বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: পুরান ঢাকার জুরাইনে পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি ঢাকা ওয়াসা। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা।
প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত বলেও জানান তারা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত গণশুনানি কর্মসূচিতে ভুক্তভোগীরা এসব কথা জানান।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২৫ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার এমডিকে দূষিত পানির শরবত খাওয়াতে গেলে এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়াসা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্টো সংস্থার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা বলেন, বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, ধাপে ধাপে কঠোর হবে আন্দোলনের গতি। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা-বিপত্তিতে আমরা দমে যাব না। প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান ওই এলাকার ভুক্তভোগীরা।
অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. জুরাইনসহ যেসব বাসাবাড়ি, এলাকায় পানি নেই এবং বিষাক্ত নোংরা-ময়লা পানি আসছে সেসব বাসাবাড়ি বা এলাকায় দ্রুত সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে; ২. ওয়াসার দূষিত পানির কারণে পুরান ঢাকার জুরাইন, শ্যামপুর, মুরাদপুর, দনিয়ায় যারা নানা ধরনের রোগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ৩. দূষিত পানি সরবরাহ করেও ওয়াসা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল আদায় করেছে; সেসব বিল পরিশোধ করতে হবে। আর যতদিন ওই এলাকায় ওয়াসা সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারবে না, ততদিন এলাকাবাসী ঢাকা ওয়াসাকে কোনো বিল পরিশোধ করবেন না; ৪. বছরের পর বছর নোংরা ও দূষিত পানি সরবরাহ করার জন্য তদন্ত করে ওয়াসা সংশ্লিষ্টদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; ৫. অসত্য বক্তব্যের জন্য ওয়াসার এমডিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ওয়াসার এমডিকে পদত্যাগ করতে হবে।
জুরাইনের বাসিন্দা মো. রিফাত বলেন, জন্মের পর থেকে জুরাইনে বসবাস করছি। ছোটবেলায় এ এলাকার ট্যাবের পানি নিজেরা সরাসরি খেতাম। কখনও অসুখ-বিসুখ করেনি, কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ এলাকার পানির মান খুবই খারাপ হয়েছে। এ পানি খেয়ে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। তিনি বলেন, আমার বাবা ও মায়ের কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ওয়াসার দূষিত পানি পান ও ব্যবহারের কারণেই তার বাবা-মায়ের কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গণশুনানিতে সংহতি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সুপেয় পানি নাগরিকদের নার্য্য অধিকার। ঢাকা ওয়াসাকে তার গ্রাহকদের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তিনি ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলোর চুক্তিপত্র বাংলায় অনুবাদ করে নগরবাসীর সামনে প্রকাশ করার দাবি জানান।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ঢাকা ওয়াসা নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে- এ দায় ওয়াসার স্বীকার করতে হবে। একবারে সব এলাকার সমস্যার সমাধান করতে না পারলে এলাকাভিত্তিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। আর জুরাইনের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সমাধান করতে পাগলা পয়ঃশোধনাগার এলাকাকে বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন এ প্রকৌশলী। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নিরাপদ পানি বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেয়ার চিন্তা ভেঙে দিয়েছে এডিবি, বিশ্বব্যাংকগুলোর মতো ঋণদানকারী সংস্থা। ওয়াসার এমডিকে নিয়ে বিশাল গুণগান কারা গাইছে, এডিবি। আবার এডিবির তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য প্রচার করছেন ওয়াসার এমডি। তিনি বলেন, যারা আমাদের এই পানিতে অনভ্যস্ত করে বোতলের পানিতে অভ্যস্ত করতে চায়, পানির বাণিজ্যিকীকরণ নিশ্চিত করতে চায়, তাদের প্রকল্পই বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। এ জন্য তারা আমাদের নিরাপদ পানি দিতে ব্যর্থ হয়।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সুপেয় পানি নাগরিকের অধিকার। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে নাগরিকদের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, দূষিত পানি সরবরাহের দায় ওয়াসাকেই নিতে হবে। কেননা, পানি ও পাইপলাইন দুটোই ওয়াসার। পানির দুটো পথেরই মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াসাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ২৫ এপ্রিল ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়াতে যাওয়ার পর থেকে ওয়াসার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা আমাদের নানাভাবে হয়রানি করছে। এসব কার্যক্রম থেকে ওয়াসাকে সরে আসতে এবং নগরবাসীকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ মে ২০১৯/ এমএম