Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। গতকালের বৃষ্টি জানান দিয়েছে শীত জেঁকে বসার বার্তা। শীত আসার আগেই এরই মধ্যে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। টানা ১৩ দিন থেকেই সংক্রমণ আর আট দিন ধরে মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী। এই ঊর্ধ্বগতিকে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্বা বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে করোনার টিকা এখনো বাজারে না আসায় আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরাকেই ভরসা মানছে সরকার। যে কারণে ‘মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক’ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সর্বসাধারণকে মাস্ক পরাতে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়ে করা হচ্ছে জেল-জরিমানাও। তবু যেন মানানো যাচ্ছে না জনসাধারণকে। শাস্তির তোয়াক্কা না করে বহু মানুষ এখনো খোলা মুখেই দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

করোনার আসন্ন ধাক্কা সামলাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানতে যেন রাজি নয় কেউ। করোনার শুরুতে বিভিন্ন মার্কেট, অফিস-আদালত, রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এখন আর তা দেখা যায় না। সরকারের এত প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখনো অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাস্ক ছাড়াই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর আইন প্রয়োগ করে হলেও সর্বসাধারণের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় করোনার এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাবে না।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, সামনে শীত, তাই করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। অথচ সর্বত্র গা-ছাড়া ভাব। দেশের মানুষ কোনোক্রমেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, মাস্ক পরে না। হাত ধোয়ার চর্চা কারো নেই, শারীরিক দূরত্ব মানছে না, মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক কেটে গেছে। রাস্তাঘাটে চললে তো মনেই হয় না যে দেশে করোনা আছে। কাঁধের ওপর কাঁধ দিয়ে সবাই চলাফেরা করছে।

এমনকি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগেও একই অবস্থা। মাস্ক পরলে করোনা থেকে ৮০ শতাংশ নিরাপদ থাকা যায়। এ জন্যই ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ প্রথার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘জনগণকে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব মানাতে সরকারকে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি জরিমানার দিকে যেতে হবে। পাশাপাশি সরকারের নৌবন্দর, স্থলবন্দর, বিমানবন্দরগুলোতেও নদরদারি বাড়ানো উচিত।’

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, গ্রিন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক মানুষই এখনো মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছে। গণপরিবহনের শ্রমিক ও যাত্রী, হাটবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগত ব্যক্তি, পথচারীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা দেখা গেছে।

রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজি, মাছ, মুদি, ফল বিক্রেতাসহ বেশির ভাগ দোকানদারের মুখেই মাস্ক নেই। অনেক ক্রেতাও আসছেন মাস্ক ছাড়া। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, মাস্ক না পরে ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। বাজারে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাজার কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনকে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে। সরকারি এই নির্দেশনা অনেক মসজিদের প্রবেশদ্বারে টানানো হয়েছে এবং মসজিদে নামাজের আগে-পরে মাস্ক পরা নিয়ে আলোচনা করছেন ইমামরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! গতকাল গ্রিন রোড জামে মসজিদে জুমার নামাজে গিয়ে দেখা যায় অনেক মুসল্লির মুখে নেই মাস্ক। মাস্ক ছাড়াই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন তারা। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মসজিদেই একই চিত্র ছিল বলে জানায় একাধিক সূত্র।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চলাচল শুরু করাকালে প্রথমদিকে যাত্রীদের বাসে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হলেও এখন আর তা দেয়া হয় না। প্রতিটি বাসই চলছে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে। অনেক বাসের চালক ও সহকারীর মুখে এখন দেখা যায় না মাস্ক।

কারওয়ান বাজার বাসস্ট্যান্ডে উত্তরা-এয়ারপোর্ট রোডের যাত্রী তুলছিল এয়ারপোর্ট স্পেশাল এক্সপ্রেসের একটি বাস। বাসের চালকের সহকারীর মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে বলেন, ‘মাস্ক সঙ্গেই থাকে। ১২-১৩ ঘণ্টা ডিউটিতে সব সময় লাগায়া রাখতে পারি না।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাস মালিকদের পক্ষ থেকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরীণ রুটে এই নির্দেশনা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে করোনা মোকাবিলায়।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দেখা যায়, বেশ কিছু তরুণ-তরুণী চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। আর দুজনের মাস্ক থুতনিতে নামানো। কথা বলে জানা গেল, তারা সবাই বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রায় সবার সঙ্গেই মাস্ক আছে, তবে সেটি সব সময় ব্যবহার করেন না।

শাহবাগ এলাকায় দেখা যায়, অধিকাংশ রিকশাচালক ও যাত্রীর মুখেই নেই মাস্ক। জানতে চাইলে ফজলু মিয়া নামে এক রিকাশচালক বলেন, ‘রিকশা চালাতে বেশি বেশি শ্বাস টানতে হয়। মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গরমও বেশি লাগে।’

চিড়িয়াখানায়ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা: মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পর শর্তসাপেক্ষে গত ১ নভেম্বর খুলেছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। এরপর থেকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন। তবে চিড়িয়াখানায় ঢোকার পর দর্শনার্থীরা কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। গতকাল চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করছে দর্শনার্থীরা। প্রবেশের আগে থার্মোমিটার দিয়ে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে, হাতে স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবেশের পর আর স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ।

বিভিন্ন মোড়ে চিড়িয়াখানার নিরাপত্তাকর্মীরা মাস্ক পরার অনুরোধ করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ করছেন। কিন্তু তাদের কথার তোয়াক্কা করছে না দর্শনার্থীরা। নানা অজুহাতে অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলছে, মানছে না সামাজিক দূরত্ব।

চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘আমরা দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বারবার অনুরোধ করছি। আমাদের লোকজন মনিটরিং করছে। তার পরও এত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন।’

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২১ নভেম্বের ২০২০/এমএম