মো. মাহমুদ হাসান, ক্যালগেরি, আলবার্টা, কানাডা :: ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে বার এট ল করেছেন লন্ডনের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা জীবনে মেধাবী এই তরুণ, অত্যন্ত পরিশ্রমী ও বটে। একজন তরুণ তার লক্ষ্য ও সাফল্যে পৌঁছাতে যে বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়, তার সকল গুণাবলী ই তার মধ্যে প্রতীয়মান হয়। তাই তো নিজস্ব যোগ্যতায় তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবী দেশে-বিদেশে বসবাসকারী লাখ লাখ তরুণ, যুব সমাজের আইকন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দূর্নীতি, অন্যায়, অনিয়ম আর অসাম্যের বিরুদ্ধে ইস্পাত-দৃঢ় বজ্রকন্ঠে প্রচারিত তার ভিডিও গুলো যখন রেকর্ড গতিতে দর্শক সংখ্যায় মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, তার কর্মকান্ডের জনপ্রিয়তা আজ আকাশচুম্বী, ব্যক্তি গ্রহণ যোগ্যতায় তিনি অনেক জনপ্রিয় রাজনীতিককে ও হার মানিয়েছেন। প্রচারিত ভিডিও গুলোতে দর্শকদের আবেগ মিশ্রিত হাজার হাজার সমর্থন, কৃতজ্ঞতা ও সহানুভূতিশীল মন্তব্যগুলো পড়লে একদিকে সমাজের শুভ প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে যেমন ধারণা পালটে যায়, বিপরীতে অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক জাগরণের চিত্র ও মানসপটে ভেসে উঠে।
সংখ্যায় অতি নগন্য হলেও তার সামাজিক কর্ম কান্ডের তীব্র সমালোচক ও আছেন, মন্তব্য গুলো পড়লে অতি সহজে ই তা বুঝা যায়, এরা কেউ কেউ হয়তো বা ব্যক্তি প্রয়োজনে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক কে ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছেন, গোষ্ঠী অথবা সংকীর্ণ দলীয় বাসনায় আঘাত করেছেন, কেউ বা তাকে ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে শংকিত হচ্ছেন।
ব্যারিস্টার সায়েদুল হক কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি না, তবে দীর্ঘদিন থেকেই তার কর্ম কান্ডের একজন নীরব পর্যবেক্ষক। ব্যক্তি উদ্যোগে একদল উদ্যমী তরুণদের সংগে নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার জীবন যাত্রা কে সহজীকরণে ত্রিশ টি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ, অগনিত রাস্তা ঘাট সংস্কার, ছাত্র ছাত্রী দের পড়ালেখায় উৎসাহ যোগাতে নানাবিধ পুরস্কার, আর্থিক সহায়তা প্রদান, দুস্থ, অসহায় বিকলাঙ্গ মানুষ দের নির্ভরতায় ব্যারিস্টার সুমন যেন আজ এক প্রতিক পুরুষ।
তাই তো এক গরীব শ্রমজীবীর সন্তান যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হয়ে আর্থিক ভাবনায় দিশেহারা, ব্যারিস্টার সুমন তখন তার অবলম্বন হয়, রিকশা শ্রমিক তার মেধাবী সন্তান কে অর্থনৈতিক দৈন্যতাকে ভুলে সুমনের সাহায্যের প্রত্যাশায় এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়, টেম্পো শ্রমিকরা ভঙ্গুর রাস্তা সংস্কারে জনপ্রতিনিধির বারংবার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের বেদনায় সুমনের শরণাপন্ন হন, ক্ষমতাসীন দলীয় ছত্রছায়ায় চাঁদবাজী আর কমিশন প্রথা বন্ধে সুমনের উপর ই আস্থা রাখেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন অতি ব্যস্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যখন বলেন, সময় সংকীর্ণতায় গন মাধ্যম আর সোশাল মিডিয়ায় তার সুযোগ হয় না, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ও তার কোন আগ্রহ ও আস্থা নেই কিন্তু পারতপক্ষে যে কোন উপায়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এর ভিডিও গুলো দেখতে সময় বের করে নেন। এতে কি প্রতিয়মান হয় না, ব্যারিস্টার সুমন শুধু দুস্থ আর অসহায় দের আশ্রয় ই নন, বহু গুনিজন আর সৃজনশীল মানুষদের ও আকর্ষণ?
অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠ হয়ে তিনি আজ লাখ লাখ মানুষের ভালোসায় সিক্ত। পর্দা আর বালিশ কান্ডের মতো শতশত অনিয়ম আর অনাচার তুলে ধরে তিনি যেমন শান্তিকামী মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন, ফেনীর সোনাগাজীতে পুড়িয়ে মারা নুসরাতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ওসি মোয়াজ্জেমের শাস্তি নিশ্চিত করণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার সদৃঢ় ভুমিকা ও আজ প্রশংসিত।
কোভিড কালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লেজে গোবরে অবস্থা আর দূর্নীতির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রী কে কটাক্ষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্খা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘গাধা দিয়ে হালচাষ হয় না’ আবার নাসিম পুত্রের নিউইয়র্কের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অট্টালিকা দেখিয়ে দূর্নীতিবাজ দের বিরুদ্ধে ইস্পাত-দৃঢ় অবস্থান কে ই তুলে ধরে ছিলেন, কনপ্লিকট অব ইন্টারেস্টের কারণে নানা সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটরের সম্মানজনক পদটি ছেড়ে ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, কোভিড কালে বাড়ি, গাড়ি দিয়ে মানবতাকে ই তুলে ধরেছেন। দিশেহারা তরুণ প্রজন্ম যখন নীতি নৈতিকতা কে বিসর্জন দিয়ে অর্থ বিত্তে প্রলুব্ধ, ইয়াবা আর নানাবিধ মরণ নেশায় আসক্ত, ব্যারিস্টার সুমন তখন ফুটবল একাডেমী প্রতিষ্টার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথে সম্পৃক্ত করতে এক কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত।
প্রতিটি মানুষের ই একটি রাজনৈতিক দর্শন থাকতে পারে, আদর্শ আর নৈতিকতা ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে রাজনীতিবিদ হলে সমাজ ই তো লাভবান হয়। ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করেন,জাতির জনকের আদর্শকে অন্তরে ধারন করেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সাথে সক্রিয়তা নতুন কিছু নয়, তবুও সদ্য ঘোষিত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংগ সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক মনোনিত হওয়ায় হাজারো অভিনন্দনের পাশে ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় কেউ কেউ এটিকে ই তার লক্ষ্য বলে তীর্যক ব্যাঙ্গ করেছেন, আমি এসব মন্তব্যের সাথে একমত না হলেও নানাবিধ শংকায় আমিও আজ আচ্ছন্ন।
সমাজে নষ্টদের দাপট আজ সর্বজন বিদিত, লোভাতুর বিত্তশালীরা আজ রাজনীতি আর অর্থ নীতির নিয়ন্ত্রক,এমন কঠিন সময়ে আদর্শিক রাজনীতি বড় বেশী চ্যালেঞ্জিং। জাতির জনকের আদর্শের সুযোগ্য ধারক ফজলুল হক মনির স্বপ্নের যুবলীগ জাতিকে যখন আদর্শিক পথে নিয়ে আসার কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত থাকার কথা, সেই সময়ে ভ্রষ্ট নেতৃত্ব ক্যাসিনো বানিজ্য করে হাজারো কোটি টাকার মালিক হয়, পদ আর কমিশন বানিজ্য করে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি নিয়ে আরব্য উপন্যাসের সম্রাট সাজে। ‘সবাই কে কেনা যায়, শেখ হাসিনা কেনা যায় না’ কথাটি ই যেন সত্যি প্রমানিত হয়। তাই তো ওমর ফারুক চৌধুরীর মতো দাপুটে দের বিদায় দিয়ে যুবলীগ আজ নতুন সাজে।
শেখ হাসিনা যুবলীগের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তারই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ১৯৭৫ এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিয়োগান্তক ঘটনায় শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির সুযোগ্য সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ এর হাতে। এক সময়কার রাজনীতি বিমুখ,সুশীল, সদালাপী, জ্ঞানপিপাসু, অধ্যাপক শেখ পরশ শিক্ষকতা কে ই পছন্দ করতেন, তা ই তো ইস্টওয়েস্ট ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন, অন্ধকারে নিমজ্জিত যুবলীগকে বাঁচাতে, জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়তে পরশের মতো এমন সুশীল দের ই প্রয়োজন, শেখ হাসিনার এমন দাবী কে প্রত্যাখ্যান করার ন্যুনতম সুযোগ নেই বলেই শেখ পরশ আজ যুবলীগের কান্ডারী।
সদ্য ঘোষিত যুবলীগে নতুনত্ব অনেক, উজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতির উত্তরাধিকারী সাবেক ছাত্র নেতারা যেমন আছেন, ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল ব্যারিস্টার সুমন আর নিক্সন চৌধুরীর মতো প্রতিবাদী দেশ প্রেমিক ও আছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদপুরের সূর্য সন্তান জাতির জনকের রক্তের পারিবারিক উত্তরাধিকার ইলিয়াস চৌধুরীর সন্তান হয়েও, হ্রদয়ে মুক্তিযুদ্ধ আর মুজিব আদর্শকে ধারন করেও, জনপ্রিয়তার পারদে শীর্ষে থেকেও নিক্সন চৌধুরী কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হতে হয়, নিয়ত লড়াই করতে হয় আওয়ামী লীগের ই এক হাইব্রিড শীর্ষ নেতার সংগে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর জেলা প্রশাসকের মতো মানুষের সাথে কথোপকথনে, সরকারি পদধারী আমালারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতি বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করলে ও আইন তার বিপরীতে ই চলে।
এমন ত্রিশংকুল পরিস্থিতিতে ও তৃণমূল মানুষের প্রাণের স্পন্দন নিক্সন চৌধুরী নিজস্ব বৈশিষ্ট্যেই সমুজ্জ্বল থাকেন, জনগনের ভালোবাসা আর বিশ্বাসে ভর করে বন্ধুর পথে দ্রুতলয়েই এগিয়ে চলেন। প্রতিটি সংগঠন নানাবিধ বিধি বিধান আর কাঠামোতে একটি শৃঙ্খলে পরিচালিত হয়, অনেক সময় ব্যক্তির আদর্শ আর চিন্তা চেতনার সাথে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বৈপরীত্য ও দেখা দেয়, এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে নিজ মহিমায় বিকশিত নিক্সন চৌধুরী কি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে ও তার স্বাতন্ত্র্য কে বজায় রাখবেন, না কি আপোষকামিতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে হাজারো ভক্তকূলের হ্রদয় কে ই ক্ষতবিক্ষত করবেন?
ব্যতিক্রমী প্রতিভা আর নিজস্বতা নিয়ে একটি নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে সামাজিক আন্দোলনের সুচনা করে এর ব্যপ্তি কে গ্রাম গঞ্জ পেরিয়ে সারা পৃথিবীর বাংগালীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, পদ প্রাপ্তির আতিশয্যে তিনি তিনি ও কি তার ভক্তকুলকে নিরাশ করতে পারেন, পারবেন কি নিজ মেধাকে জাতির বিবেকের কন্ঠ হিসেবে প্রতিধ্বনিত করতে? নাকি দলীয় শৃঙ্খলার নোলকে তিনি ও আটকা পরে যাবেন।
জাতি আশায় বুক বেঁধেছে, বিশ্বাস করে বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে কারো ভালোবাসা ই শ্রেয়তর হতে পারে না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে তিনি তার কঠোরতার ই জানান দিয়েছেন। শেখ পরশ কে যুবলীগের চেয়ারম্যান করে তিনি যেমন ভবিষ্যতে কেমন যুবলীগ দেখতে চান, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তেমনি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আর নিক্সন চৌধুরীর মতো প্রতিবাদী আর সৃষ্টিশীল দের পুরষ্কৃত করে মুজিব কোটের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লোভী পাপিষ্ঠদের ও সাবধান করেছেন। কারো আলোতে নয় নিজস্ব মহিমায় ই সমুজ্জ্বল ব্যারিস্টার সুমন, সাধারণের ভালোবাসায় দারুণ বিকশিত ; প্রদীপ হয়ে তিনি আজীবন জাতিকে আলোকিত করবেন নাকি লোভ আর পংকিলতার সমুদ্রে নিমজ্জিত হবেন, এ সিদ্ধান্ত এখন তাকে ই নিতে হবে।
লেখক :: উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক
ক্যালগেরি, আলবার্টা, কানাডা।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৭ নভেম্বের ২০২০/এমএম





