Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  দেশের ফুটবলে খরা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় দেড় দশক ফুটবলে কোনো ট্রফি আসেনি বাংলাদেশের ঘরে। সে খরার অবসান ঘটেছে মুজিববর্ষ আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে। নেপালের বিপক্ষে দুটি খেলার প্রথমটিতে ২-০ গোলে জয়লাভ এবং শেষ খেলায় গোলশূন্য ড্র করে এ সাফল্য এসেছে।

একসময় ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত হতো বাংলাদেশ। একমাত্র ভারতকেই ভাবা হতো শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু নেপাল, মালদ্বীপের দ্রুত উত্থান সেই সুদিনের অবসান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে একের পর এক খেলায় নেপাল জিতেই চলেছিল। এ কৃতিত্বের কারণে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সেই বিবেচনায় নেপালকে হারিয়ে ট্রফি জয় নিঃসন্দেহে খরা মোচনের ঘটনা।

বাংলাদেশ ফুটবলের দৈন্যদশা ঝেড়ে ফেলে যে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে, সে সত্যটি স্পষ্ট হয়েছে জামাল বাহিনীর জয়ে। দীর্ঘ আট মাস পর ফুটবলে ফিরে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে। নাবিব নেওয়াজ জীবন এবং মাহবুবুর রহমান সুফিলের গোল দুটো ছিল অসাধারণ।

অন্যদিকে নেপাল শুরু থেকেই খেলেছে আক্রমণাত্মক। সুযোগ পেলেও ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের জালে বল পাঠাতে পারেনি। তবে শেষ মুহূর্তে নেপালের লবইযুগ শ্রেষ্ঠার প্লেসিং পোস্টে লেগে ফিরে আসে। বল জালে জড়ালে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেত না বাংলাদেশ।

একসময় ফুটবল ছিল এ দেশের মানুষের প্রাণের খেলা। আবাহনী-মোহামেডান খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে উপচে পড়ত মানুষ। কালোবাজারে বিক্রি হতো ফুটবলের টিকিট। এমনকি বিভাগীয় শহরের স্টেডিয়ামে ফুটবল লীগের খেলা মানুষ টিকিট কেটে দেখতে যেত। ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহের ঘাটতি না থাকলেও দেশীয় খেলার মান কমেছে দুঃখজনকভাবে। ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে যে নানামুখী চেষ্টা চলছে তাতে উৎসাহ জোগাবে জামালদের ট্রফি জয়। বাংলাদেশ দলের সবাইকে অভিনন্দন।

এ মুহূর্তে ফুটবলের উন্নয়নে করণীয় হচ্ছে, জাতীয় দল ও ক্লাবগুলোর জন্য ভালো ও দীর্ঘমেয়াদি কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা। যদি ক্লাবগুলো ভালো দল গঠন করে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে না পারে, তাহলে কিন্তু দর্শক গ্যালারি ভরবে না। দেশের ফুটবল উন্নয়নে বাফুফেকে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি ক্লাবগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নে প্রয়োজন- ১. ঘরোয়া ফুটবলে পেশাদারিত্ব বাড়ানো; ২. ফুটবলের জন্য সারা দেশে অন্তত তিনটি মাঠের ব্যবস্থা রাখা, যেখানে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া (অথবা রাজনৈতিক) খেলা বন্ধ হবে না;

৩. ঘরোয়া ফুটবলের ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করা এবং টুর্নামেন্টগুলো আরও আকর্ষণীয় ও প্রতিযোগিতামূলক করা; ৪. বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট বাড়ানো; ৫. সারা দেশে পর্যাপ্ত ফুটবল একাডেমি তৈরি করা, যা যে কোনো ফুটবলারের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে; ৬. খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও ইনজুরিকালীন সুবিধা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া;

৭. ক্লাবগুলোর নিজস্ব মাঠ ও আবাসন সুবিধা বাড়ানো; ৮. ক্লাবগুলোর বিদেশি খেলোয়াড় নিয়োগে আরও যত্নবান হওয়া; ৯. জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব চালু করা। কাজী সালাউদ্দিন দেশের একজন কিংবদন্তী খেলোয়াড়। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। তিনি যদি আরেকটু যত্নবান হন, তাহলে দেশের ফুটবল আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য রইল শুভ কামনা।

আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৩ নভেম্বের ২০২০/এমএম

 


Array