Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: গণমাধ্যমে অনেক নেতিবাচক খবরের মাঝে কিছু ব্যতিক্রমী খবর আমাদের আশাবাদী করে তোলে। গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রথমে খবরটি চোখে পড়ে যুগান্তর পত্রিকায়। এরপর ২৫ এপ্রিল সমকালের প্রথম পাতায় খবরটি ফলোআপ হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

শিরোনাম ছিল ‘আলোচিত সেই ভিক্ষুক, দশেরে কিছু দেওয়ার লইগ্যা ধনী অয়া লাগে না’। হতদরিদ্র ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন তার সারা জীবনের সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা স্থানীয় ইউএনও’র করোনা তহবিলে দান করেছেন। এই সংকটকালেও একজন ভিক্ষুকের এ দান করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার এই মহৎ উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

এমনকি নাজিম উদ্দিনের এ মহৎ দৃষ্টান্ত নাড়া দেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। তিনি নাজিম উদ্দিনের পাশে দাঁড়ান। ঘরবাড়িহীন এই ভিক্ষুককে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা প্রদান ছাড়াও তার জন্য ঘর বানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। স্থানীয় ডিসিও নাজিম উদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা সাহায্য দেন।

ভীষণ দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটছিল ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের। ৭-৮ বছর ধরে ভিক্ষা করছিলেন। এর আগে অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। তবে ড্রেনের ভেতরে পড়ে গিয়ে তার এক পা ভেঙে গেলে কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাধ্য হয়ে এলাকায় ভিক্ষা শুরু করেন। কয়েক বছর আগে একটি ভবন থেকে পড়ে তার স্ত্রীর পাও ভেঙে যায়। ফলে গভীর অন্ধকার নেমে আসে তাদের সংসারে।

শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের মহানুভবতা দেখে আমরা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হই। এমন মহৎ গরিব মানুষও যে দেশে আছে তা জেনে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। এর বিপরীতে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ত্রাণের চাল চুরির খবর আমাদের মর্মাহত করে। গত ৯ জুলাই একটি সংবাদপত্রে ‘গরিবের টাকায় ধনীর ভাগ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ দেয়ার সরকারি উদ্যোগ দুর্নীতির কারণে এখনও সফল হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গরিবের তালিকায় নাম উঠেছে ধনীদের!

ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন যেখানে তার জীবনের সব সম্পদ করোনায় দুর্গত মানুষের জন্য হাসিমুখে দিয়ে দিলেন, সেখানে এর বিপরীতে আমরা দেখছি, সারা দেশে ত্রাণের চাল এবং সরকারি অনুদানের টাকা চুরির হিড়িক। কোন ধরনের বাংলাদেশ চাইব আমরা? ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিলেন টাকা বা সম্পদই সবকিছু নয়, মানুষ যত ক্ষুদ্রই হোক কিংবা দান-অনুদান যত অল্পই হোক, ইচ্ছা করলে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।

অসহায় মানুষের মাঝে অকাতরে টাকা বিলিয়ে যাওয়া এবং দানের হাত প্রসারিত করার মাঝেই প্রকৃত সুখ ও আনন্দ নিহিত। সর্বাবস্থায় আমরা যেন অসহায় মানুষের পাশে থাকি, যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে। এটাই মানবতার দাবি। ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন সততার এই খরার সময়ে ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন, তা আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে দিক। তার এই ত্যাগ উদাহরণ হোক ধনী-গরিব সবার জন্য। আসুন, আমরা ত্যাগী হই এবং মানবিক চেতনা ধারণ করি।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২১ জুলাই ২০২০/এমএম


Array