বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: এই মধ্য বৈশাখে আকাশে লম্বালম্বিভাবে অবস্থান করছে তাতানো সূর্য। খরতাপে পুড়ছে রাজধানী-নগর-লোকালয়-প্রান্তর। গত কদিনে তাপমাত্র কেবল বেড়েই চলেছে। ঘরে-বাইরে অস্বস্তি। তীব্র খরতাপে হাঁসফাঁস করছেন শহরবাসী। নিদাঘের তপ্ত বাতাস আগুনের হলকার মতো শরীর ছুুঁয়ে যাচ্ছে। তেষ্ঠায় শুকিয়ে যাচ্ছে বুক। তাতানো রোদ্দুর আর হাওয়ারুদ্ধ প্রকৃতিতে নেতিয়ে পড়ছে গাছ-গুল্ম-লতা। প্রাণীকুল বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়ছেন। দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগবালাই। কর্মজীবী মানুষ ঘরের বাইরে অতিরিক্ত ঘাম ঝরিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।
ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হচ্ছে। কাঠফাটা রোদের তেজ আর গরমের দাপটে কার্যত নাকানিচোবানি অবস্থা। বৃষ্টিহীন রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষ কায়মনে বর্ষামঙ্গলের প্রার্থনা করছেন। কোন কোন জেলায় আকাশে মেঘ-রোদ্রের লুকোচুরি খেলা চললেও বৃষ্টির দেখা নেই। মৌসুমি বায়ু এখনো দুর্বল। আবহাওয়া দফতর তাদের পূর্বাভাসে বলছে, এই দাবদাহ আরো দুই দিন থাকতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয়বাস্পের পরিমাণ বেশি থাকায় প্যাচপ্যাচে গরমে ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক ইত্তেফাককে বললেন, এই গ্রীস্মে গড়পড়তা তাপমাত্রা সীমাহীন নয়। তবে বাতাসে অতি আর্দ্রতার প্রভাবে তাপে অস্বস্তি বাড়ছে। তাপমাত্রার চেয়ে গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। গতকাল রবিবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গরমের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে অনেক বেশি। তার কারণ গতকাল বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৬৩ ভাগ। এই আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়লে দাবদাহও বাড়বে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, প্রকৃতি দ্বৈত আচরণ করবে। তাপমাত্রা কমার পর কালবৈশাখী ঝড় শুরু হবে। বৈশাখের পর প্রকৃতির বৈরিতা কিছুটা কমতে পারে। গতকাল রাজশাহীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল দুপুরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গভীর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত গরম অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, শুক্রবার রাত থেকে গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ৪টি সমুদ্র বন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভারত মহাসাগর ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণি গতকাল সন্ধ্যায় মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে দেড় হাজারেরও বেশি কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সেটি ভারতের উড়িষ্যার দিকে যাবে বলেই ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে ঝড়টি আরো এগিয়ে এলে তার প্রভাবে বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাত হতে পারে, কিন্তু সেজন্য আরো কয়েকদিন লাগবে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, ট্রপিকাল সাইক্লোন ‘ফণি’। ৩ মে বোঝা যাবে এটা কোথায় আঘাত করবে। প্রসঙ্গত: আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় এযাবত কালের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বিতীয় দফায় ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে গতকাল সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিলো তেঁতুলিয়া ও ডিমলায় ২১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ইশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, যশোরে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুমারখালীতে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে ৩৪ ডিগ্রি, সিলেটে ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, রংপুরে ২৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, খুলনায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং বরিশালে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৯ এপ্রিল ২০১৯/ এমএম