প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বঙ্গীয় ব-দ্বীপে হাজার বছর ধরেই নদীভাঙন এক অনিবার্য বাস্তবতা। পৃথিবীর বৃহত্তম এ ব-দ্বীপের নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ভাঙন। অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়েছে এই ভাঙনে। কেউ হারিয়েছেন বসতভিটা ও পরিবার, কেউ জীবিকা। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। চোখের পলকে স্কুলভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার দৃশ্য অবলোকন করেছে দেশবাসী।
এ দেশের প্রায় সব নদীর উৎস উজানের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে চাপের মধ্যে থাকা স্রোতস্বিনী নদী পলল সমভূমিতে এসে এমনিতেই আড়মোড়া ভাঙতে চায়। স্রোত যখন প্রবল হয়, ভাঙন তত বাড়ে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও শেষে বিভিন্ন জনপদ ভাঙনের মুখে পড়ে। নদীভাঙনকে সাধারণভাবে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে এ দেশে যেভাবে একই এলাকায় বছরের পর বছর নদীভাঙন ঘটে এমন নজির আর কোনো ব-দ্বীপে আছে বলে মনে হয় না। চার দশকে বাংলাদেশ একটি আস্ত জেলার চেয়েও বেশি ভূমি নদীতে হারিয়েছে। একদিকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, আরেক দিকে নদীভাঙন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে ফেলেছে।
সিইজিআইএস’র তথ্যানুযায়ী, নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে যারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ লোক অর্থের অভাবে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করতে না পারায় গৃহহীনে পরিণত হয়। দেশে প্রায় ৫০ লাখ গৃহহীন ভাসমান মানুষ রয়েছে এবং প্রতি বছর এদের সংখ্যা গড়ে লক্ষাধিক করে বাড়ছে।
এসব মানুষ সাধারণত বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত রেললাইন, চর, খাস জমি ইত্যাদি স্থানে ভাসমান জীবনযাপন করে। অভাবের তাড়নায় এরা শহরমুখী হয় এবং শহরের বস্তিগুলোয় বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সৃষ্টি করে।
অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কারণেও নদীভাঙন ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীর গতি রোখার চেষ্টার কারণে নদীভাঙন ঘটতে পারে। অনেক সময় নদীর মাঝখান দিয়ে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করা হয়, যা ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে। এটি যদি একান্ত করতেই হয় তাহলে আগে নদীর পাড় যথেষ্ট মজবুত করে নিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টাও নদীভাঙনের বড় কারণ।
শহরাঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় খাল বা নালা দখল করে ফেলায় কিংবা অন্য কোনো কারণে সেগুলো বন্ধ করে ফেলায় বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপর পানির চাপ অনেক বেড়ে যায়। পানির অতিরিক্ত প্রভাবের চাপ তখন পড়ে পাড়ে। ফলে ভাঙন দেখা দেয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেখেছি, নদীর পাড়ে বেশ খানিকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভেতরের দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
ফলে যে অংশ বাঁধের বাইরে থাকে সেই অংশ অরক্ষিত থাকে এবং অনেক সময় ভেঙে যায়। নদীর পাড়ের ঘাস, কাশবন ও অন্যান্য বন উজাড় করে ফেললে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পানির তোড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন বা ড্রেজিংয়ের কারণেও ক্ষতির শিকার হয় নদী। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নদীভাঙন রোধে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ফলে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবে তা তেমন সহায়ক হয় না।
প্রকৃতির বিরূপ আচরণ আমাদের পক্ষে বন্ধ করা কঠিন। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলো রোধ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে নদীভাঙনের শিকার এলাকাগুলোর জন্য বরাদ্দ আরও বেশি দেয়া যেতে পারে। বিদেশি অনেক সাহায্য সংস্থা অপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। দেশি অনেক সংস্থাও এরকম করে।
এগুলো সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে করা গেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। নদীতে চর জেগে উঠলে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষম বণ্টন করা দরকার। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করতে পারে।
আফজাল তাহফি রোহান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৫ আগস্ট ২০২০/এমএম





