Menu

আলমগীর দারাইন, ক্যালগেরি, কানাডা :: আসন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই কানাডার মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। যে কোন নির্বাচনের আগেই এই রকম মনোভাব দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে কেউ বিজয়ী হোক না কেন কানাডার অর্থনীতি তথা জীবন যাত্রায় অনেকটাই প্রভাব পড়বে।

দুটি দেশের মধ্যে পৃথিবীর বৃহৎ ৫৫২৫ মাইল সীমানা বিস্তৃত এবং প্রতিদিন দুটি দেশের মধ্যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে পন্য আমদানি রপ্তানি হয়। লক্ষ লক্ষ কানাডিয়ান-আমেরিকান কার, বাস, রেল, বিমানে করে প্রতিদিন সীমানা পারাপার হয়, কেউ বেড়াতে আসে, কেউ শপিং, কেউ বা কাজের জন্য আসে।রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক যে কেউ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসুক না কেন কানাডার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই আছে।

দুটি দেশের অর্থনীতি সম্পুরক ও একে অপরের উপর নির্ভরশীল । কিছু দিন পূর্বে সি বি সি সংবাদ পর্যালোচনায় ৫ টি বিষয় অধিক গুরুত্ব পেয়েছিল এরমধ্যে এনার্জি , প্রতিরক্ষা, বানিজ্য, ইমিগ্রেশন, ও চায়নার সঙ্গে সম্পর্ক। আমি একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান এবং আলবার্টা প্রদেশে বসবাস করি। তাই এনার্জি ও ইমিগ্রেশন আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।

এনার্জি ও পরিবেশ দূষণ- বাইডেন জয়লাভ করলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আলবার্টা প্রদেশ। দীর্ঘদিন ওবামা প্রশাসনের বাধা দেওয়া ও মামলার জটিলতার কারনে কিস্টোন এক্স এল পাইপলাইন বন্ধ ছিল, কিছু দিন হলো কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আলবার্টার করদাতাদের ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন তিনি ক্ষমতায় এলে অধিক তেল উত্তলন, অধিক পাইপ লাইন ও কম রেগুলেশনের নিশ্চিত করবেন। পক্ষান্তরে বাইডেন জয়ী হলে তিনি কিস্টোন এক্স এল পাইপলাইন বাতিল করে দিবেন । আলবার্টার তেলকে কিছু পরিবেশবাদী নোংরা তেল বলে ভুল ধারনা দিয়ে আসছে। বাইডেন বলেছেন তিনি অধিক পরিমান বিনিয়োগ করবেন ক্লীন এনার্জির পিছনে। যেমন সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি।

এর ফলে আলবার্টার তথা কানাডার অর্থনীতির উপর আঘাত আসবে । ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জির এক পরিসংখ্যান মতে ২০২০ সালে আমেরিকা ২.৪৮ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে। সেখানে কানাডা থেকে আমেরিকা পেট্রলিয়াম প্রডাক্ট আমদানি করবে ১.৫১ বিলিয়ন ব্যারেল। আলবার্টার অর্থনীতি তেল, গরুর মাংস, শুয়োরের মাংস, কেনোলা তেল ইত্যাদি রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। আমাদেরকে আমেরিকা ছাড়াও মুক্ত বাজার অর্থাৎ বহির বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে।

ইমিগ্রেশন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয় তিনি অস্থায়ী ভিসা আরও সীমিত করবেন ও যে সকল মানুষ দেশে ছেড়ে জীবনের ভয়ে মানবিক কারনে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিতাড়িত করবেন, ফলে কানাডার সীমান্তে আরও বেশি চাপ পড়বে।

বেশি রিফিউজি কানাডায় আশ্রয় চাইবে ফলে কানাডার অর্থনীতির উপর চাপ পড়বে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেও এইচ -১ বি, এইচ-২ বি, জে এবং এল-সহ নানা ধরনের ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। অন্য দিকে বাইডেন জয়ী হলে এইচ -১ বি আবার চালু করবেন, মানবিক কারণে আগত মাইগ্রেন বা রিফিউজি বেশি নিবেন, এবং যেসব দেশের ট্রাভেল ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করেছে তা আবার চালু করবেন। ইমিগ্রেশন, অস্থায়ী কাজের ভিসা ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার ভিসার জন্য বাইডেনের নীতি ভালো ইতিবাচক ।

আন্তর্জাতিক বানিজ্য- কানাডা অধিক পরিমান আমেরিকার বাজারের উপর নির্ভরশীল। এই বছর আমেরিকায় ৪৪৭ বিলিয়নের উপর রপ্তানি হবে বলে ধরা হচ্ছে । বাকি ১৪৬ বিলিয়ন ডলার বিশ্বের অন্যান্য সব দেশে রপ্তানি করবে। স্পটউড লাম্বারের ক্ষেত্রে পরিস্কার কিছু বুঝা যাচ্ছে না তবে আমেরিকার ব্যবসানীতি খুব যে বদলে যাবে তা আশা করা যায় না। এলোমোনিয়াম, স্টিল এর উপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন যে অন্যায্য শুল্ক বসিয়েছে তা বাইডেন কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি আমেরিকা প্রথম, পক্ষান্তরে বাইডেন বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশের অখুশি করে কিছু করবেন বলে মনে হয় না।

চায়নার সঙ্গে সম্পর্ক – প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হলে চায়না ও আমেরিকার চলমান বানিজ্য যুদ্ধ সূদুর প্রসারিত হবে এবং কানাডা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে কানাডা ট্রাম্প প্রশাসনের আনিত ওয়ারেন্টে চায়নিজ টেলিকম এক্সিকিউটিভ বোর্ডের পরিচালক মেং ওয়ানজহুকে ভ্যাকুভারে এরেস্ট করে।

চায়না পাল্টা প্রতিশোধ হিসাবে কেনোলা তেল, শুয়োরের মাংস , গরুর মাংসের আমদানি বন্ধ করে ছিল এবং তিনজন কানাডিয়ানকে চায়না এরেস্ট করে কারাদণ্ড দিয়েছে। অন্য দিকে বাইডেন জয়লাভ করলে সে বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশের ব্যাপারে সমস্যা গুলো ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবে।

প্রতিরক্ষা – পৃথিবীর সবথেকে বড় সীমানা কানাডা ও আমেরিকার মধ্যে। উভয় দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কানাডার আর্টিক প্রতিরক্ষা NORAD( North American Aerospace Defence Command ও NATO (North Atlantic Treaty Organisation) জোট ভুক্ত দেশ গুলোর উপর অধিক খরচের চাপ আসতে পারে। এই সকল দেশগুলো তাদের জি ডি পির ২% হারে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করে থাকে। ট্রাম্প হয়তো বেশি খরচের অজুহাতে NATO ত্যাগ করতে পারে। পক্ষান্তরে বাইডেন জয়ী হলে NATO জোট ভুক্ত দেশগুলো উপর খরচের চাপ তেমন একটা পড়বে না বলে আমার ধারণা ।

সর্বোপরি এতোটুকু বুঝা যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের থেকে বাইডেন এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হলে পৃথিবী ও কানাডার জন্য ভালো হবে। পৃথিবী এখন নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে । রাশিয়া ও চায়নার প্রভাব ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে।
সকলের প্রতীক্ষা এখন একটা সুপার পাওয়ার — যার কথা বেশির ভাগ দেশ শুনবে ও মানবে। আর সেই সাথে পৃথিবীতে স্থিতিশীলতা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে।

লেখক: আলমগীর দারাইন, কলামিস্ট, ক্যালগেরি, আলবার্টা, কানাডা

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৮ অক্টোবর ২০২০/এমএম


Array