Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য এখনও কোনো টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এ অবস্থায় শরীরে বিদ্যমান সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই একমাত্র ভরসা।

সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ইংরেজিতে বলা হয় Non Specific Immunity। এ ধরনের ক্ষমতার ফলে কোনো জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে সহজেই ওই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, অর্থাৎ সেক্ষেত্রে রোগজীবাণু ভ্যাকসিনের ভূমিকা পালন করে।তবে যদি শরীরে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে তবে ওই জীবাণু রোগ সৃষ্টি করে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া কোনো উপায় নেই।

ছোটবেলা থেকে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে দৈহিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সুস্থ ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। তবে প্রতিদিনের খাবারের ধরনও আক্রান্ত রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। প্রাত্যহিক জীবনে যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, তার মধ্যে প্রাণিজ আমিষ (দুধ, ডিম, মাংস, মাছ), সবুজ শাকসবজি, লেবুজাতীয় ফল উল্লেখযোগ্য।

ইদানীং করোনার প্রকোপের পর সবাই বেশি করে লেবু বা লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার কথা বলছেন, যা প্রতিদিনের খাবারে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এর ভেতরে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।লেবুজাতীয় ফলকে বলা হয় Citrus fruit অর্থাৎ এর ভেতরে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ সাইট্রিক এসিড। এই সাইট্রিক এসিডের ওপর আমার বেশকিছু গবেষণা রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, এই এসিড খাদ্যে যোগ করলে সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

সাইট্রিক এসিড একটি দুর্বল অর্গানিক এসিড, যার রাসায়নিক সংকেত CHOY। এটি ব্যাপক ব্যবহারের জন্য রাসায়নিকভাবে কারখানায় তৈরি করা হয়। দেখতে অনেকটা সাধারণ লবইের মতো। কারখানায় প্রস্তুতকৃত সাইট্রিক এসিড খাদ্য সংরক্ষণ, খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিসহ জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কোনো কোনো গবেষণায় মুরগির খাদ্যে সাইট্রিক এসিড যোগ করে দেখা গেছে, এটি মুরগির হাড়ের গঠন, ওজন বৃদ্ধিসহ সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জীবনীশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। মুরগির পরিপাকক্রিয়ার সঙ্গে মানুষের পরিপাকক্রিয়ার সাদৃশ্য থাকায় মুরগির ওপর গবেষণালব্ধ ফলাফল মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যায়।

সুইজারল্যান্ডের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রয়লার খাদ্যে ০.৫ শতাংশ সাইট্রিক এসিড যোগ করার পর ব্রয়লারের সুস্থতাসহ জীবনীশক্তি অনেক বেশি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রয়লার খাদ্যে ০.২৫ থেকে ০.৭৫ শতাংশ সাইট্রিক এসিড যোগ করলে টিকা দেয়া ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।এটি প্রমাণ করে, যদি কোনো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তবে সাইট্রিক এসিড দ্রুত সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করে।

সাইট্রিক এসিড আমরা প্রায়ই লেবু বা লেবুজাতীয় ফলের মাধ্যমে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। এটি ভালো সংরক্ষক হিসেবে জ্যাম, জেলিসহ বিভিন্ন আচারে যোগ করা হয়। যেহেতু এটি একটি জৈব এসিড, খাদ্যের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করায় এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটিকে খাদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে।

আমি বিশ্বাস করি, করোনা প্রকোপের এই দুঃসময়ে সাইট্রিক এসিডসমৃদ্ধ খাবার খুবই উপকারী। শুধু করোনায় নয়, এটি খাওয়ার অভ্যাস করলে তা অন্য রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক হবে। এমনটিও হতে পারে, কেবল ভিটামিন সি নয়, মূলত লেবুজাতীয় ফলে উপস্থিত সাইট্রিক এসিডই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অধিক সহায়ক।ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম : অধ্যাপক, পশু পুষ্টি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৯ জুন ২০২০ /এমএম


Array