বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: অপরাধ যেখানেই হোক আর যে দেশেই হোক, মানুষ যেন বিচার প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে পারে সেই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।
আজ ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। মানবতাবিরোধী অপরাধসহ যে কোনো ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দেশে দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি।দেশের প্রত্যেক মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করাই এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য।
বিশ্বের নানা স্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোকে যেন বিচার প্রক্রিয়ার সম্মুখীন করা যায় সে জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই বিশেষ আদালতটির সদর দফতর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে।
তবে যে কোনো দেশেই এই আদালতের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। বিশ্বব্যাপী সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর বিচার প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করতে অনেক দেশেই বিচ্ছিন্নভাবে নানা আন্দোলন হয়েছে।
তবে এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা মোটেই সহজ ছিল না। এর ধারণা আর প্রেক্ষাপটও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ রকম একটি আদালত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে নুরেমবার্গ ও টোকিওতে সংঘটিত হওয়া অপরাধের বিচারকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এসব ঐতিহাসিক ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। গণমানুষের প্রত্যাশাকে আশার আলো দেখিয়ে দিতে সাহায্য করে।
এসব ঘটনা ও সাফল্য ‘রোম সংবিধি’র মতো চুক্তি প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরিতে সাহায্য করে। শুরুতে ১২০টি দেশ ভোটের মাধ্যমে ‘রোম সংবিধি’ অনুমোদন করে। প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ এই চুক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রোম সংবিধির সঙ্গে একাত্ম হয়। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী।
কারণ ‘রোম সংবিধি’র ওপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর চলমান বিচার প্রক্রিয়া এই চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর বিচারের জন্য গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করা এর উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।
এর আওতায় ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, তাদের বিচার করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ।
ন্যায়বিচারের একটা বড় উদাহরণ বাংলাদেশ-মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি। দ্য হেগের সালিশি আদালতের রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়। এই রায়ে বাংলাদেশ ন্যায্য প্রাপ্য বুঝে পায়।
সুব্রত বিশ্বাস : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৭ জুলাই ২০২০/এমএম





