Menu

বিমান কি হরিলুটের সংস্থা?

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুর্নীতি এত বিস্তার লাভ করেছে যে, এটাকে হরিলুটের সংস্থা বললেও অত্যুক্তি হবে না।

গতকাল  প্রকাশিত হয়েছে বিমানের টিকিট কেলেঙ্কারি নিয়ে এক প্রতিবেদন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিমানের টিকিট ব্লক করে তা কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে একটি চক্র প্রতিদিনই পকেটস্থ করছে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক সভায় এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। সভা চলাকালে একপর্যায়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের উপস্থিতিতে

বিমানের অভিযুক্ত পরিচালক আশরাফুল আলম টিকিট দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেও নিয়েছেন। বুধবার তাকে ওএসডি করে এমডির দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বিমানে টিকিট কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক বড় আকারের সিন্ডিকেট, যার অধিকাংশ সদস্যই হলেন বিভিন্ন কান্ট্রি ম্যানেজার এবং বিমানের মার্কেটিং শাখার কর্মকর্তা। জানা গেছে, কিছুসংখ্যক ট্রাভেল এজেন্ট বিমানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে টিকিট বুকিং দিয়ে অর্থ ভাগাভাগি করে থাকে। তারা মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের মাধ্যমে টিকিট ব্লক করে।

কিছু কর্মচারী তাদের কাছে থাকা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটগুলোয় সিট ব্লক করে। এছাড়া আরও নানা পন্থায় কালোবাজারে বিমানের টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। বলাবাহুল্য, এ ধরনের দুর্নীতি ঠেকাতে হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিমানের সব টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বিমান কর্তৃপক্ষ বলেছে, দুর্নীতি ঠেকাতে জেলা পর্যায়ে অনলাইন টিকিট বুকিং সচল করাসহ বিশেষ অ্যাপ খোলা হবে। বিমান প্রতিমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিমানের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে দুর্নীতি। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমান সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সব বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বস্তুত রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে দুর্নীতি। সম্ভাবনাময় সংস্থাটি বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে মূলত সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই। সংস্থাটির প্রায় প্রতিটি শাখায় দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে।

দুর্নীতি বন্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিমানে বিরাজমান দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। বছরের পর বছর ধরে নানারকম কারসাজি ও ফন্দি-ফিকিরের মাধ্যমে প্রায় প্রকাশ্যেই সিন্ডিকেট গঠন করে সংস্থাটিতে কমিশন বাণিজ্যসহ দুর্নীতি ও অপরাধ চালানো হলেও এতদিন তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ কেন নেয়া হয়নি, তা এক প্রশ্ন বটে।

জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থার মাধ্যমে একটি দেশ কেবল আর্থিকভাবেই লাভবান হয় না; একইসঙ্গে সংস্থাটির প্রতীক সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের অহংকারের বস্তুরূপে পরিগণিত হয়। বাংলাদেশ বিমানও যাতে প্রত্যেক বাঙালির অহংকারের বিষয়ে পরিণত হয়, সে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য সর্বপ্রথম বাংলাদেশ বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য উদ্ঘাটন করে সংস্থাটিকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সেই সঙ্গে একে ঢেলে সাজানোর কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তার সমুদয় সম্ভাবনা বিনষ্ট করতে করতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ বিমান একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক- এটাই প্রত্যাশা।