হাজার ৬০১ টি আসন রয়েছে ফাঁকা। আর ৫৪৭টি আইসিইউ আসনের মধ্যে ৩০৭ টি আসনে রয়েছে রোগী ভর্তি। বাকি ২৪০টি আসন ফাঁকা রয়েছে।

একাধিক হাসপাতাল ঘুরে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ শয্যা এখনো খালি পড়ে আছে ৭০ শতাংশ। কিন্তু আইসিইউ শয্যার জন্য চলছে হাহাকার। ঢাকার বড় ১০টি সরকারি হাসপাতালের পাঁচটিতেই খালি হচ্ছে না আইসিইউ শয্যা। অন্যগুলোতে খালি মাত্র ১৫ শতাংশ, তাও আবার ভাগ্যে জুটছে না সাধারণ রোগীদের। শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়, হাহাকার অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালেও।

বেশির ভাগ মানসম্মত হাসপাতালের আইসিইউ ভরা থাকছে সব সময়। বিভিন্নভাবে প্রভাবশালীদের তদবিরই এখন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পাওয়ার মূল ভরসা হয়ে উঠেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে শয্যা না থাকার সুযোগ নিয়ে বেসরকারিতে আইসিইউ শয্যার ভাড়া ইচ্ছামতো নেয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, এভার কেয়ার হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের আইসিইউ ইতোমধ্যেই রোগীতে পরিপূর্ণ।

তবে বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ইম্পালস হাসপাতালে ৪২টি, ইউনাইটেড হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল ও আসগর আলী হাসাতালে ৮টি করে সিট খালি রয়েছে। বাকি সব হাসপাতালেই দু-একটি করে শয্যা খালি রয়েছে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৯ নভেম্বের ২০২০/এমএম