Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা গ্রাস করেছে চলমান বিশ্বব্যবস্থাকে। রোগটি আতঙ্কজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও ভূখণ্ডে, যার ফলে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ এবং প্রাণ হারিয়েছে চার লাখের মতো মানুষ।

করোনাভাইরাসের এমন নিষ্ঠুরতায় তছনছ হয়ে গেছে পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনধারা, অর্থনীতি আর আর্থ-সামাজিক গতি-প্রকৃতি। করোনাভাইরাস বাংলাদেশে হামলে পড়ে সেই মার্চে, যা বর্তমানে আরও ভয়াবহভাবে অব্যাহত আছে।

গত ১৯ মে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেছেন, করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচতে অনিবার্য লকডাউনের কারণে বিশ্বের প্রায় ৬ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হয়ে যাবে, অর্থাৎ তাদের প্রাত্যহিক আয় দাঁড়াবে ১৬১ টাকার নিচে, যা দিয়ে জীবনযাপন একেবারেই অসম্ভব।

স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক খাতের মতোই কোভিড-১৯’র চরম শিকার আমাদের শিক্ষা খাত। শুধু বাংলাদেশ কেন- উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত সব দেশের শিক্ষাবর্ষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিয়েছে ভয়াল করোনাভাইরাস।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে পূর্বঘোষিত ছুটি অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে; কিন্তু এর পর কী হবে, অবস্থাদৃষ্টে তাও অনেকটা অনিশ্চিত। তবে অনিশ্চয়তার গুমট অন্ধকার যতই গাঢ় হোক না কেন, একদিন আলো এসে সব ছুঁড়ে ফেলবে, মানুষ আবার ফিরবে তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনকর্মে।

একটা দীর্ঘবিরতির পর ফুলের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কলকাকলীতে হাসবে তাদের প্রিয় বিদ্যাঙ্গন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দেখা যেতে পারে একটা নতুনত্ব, যাকে বৈশ্বিকভাবে বলা হয় নিউ নরমাল রোল।

এমনিতেই শিল্পায়নের ফলে বর্ধিত শহরায়ন আমাদের শিক্ষার্থীদের, বিশেষত শিশু শিক্ষার্থীদের গৃহবন্দিত্বের মতো অবস্থায় ফেলেছে। এর মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে চলমান সামাজিক দূরত্ব।

শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থায় এটা যে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা সহজেই বোধগম্য। সার্বিক বিবেচনায় আমাদের এখন থেকেই একটি বিষয়ে ভাবতে হবে; তা হল নিরাপদ স্কুল- যা শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি তার স্বাস্থ্যগত ও মানসিক অবস্থাকে দৃঢ় করবে।

সব অনিশ্চয়তার ঝড় পেছনে ফেলে আমাদের সন্তানরা আবার একদিন বিদ্যালয়মুখী হবে; তবে সেটা সব মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে। অর্থাৎ আমাদের সামনে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং নিশ্চিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা। আমি মনে করি, শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে আমাদের ও বিশ্বের শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তারা ইতোমধ্যেই এসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।

একটা বিষয়ে আমাদের সরকারের প্রাণখোলা প্রশংসা করতেই হবে; তা হল- বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেখানে আমরা পড়ার পরিবেশের একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিক্ষাবিষয়ক ‘ঘরে বসে শিখি’ কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশ কেন, করনাকালে সারা দুনিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। মানসম্মত এসব ক্লাস ঘরে থেকেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার একটা আবহে রাখতে পারছে বলে আমি মনে করি।

আরও অন্যান্য মাধ্যমের কথা তো বলতেই হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেও শিখছে। আমি মনে করি, করোনার এমন দুঃসময়ে এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে যে অগ্রযাত্রা তার অনবদ্য এক সুফল।

সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যমতে, বৈশ্বিক এই মহামারীর ফলে বিশ্বের অন্তত ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তথাপি আমি মনে করি, একদিন করোনা হারবেই, আর জিতবে মানুষ। জিতবে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ফুলের মতো নির্মল হাসি আর আনন্দ। সে পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব মেনে অবশ্যই নিরাপদে থাকতেই হবে।

লে. কর্নেল এম. কামালউদ্দিন ভূঁইয়া (অব.) : অধ্যক্ষ, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৪ জুন ২০২০/এমএম


Array