Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  কলকাতায় কালীপূজা উদ্বোধন করতে যাওয়ার কারণে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ঘরে বাইরে সমালোচনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ‘মহসিন তালুকদার’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সাকিবকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। হুমকি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসে সোমবার সন্ধ্যায় ক্ষমা চান সাকিব।

ফেসবুক লাইভে সাকিব যা বললেন-

যে ঘটনাটি অবশ্যই খুব সেনসিটিভ। আমি বলতে চাই, আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে মনে করি এবং আমি সেটাই চেষ্টা করি মনে করার। ভুল-ত্রুটি হবেই এবং ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমরা আসলে জীবনে চলাচল করি। আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে আমি অবশ্যই আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি কিংবা আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এখন আসি পূজার বিষয়টি নিয়ে। এখন নিউজ কিংবা মিডিয়াতে এসেছে যে, আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। যেখানে আমি আসলে যাইওনি কিংবা করিওনি। এটির প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সেখানে ছিলেন কিংবা যাদেরকে ইনভাইট করা হয়েছিল।

আপনারা যদি সেখানকার ইনভাইটেশন কার্ডটা দেখেন, কার্ডে আসলে লেখা আছে যে, কে আসলে সেটার উদ্বোধন করেছে এবং সেটি হয়েছে আমি যাবার আগে। যে জায়গাতে আমাদের প্রোগ্রামটি হয়েছে, সেটি আসলেই পূজামণ্ডপ ছিল না এবং পাশে আরেকটি স্টেজ ছিল, সেখানে করা হয়েছিল। প্রায় ৪৫ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম এবং সেখানে ধর্ম-বর্ণ কোনোকিছু নিয়েই আসলে কথা হয়নি।

অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে… অনেকগুলো রাস্তা আসলে বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমাকে ওই পূজামণ্ডপটি ক্রস করে যেতে হতো। যেটি আমি গিয়েছি। যাওয়ার সময় পরেশদা, যিনি আমাকে ইনভাইট করেছিলেন, তার রিকোয়েস্টে আমি প্রদীপ প্রজ্বলন করি এবং আমি কলকাতায় অনেকদিন খেলেছি এবং কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করে, ওখানকার সাংবাদিকরা অনেক উৎসুকও ছিল, সবার রিকোয়েস্টে প্রদীপ প্রজ্বলনের সময় পরেশদার সঙ্গে ওখানে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তোলা হয়। ছবি তুলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার… যারা নিরাপত্তাকর্মী ছিল, তাদের একটু বাকবিতণ্ডাও হয়, একটু হাতাহাতিও হয়। সেকারণে ওইদিক দিয়ে আমরা আর যেতে পারিনি। পরে আবার ব্যাক করে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। তো পুরো ঘটনাটা ছিল এরকম।

দুই মিনিটের যে সময়টা আমি পূজামণ্ডপে ছিলাম, সেটি নিয়ে সবাই বলেছে। তারা ধারণা করেছে, আমি পূজার উদ্বোধন করেছি, যেটি আমি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি হয়তো করব না। তারপরও ওখানে যাওয়াটাই আমার হয়তো ঠিক হয়নি, সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমি মনে করি, আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্যও আমি চেষ্টা করব।

আপনাদের ইনফ্রমেশন দেওয়ার জন্য আমি আসলে বলে দেই, কে পূজার উদ্বোধক ছিলেন। আমার কাছে ইনভাইটেশন কার্ডটাও আছে। উদ্বোধক ছিলেন হচ্ছে ফিরহাদ হাকিম, প্রশাসনিক প্রধান, কলকাতা পৌরসভা, মন্ত্রী, পশিমবঙ্গ সরকার। আমি যাবার আগেই তিনি আসলে পূজার উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। তারপর আমি গিয়েছি।

আসলে একটি ছবি দেখে আপনি কখনোই একটি ঘটনা অনুমান করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়। কখনোই আমার ইন্টেনশন ছিল না যে, আমার ধর্মকে ছোট করে অন্য কোনো ধর্মকে বড় করব কিংবা অন্য কোন ইস্যুই ছিল না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমার জ্ঞান খুবই কম। তারপরও আমি চেষ্টা করছি এবং ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব ইসলাম সম্পর্কে যত জ্ঞান নেওয়া যায়।

এমন কিছু যেন আমরা না করি যেটা মানুষকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় যে আমরা আসলে এক নাকি আলাদা। কারণ, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী।… আমি মনে করি, আমরা যারা মুসলমান আছি, এক থাকব সবসময়। কারণ, আমাদের এক থাকা জরুরি। যখনই আমরা আলাদা আলাদা হয়ে যাব, তখনই আমরা দুর্বল, যখনই আমরা এক থাকব, তখনই আমরা স্ট্রং।

কিন্তু একটা জিনিস আমি বলতে চাই যে, দুই-এক জায়গায় দেখছি যে, আমি আসলে দেখছি না, আমি এসব নিয়ে ফোকাস করি না, তারপরও অনেকে অনেক কিছু… যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, আপনি চাইলেও অনেক কিছু ইগ্নোর করতে পারবেন না।

যেহেতু আমার নামের সামনে অনেকেই শ্রী, শ্রী কিংবা সিঁদুর, প্রদীপ, মন্দির অনেক কিছু দিয়ে অনেক কিছু বলছেন, এতে আমরা আমাদের ধর্ম ইসলামকে কতটা উপরে নিচ্ছি বা নিচে আনছি, তা আমার বোধগম্য নয়। আশা করি, আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করব। তারপরও আমি আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের সকলের কাছ থেকে। চেষ্টা করব, নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৭  নভেম্বের ২০২০/এমএম