Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  শীতকালে কোভিড -১৯ পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মাঝে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাওয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার গত এক সপ্তাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিগুলো মেনে চলায় জনগণের অনীহা, মাস্ক না পরা এবং ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘আয়েশি দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে শুরু করেছে। তারা বলেছেন যে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। কেননা আগামীতে তাপমাত্রা আরো কমে যাবে এবং করোনার বিস্তার ও মৃত্যুর হারও বেড়ে যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতি: স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, মে ও জুন মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবের চ‚ড়ান্ত সময়ে প্রতিদিন পায় ৪০০০ মানুষ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয় এবং গড়ে প্রায় ৫০০ জন মারা যান। ওই সময়ে পজেটিভের হার ছিল ২৪-২৫ শতাংশ।তবে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে , সংক্রমণের হার অক্টোবরে ১০ শতাংশে নেমে এসেছিল, তবে এখন এটি আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত ৩১ অক্টোবর, দেশে ১৩২০ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হন। শনাক্তের হার ছিল ১১.৪৫ শতাংশ। ১ নভেম্বর ১৫৬৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়, হার ছিল ১২.৫০ শতাংশ, যেখানে ২ নভেম্বর ১৭৩৬ জন শনাক্ত হন, হার ছিল ১৩.৪৭।

৩ নভেম্বর ১৬৫৯ জন শনাক্ত হন, হার ছিল ১১.৮০ শতাংশ। ৪ নভেম্বর ১০.৯০ শতাংশ হার নিয়ে শনাক্ত হন ১৫১৭ জন। ৫ নভেম্বর ১২.১০ শতাংশ হার নিয়ে শনাক্ত হন ১৮৯১ জন, ৬ নভেম্বর ১০.৮৬ হার নিয়ে শনাক্ত হন ১৪৬৯ জন এবং ৭ নভেম্বর ১১.২৯ শনাক্তের হার নিয়ে শনাক্ত হন ১২৮৯ জন।

তাপমাত্রা হ্রাস: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেছেন, অক্টোবরের শেষে বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর-পশ্চিম দিকের বাতাসের ফলে গত সপ্তাহে দেশের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শীত পুরোদমে শুরু হতে পারে এবং বেশ কয়েকটি শৈত পবাহ এ সময় দেশে আঘাত হানতে পারে। সাধারণত, জানুয়ারি বাংলাদেশের শীতলতম মাস এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়া ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে।

করোনা বৃদ্ধির পেছনে কারণ: ইউএনবির সাথে আলাপকালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক বলেন, করোনা ভাইরাস আবারো বাড়ার পেছনে কারণ প্রধানত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদাসীনতা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক পরতে লোকদের উদাসীনতা।

তিনি মনে করেন, ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে তাপমাত্রা হ্রাসই প্রধান কারণ নয়। ‘যদি কোনো কার্যকর পতিরোধ ব্যবস্থা না থাকে তবে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আমাদের দেশে এখন সেটাই ঘটছে।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন যে শীতকালীন আবহাওয়াতে ভাইরাসে পাণহানি অবশ্যই বাড়বে কারণ এই সময়ে লোকজন ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া এবং হাঁপানির মতো অনেক ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ‘যদি এমন রোগে আক্রান্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয় তবে তার জীবন বাঁচানো কঠিন হবে। সুতরাং, মৃত্যুর হার বাড়তে পারে।’

তিনি বলেন, সরকারের উচিত জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো যেমন মাস্ক পরা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানো এবং যেকোনো সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি আসার পরে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে উতসাহিত করা।

‘মানুষ যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশিকা মেনে না চলে, তবে তাদের বাধ্য করতে সরকারকে আইন প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকবে,’ ডা. মোজাহের সতর্ক করেন।

এছাডা তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আগত লোকদের বিমানবন্দর ও বন্দরে স্ক্রিনিং করতে হবে এবং তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে। ‘বিদেশ থেকে আসা ভাইরাস রোধ করার জন্য আমাদের এখনই কঠোরভাবে এটি করা উচিত।’

করোনার প্রথম ঢেউ এখনো আছে: ডা. মোজাহের বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ এখনো চলছে বলে দেশ শিগগিরই দ্বিতীয় ঢেউ দেখতে পাবে না। ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, কারণ আমাদের প্রথম ঢেউই এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১১  নভেম্বের ২০২০/এমএম