Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে আবির্ভাবের পর করোনাভাইরাস অতিদ্রুত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাস কী বেগে ছড়িয়ে পড়ছে তা বোঝাতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি বুলেট ট্রেনের গতিতে সুনামির মতো পৃথিবীর নানা দেশে আছড়ে পড়েছে।

রোগটির মাত্রা ও প্রভাব কতটা ভয়ংকর তা বিশেষজ্ঞদের কথা থেকে অনুমান করা যায়। করোনাভাইরাস প্রাণিদেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে। প্রাণিবিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রাণিদেহে যেসব রোগ দেখা দেয় তার অর্ধেক মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

ইতোপূর্বে সার্স, মার্স, ইবোলা, এইডস ইত্যাদি রোগ প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এ জন্য মানুষের অপরিণামদর্শী কৃতকর্মকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, পৃথিবীর সম্পদকে নিষ্ঠুরভাবে উজাড় এবং ক্রমাগত প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ করার ফলে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দিয়েছে। মানুষের অনাচার ও হঠকারী কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে প্রকৃতি যেন আমাদের বলছে, যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামো!

বুদ্ধিমত্তা, শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মানুষ পৃথিবীর যে কোনো ক্ষতিসাধনকে বৈধ বলে মনে করছে। পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সব প্রজাতির প্রাণী, এমনকি অনুজীবের টিকে থাকা অপরিহার্য, তা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। নানা অজুহাতে মানুষ নির্বিচারে প্রাণী হত্যা করছে।

আমরা পাহাড় কাটছি, সমুদ্রে শহর বানাচ্ছি, নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছি, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরছি, বনজঙ্গল কেটে উজাড় করে মানববসতি গড়ে তুলছি। মানুষ যদি সবকিছু দখল করে নেয়, তবে অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী বা জীব কীভাবে টিকে থাকবে? কোথায় বাস করবে তারা?

বাণিজ্যিক মোহ ও অর্থলোভে মানুষ বিশ্বের জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে প্রাণী ও ফসলকে হাইব্রিডে পরিণত করছে। ফলে ফসলের চক্র এলোমেলো হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি নির্বাচিত প্রাণী ও শস্য। অজৈব সার ও রাসায়নিক কীটনাশকের লাগামহীন ব্যবহারে মাটি প্রাণশূন্য হয়ে চিরতরে অনুর্বর হয়ে পড়ছে। গোটা পৃথিবীর মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

পৃথিবীতে যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে তার সিংহভাগই জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর। ফলে প্রতিদিন বিপুল জ্বালানি পুড়ে তৈরি করছে অপরিমেয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। উন্নত বিশ্বে স্থাপিত বড় বড় কলকারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া ও কার্বন। পৃথিবীব্যাপী বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার কারণে এই বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ হচ্ছে না পুরোপুরি।

ফলে এগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এর ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি অবাধে পৃথিবীতে এসে পড়ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে এবং নানা ধরনের রোগব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারকন্ডিশন যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর থেকে নির্গত হচ্ছে ক্ষতিকর সিএফসি গ্যাস। এই গ্যাস পৃথিবীর উপরিভাগে অবস্থিত ওজোন স্তর ফুটো করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরল রাসায়নিক পদার্থ অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি খাল-বিল ও নদী-নালায় পড়ছে, যা শেষে সমুদ্রের পানিতে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। ফলে জলে থাকা প্রাণিকুলের জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব যন্ত্র উদ্ভাবন ও তার ব্যাপক ব্যবহারের প্রতি গোটা বিশ্বের মানুষকে গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে।

অতি ভোগবাদের কারণে আমাদের চারপাশে জঞ্জালের পাহাড় গড়ে উঠছে। প্রতি বছর পৃথিবীর মানুষ কোটি কোটি টন জঞ্জাল উৎপাদন করছে, যার নগণ্য অংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে। অবশিষ্ট বিরাট উচ্ছিষ্ট যত্রতত্র পড়ে থাকছে, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানে তৈরি পণ্যসম্ভার গৃহ ও কর্মস্থলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফলে নতুন নতুন স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কত কম পণ্যসম্ভারে জীবন নির্বাহ করা যায়, তা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। সময় নষ্ট না করে দ্রুত সহজ, সরল, প্রাকৃতিক জীবনযাপনে পুনরায় ফিরে যেতে হবে আমাদের। মানবজাতির স্বার্থেই এই অনিন্দ্যসুন্দর গ্রহকে, এর প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০/এমএম


Array