Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই সময়টি সবার জন্যই বিশেষ এক প্রতিকূল সময়। শিশুদের জন্য সময়টি আরও বেশি প্রতিকূল। স্কুল, ডে-কেয়ার, খেলার মাঠ, বন্ধুর-বান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ, যোগাযোগ, মজা বা ফান করা- সব কিছুই হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলেছে। পুরোই ঘরবন্দি। শিশুদের শরীর ও মনের উভয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে এই অবস্থার। অবস্থাটি তাদের জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। মা-বাবার কিছু পরিকল্পনা ও উপায় এবং পন্থা কিছুটা হলেও এসব শিশুকে স্বস্তিতে রাখতে পারে।

পরিকল্পনা বা উপায়গুলো কি?

এক্ষেত্রে সন্তানের শখ বা পছন্দ, বিশেষ করে ঘরে বসে করা যায় এমন শখের কাজে উৎসাহিত করা হতে পারে একটি বড় কাজ। ছবি আঁকা, গান, ছড়া-কবিতা কিংবা অন্যান্য লেখালেখি যারা ভালোবাসে তাদের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হতে পারে এক ধরনের উপায়। ছবি, লেখালেখিগুলো স্কুলে জমা দেয়ার কথা জানলে এদের উৎসাহ আরও বাড়বে। যাদের হাতের লেখা স্পষ্ট এবং পরিচ্ছন্ন তাদের দিয়ে দুর্যোগপূর্ণ এই সময় নিয়ে সচেতনামূলক পোস্টার লেখায় উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। পোস্টারগুলো পাড়ায়, পাড়ার রাস্তার মোড়ে টাঙিয়ে তাদের কাজের প্রশংসা করলে ভবিষ্যতেও এমন কাজ করতে উৎসাহ পাবে। মায়ের ভূমিকা এখানে মুখ্য। সন্তানের শখ না জানা থাকলে এই সময়টি সে কাজের একটি সুযোগ বটে।

বই পড়ার শখ সব শিশুদেরই থাকে। বই পড়ে অধিক সময় কাটানো অন্য যে কোনো উপায়ের চেয়ে সহজ। মা-বাবা তাদের সংগ্রহ থেকে বই দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। বর্তমান সময়ের শিশুদের টেলিভিশনের কিছু প্রোগ্রাম, বিশেষ করে কার্টুনজাতীয় অনুষ্ঠান বেশ পছন্দের। সময় বেঁধে দিয়ে এ কাজটিও এদের সময় কাটাতে সাহায্য করতে পারে। আধুনিক সময়ের শিশুদের বেশ পছন্দ ভিডিও গেম খেলা। বিদেশে বিভিন্ন গবেষণায় এই দুর্যোগের সময় কাটাতে বেশিরভাগ শিশুদের পছন্দের বিষয় গেম। তবে বলছি, সময় বেঁধে এই সুযোগটিও মন্দ নয়।

দিন দিন করে মাস দুয়েকেরও কিছু বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে এই মহামারীর প্রকোপ চলছে। এই পুরো সময়েই শিশুদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ নেই। এতে মন খারাপ হওয়ারই কথা। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা মতে, বিচ্ছিন্নতা অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের বিচ্ছিন্নতা আচরণেও প্রভাব ফেলে বলে কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে কেন এমন হয় তা এদের ব্যাখ্যায় আসেনি। শুধু শিশুদের নয় বড়দেরও এমন ঘটে। এক্ষেত্রে মা-বাবা সুযোগ থাকলে সন্তানের কাছের দু-একজন বন্ধুদের মা-বাবার সঙ্গে প্রথমে নিজেরা যোগাযোগ ও অনুমতি নিয়ে টেলিফোনে সময় করে কথা বলার ব্যবস্থা করা হতে মন ভালো রাখার একটি উত্তম উপায়। এতে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে উভয়েই হালকা হতে পারে। অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভার্চুয়ালি তার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে আঁকাআঁকিতে সাহায্য করছেন।

মা-বাবার কিছু কাজে সাহায্য করেও শিশুরা সময় কাটাতে পারে। যেসব শিশু, বিশেষ করে মেয়েশিশুরা মাকে তার রান্নার কাজে সাহায্য করতে পারে। তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করতে কি কি লাগে, কত পরিমাণের কোন উপাদান লাগে এবং কেমন করে রান্নাটি করতে হয় সে বিষয়ে মাকে সাহায্য করতে পারে। এতে রান্নাটাও শেখা হয়ে গেল। কারও রান্না জানা থাকলে সবার জন্য দু-একদিন রান্না করা যেতে পারে। এ সময়ে কারও জন্মদিন হলে কেক কিভাবে বানানো হয় সে কাজটিও করা যেতে পারে। বাইরের দেশে জন্মদিনের কেক বানানোয় মাকে সাহায্য করা খুবই পরিচিত।

শিশুদের শারীরিক অবস্থাও ভাল নেই। কেননা এরা সামান্য সময়ের জন্যেও কোথাও বাইরে খোলা জায়গায় যেতে পারছে না। গ্রামে সমস্যাটি তত প্রকট না হলেও শহরে বিষয়টি বেশ সংকটের। গ্রামে ছেলেমেয়েরা দুয়ারের, উঠানের খোলা জায়গায় সামান্য পায়চারি বা হাঁটাহাঁটি করতে পারছে। শহরে সে সুযোগের সামান্য ঘাটতি রয়েছে। এজন্য যাদের বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের পেছনে খালি জায়গা বা লন রয়েছে সেখানে সামান্য হলেও বাচ্চাদের ছোটাছুটির সুযোগ করে দিতে পারেন। অনেকের ছাঁদে খালি জায়গা রয়েছে। বিকেলের কিছু সময় সেফটি অবস্থা দেখে সামান্য খেলাধুলা বা হাঁটার ব্যবস্থা শারীরিক স্বাস্থ্যে সাহায্য হতে পারে।

কোনো শিশুর মা কিংবা বাবা একজন কোভিডে আক্রান্ত হলে শিশুর দুর্ভোগের শেষ থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই তার স্বাভাবিক জীবন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। সে তার সান্নিধ্যে, স্নেহ, খেলাধুলা, কোন কিছুর শেয়ার প্রভৃতি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। একই বাড়ি বা বাসায় থাকার কারণে যেকোনো সময় সেও আক্রান্ত হতে পারে- এমন একটি বড় ভয় সব সময় তাকে তাড়া করে বেড়ায়। ভয়ের এ অবস্থাও শিশুর মনের ওপর চাপ ফেলে। এ অবস্থায় অনাক্রান্তদের শিশুকে বোঝাতে হবে এরোগের ধরন কি এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এতে তারাও সজাগ হবে, নিয়ম মানা শিখবে।

এসব অবস্থায় মানসিক দিকে থেকেও শিশুরা বেশ বিধ্বস্ত হয়। মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা যেন অবসাদগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে মা-বাবাদের সঙ্গে শিক্ষকদের ভূমিকাও কম নেই। অনেক স্কুলের অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। এ সময় শিক্ষকরা শিশুদের বাড়তি শরীর-স্বাস্থের খোঁজ নিতে পারেন। বাইরের দেশে নিয়ম নেই শিক্ষকদের ছাত্রদের বাসায় টেলিফোনের রেওয়াজ না থাকলেও আমাদের দেশে তেমন বাধা নেই। শিশুরা বরাবরই তাদের শিক্ষকদের খুব পছন্দ করে এবং তাদের কথা মান্য করে। এর সঙ্গে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীদের দায় রয়েছে অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ শিশুদের নিয়ে ভার্চুয়াল নানা প্রোগ্রামে শিশুদের এ সময়ের সমস্যা আলাপ করতে পারেন। বিভিন্ন টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে পারেন। এতে শিশুরা আনন্দিতই হবে এই ভেবে যে তারা বড় এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের নানা বিষয়ে আলোচনা করতে পারছে।

নির্মল সরকার
সাবেক অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ
বর্তমানে টরন্টোবাসি

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৬ জুন ২০২০ /এমএম


Array