Menu

আশরাফুর রহমান ক্যালগেরি, আলবার্টা, কানাডা :: ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে খন্দকার মোস্তাক কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় ইতিহাসের এক জঘন্যতম অধ্যায়ের সুচনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৩শে আগষ্ট জাতীয় চার নেতা সহ ২৩ জন দেশপ্রেমিক মুক্তিযাদ্ধা কে গ্রেফতার করে ঢাকা কেদ্রীয় কারাগারে বন্দি করে।

রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা আর ক্ষমতার বাসনা হার মানে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কুচক্রীদের নিখুঁত পরিকল্পনার কাছে। পাল্টা অভ্যূথানকরি খালেদ মোশাররফের দল যখন বঙ্গভবনে খন্দকার মোস্তাকের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত, তখন আলোচনার আড়ালে খন্দকার মোস্তাক সময় নিয়ে, ফারুক-রশিদ কে সুযোগ দিলো তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের।নীল নকশার অংশ হিসাবে ফারুক-রশিদের দায়িত্ব কোনরকম ক্যু এর চেষ্টা হলে, জাতীয় চার নেতা কে হত্যা করা হবে জেলখানায়।

৩ নভেম্বর। ইতিহাসের আরো একটি কলঙ্কময় রাত। মধ্য রাতে জেল গেটে উপস্থিত সেনা পোশাকে রিসালদার মোসলেহ উদ্দীনের নেতৃত্বে চার/পাঁচ জনের দল। বঙ্গভবন থেকে একটি ফোন আসে জেলার এর কাছে। পরিষ্কার নির্দেশ, ওরা যা করতে চায় করতে দাও। ঘাতক দল জেলের মধ্যে প্রবেশ করে। সাথে সাথে জেলে পাগলা ঘন্টা বেজে উঠল। ভোর রাত ৪টার দিকে একে একে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপটেন মুনসুর আলী ও এম কামরুজজামান কে ১নং কক্ষে আনা হয়।

ঘাতকের নিকট থেকে ৫৮ টি গুলি করে এই চার সুর্য সন্তানের শরীরে। নিমেষেই চারটি দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। ঘাতকেরা বের হয়ে যায়। মুনসুর আলী তখনও বেঁচে আছেন, পানি পানি করে চিৎকার করে উঠলেন। এই খবর পেয়ে, জেল গেট থেকে ফিরে আসে ঘাতকেরা। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফিরে যায় বিভৎস উল্লাসে। রক্তাক্তক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ চারটি পড়ে থাকে কারাগারের মেঝেতে। রক্ত গড়িয়ে পড়ে, মেঝে থেকে ড্রেন হয়ে বুড়িগজ্ঞায়, সবুজ জমিনে আবারও রক্তের দাগ।

নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞের পরদিন ৪ঠা নভেম্বর তৎকালিন কারা উপপরিদর্শক কাজী আব্দুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।ঘটনার পরদিন মামলা হলেও তদন্ত থেমে ছিল ২১ বছর। ১৯৯৬ সালে বিচার কার্য শুরু হয়। ২০০৮ এর আগষ্টে চুড়ান্ত রায়ে ৩ জনের মৃত্যু দন্ড, ১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জন কে বেখুসুর খালাস দেন আদালত। দন্ডিত অধিকাংশ আসামী এখনও পলাতক বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে।চার নেতার পরিবারের ও সচেতন বিশ্ববাসীর দাবি, আসামীদের দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে এনে দন্ড কার্যকর করা হোক।

লেখক : আশরাফুর রহমান, ক্যালগেরি, আলবার্টা, কানাডা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৩ নভেম্বের ২০২০/এমএম