প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক, ক্যালগেরি, কানাডা :: রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার শত শত বছরের পুরানো প্রচলন l সারা পৃথিবীতেই রাজনীতিবিদরা তাদের যখন প্রয়োজন তখন ধর্মের ব্যবহার করে l পৃথিবীর তাবৎ ধর্মের ক্ষেত্রেই দেখা যায় সাধারণ মানুষ সবসময়ই ধর্মভীরু এবং তাদের সম্পূর্ণ সমর্পন দিয়েই ধর্ম পালন করে থাকে l
আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষ পূর্ণমাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে, তারা সবসময় তাদের ধর্মীয় মূল শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে থাকে l এই বিশ্বাসে চিড় ধরায় রাজনীতিবিদরা তাদের মতো করে যখন ধর্মকে ব্যবহার করে l সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ফেলে ! সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে আর এটা বেশি দেখা যায় যখন কোনো ইলেকশন সামনে আসে l সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ অতি সহজেই রাজনীতিবিদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং অনেক সময় উগ্রতায় প্রভাবিত হয়ে পরে l
আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন l করোনার প্রভাবে সারা দেশ বিধ্বস্ত হলেও রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প” এবং ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী “জো বাইডেন” দুজনেই তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে l
আজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় নেতাদের পক্ষ নিয়ে গভর্নরদের মধ্যে যারা এখনো প্রেসিডেন্টের দেয়া আদেশ মান্য করছে না তাদের অনেকটা ধমকের স্বরে ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা “জরুরি সার্ভিস” বলে গণ্য করতে বলেছে l খৃস্টানদের গির্জা, ইহুদীদের সিনাগগ, মুসলিমদের মসজিদ সহ অন্য সকল ধর্মের উপাসনালয় খুলে দিতে বলেছে এবং এই প্রতিঠানগুলোকে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করতে বলেছে কারণ এটা তাদের ধর্মীয় অধিকারের পরিপন্থী l তাৎক্ষণিক ভাবে খুলে দেয়ার জন্য হুকুম দিয়েছে l
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এও বলে খোঁচা দিয়েছে কিছু কিছু প্রদেশ “মদের দোকান এবং এবরশন ক্লিনিকগুলো” খোলার পারমিশন দিয়েছে জরুরী ভিত্তিতে l প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব প্রদেশ জরুরি ভিত্তিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিবে না সেই সব গভর্নরদের ক্ষমতা স্থগিত করার হুমকি দেয় l আবার ধর্মীয় উপাসনালয় খোলার ব্যাপারে তাদের উদাসীনতার সমালোচনা করেছে l
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) ধর্মীয় উপাসনালয় খোলা এবং প্রার্থনা করার ব্যাপারে পূর্ণ গাইড লাইন দিয়েছেl সেখানে উপাসনালয়ে জমায়েত নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে l উদ্দেশ্য একটাই কমিউনিটি স্প্রেড বন্ধ করা l কিন্তূ ধৰ্মীয় নেতারা এটা পুরোপুরি মানতে চাচ্ছে না l
এখানে বলা বাহুল্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনার কারণে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকার অর্থনীতির কাঁটা সচল করার জন্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার অর্ডার দিয়েছে আগেই l কিন্তূ অনেক প্রদেশ তাদের নিজস্ব অবস্থা বিবেচনা করে এই অর্ডার মানছে না l প্রত্যেক প্রদেশের তাদের নিজিস্ব আইন আছে, নিজস্ব গাইডলাইন আছে আর এগুলো মেনেই তারা চলতে চায়, আর সেখানেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর বিপত্তি l
যদিও প্রদেশগুলোর হাতে এখনো কোনো অফিসিয়াল অর্ডার পৌঁছেনি l আবার সমালোচকরা প্রেসিডেন্ট এর এই আদেশ দেয়ার ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে l সে যাই হোক সামনে নভেম্বর এ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইলেকশন l কাজেই ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কে কাজে লাগানোর এটাই মোক্ষম সময় l প্রেসিডেন্ট এর ভাষ্য – আমেরিকান রা বেশি বেশি প্রার্থনা চায়, কোনোভাবেই কমাতে চায়
না l
আর এই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর ধর্মের প্রতি অতি মনোযোগ দেয়া দেখে এটা স্পষ্ট যে সে ধমীয়ভাবে অতি সংবেদনশীল ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা l কাজেই এটা স্পষ্ট করেই বলা যায় পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশী ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিবিদরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে l এখন দেখা যাক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কতখানি সফল হয় l
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৩ মে ২০২০/এমএম





