Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: দেশ ও জাতি প্রাপ্য সম্মান না দিলেও কিছু মানুষ নীরবে কাজ করে যায়। দেশের দুর্দিনে অনেকে ঘরে বসে থাকলেও কিছু মানুষ দেশের জন্য কাজ করে চলেছে।এমনই একদল মানুষ হল বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের কারিগর ফার্মাসিস্টরা। এই করোনা দুর্যোগেও একটি দিনের জন্য তারা কাজ বন্ধ করেননি।

খোদ আমেরিকা যখন রেমডেসিভিরের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল, তখন ফার্মাসিস্টদের অবদানের কারণে জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদন করে বাংলাদেশ।এতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উঠে আসে বাংলাদেশের নাম। কিন্তু এ অর্জনের পেছনের কারিগর ফার্মাসিস্টরা নিজের দেশে কতটুকু স্বীকৃতি পাচ্ছেন?

করোনাকালে আমাদের বাজারে অনেক ধরনের পণ্যের সংকট দেখা দিলেও ওষুধের তেমন সংকট দেখা দেয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফার্মাসিস্টরা কাজ করে যাওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। করোনাকালেও দেশের মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ জোগানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ফার্মাসিস্টরা।

এ কাজ করতে গিয়ে অনেক ফার্মাসিস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের একজন অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট মনোরঞ্জন পাল মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। প্রায় দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ১১ জুন না ফেরার দেশে চলে গেছেন তরুণ ফার্মাসিস্ট ফজলে রাব্বী।

আমরা তাদের কোনো স্বীকৃতি দিতে পারিনি। তাদের আমরা করোনাযোদ্ধা বলে অভিহিত করতে পারিনি। কারণ, সরকার ঘোষিত করোনাযোদ্ধাদের তালিকায় ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিকদের নাম থাকলেও ফার্মাসিস্টদের নাম নেই!

যারা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে, তাদের সম্মান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দেশে ফার্মাসিস্টরা এখনও অচেনা। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে দেয়া সব ওষুধের সঠিক ব্যবহারবিধি, বাড়িতে সংরক্ষণ পদ্ধতি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় ভালো করে বুঝিয়ে দেয় একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট।

অথচ আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোয় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অভাবে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন পুনঃনিরীক্ষণ, ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টারেকশন, ওষুধের ডোজ নির্ধারণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানানো কিংবা ওষুধের ভুল প্রয়োগ ধরার মতো কেউ নেই।এমনকি হাসপাতালে দেড় হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের গেজেট প্রকাশিত হলেও নিয়োগ নেই! আর এভাবেই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।

ফার্মাসিস্টরা কখনও সরকারি প্রণোদনা আশা করেন না। তারা আশা করেন -তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা। পাশাপাশি তারা চান মানবসেবার আরেকটি ক্ষেত্র হাসপাতালে কাজ করে দেশের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে।আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবে। সেই সঙ্গে আরও আশা করি, দেশের মানুষের জন্য ওষুধ উৎপাদন করতে গিয়ে যারা করোনায় আক্রান্ত হবেন, সরকার তাদের চিকিৎসাসেবাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে।

মো. জাহিদ হাসান : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৩ জুলাই ২০২০/এমএম


Array