Menu

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লা রফিক, ক্যালগেরি, কানাডা :: বর্তমান বিশ্বে যে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এক অদৃশ্য কিন্তূ প্রচন্ড শক্তিশালী ভাইরাস যার মূল হোতা, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে l এবং পুরো মানব জাতি ( হোমো সাপিয়েন্স ) আজ অনেকটা গর্তে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে , যা আমরা দেখে থাকি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট অনেক

জীব/প্রাণীর মাঝে l চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতির কথা আমরা সবাই গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করে থাকি l অনেকখানি এগিয়েছে এটা সত্য বর্তমান বিশ্বে মানুষের জীবন প্রত্যাশা (life expectancy) অনেক বেড়েছে ….আরো অনেক অনেক….কিন্তূ কোনো মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কতোখানি বেড়েছে তা আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি l চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে আমরা অনেক সায়েন্স ফিকশন বা কল্পকাহিনী দেখে থাকি কিন্তূ বাস্তবে আমরা কি দেখছি? করোনার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না বর্তমান অবস্থানে দাড়িয়ে থাকা চিকিৎসা বিজ্ঞান !!!

২০১৯ সালের ডিসেম্বর এ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের সি ফুড স্টোরের মার্কেটে এক অদ্ভুত রোগের উৎপত্তি হয় যার ফলে মানুষ শাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলো l চীনের চিকিৎসকরা এবং বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার (WHO) বিশেষজ্ঞরা মিলে চেষ্টা করছিলো এই অসুখের গতিবিধি (life spectrum) বের করার l ডিসেম্বর এর একত্রিশ তারিখে (December 31, 2019) বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে,”অসুস্থ রোগীরা এক ধরণের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত যার নাম করোনা (Covid -19)”

জানুয়ারীর প্রথম (January 1st week) সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) করোনা (Covid -19) ভাইরাস এর ন্যাচারাল স্পেকট্রাম বা গতিবিধি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী, প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে l কিন্তূ চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী আমেরিকার প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার (WHO) এই মেসেজ গুরুত্ব সহকারে নেয় নাই বরং অবহেলাই করেছে l আমেরিকার প্রথম সারির সংবাদপত্রের তদন্ত রিপোর্ট এ বেরিয়ে এসেছে তাদের স্বাস্থ প্রশাসন প্রায় ৭০ দিন নষ্ট করেছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে l তাদের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না শুরুতে l যে টেস্ট কীট দিয়ে টেস্ট শুরু করেছিলো তা ছিলো অপরিশোধিত (contaminated) যার ফলে কোনো সঠিক রেজাল্ট আসছিলো না, তারপর স্বাস্থ প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে, বিশুদ্ধ টেস্ট কীট পেতে আরো কয়েক সপ্তাহ লেগে যায় l এখন অনেকেই এটাকে আমেরিকান প্রশাসনের লাল ফিতার দৌরত্বকে দুষছে …..!!!

আমেরিকার প্রথম করোনা পজিটিভ ধরা পরে ওয়াশিংটন প্রদেশের সিয়াটল সিটিতে l চীনের উহান থেকে আসা এক ব্যক্তি l এর পর সেই প্লেন এ আসা সমস্ত যাত্রীদের ট্র্যাক করার কথা থাকলেও তদন্ত রিপোর্ট সূত্রে জানা যায় সেটাও সম্ভব হয়নি প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে l তারও বেশ কিছুটা পর চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো ট্র্যাক করতে থাকে কিন্তূ ততোদিনে আমেরিকাতে করোনা (Covid -19) খুব ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বলেই এখন ধারণা করা হচ্ছে l এছাড়া নিউইয়র্ক এ প্রথম পজিটিভ কেস ধরা পরে মার্চ এর ১ তারিখে l প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিলো ইরান থেকে আসা সেই মহিলার কাছ থেকেই ছড়িয়েছে l কিন্তূ এখন অনুসন্ধানী রিপোর্ট এ জানা যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন যখন চীন এবং ইরান থেকে আসা মানুষদের নিয়ে ব্যস্ত ততদিনে ইউরোপ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ আমেরিকায় এসে করোনার মহামারী সৃষ্টি করে ফেলেছে l এরকম আরো অনেক অনেক দুর্বলতা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রশাসনl

চীন সফলভাবে করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে কারণ চীনা প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) র সঙ্গে নিবিড় ভাবে কাজ করেছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার (WHO) পরামর্শ অনুযায়ী পুরো হুবেই প্রদেশ সম্পূর্ণ লক ডাউন এ সফলতা, স্বল্প সময়ে স্বল্প মেয়াদের হাসপাতাল তৈরিতে সফলতা, ডাক্তার, নার্স সহ সকল সাস্থ কর্মীদের পরিবার থেকে আইসোলেসন এ রাখতে পেরেছে l চীনারা এই মহামারীর সফল ভাবে উৎরানোর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত শক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পেরেছে আর এটা হয়তো সম্ভব হয়েছে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধহস্ত l

এছাড়া সাউথ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান সহ কিছু দেশের সাকসেস এর গল্পও আমরা জানি l

ইউরোপের ভয়াবহতার পিছনেও তাদের স্বাস্থ প্রশাসনের প্রস্তুতির অভাব ছিল একটা বড় কারণ l আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বিশ্বের মৃত্যুর মিছিলে ২ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে !

আমার মূল্যায়ন এ সারা বিশ্ব এখনোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় নাই …. জাপানের মেডিসিন “এভিগান“ এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে, হয়তো খুব শিগ্রই ভালো খবর আসবে বিশ্ববাসীর কাছে …. l এছাড়া পৃথিবীর আরো অনেক দেশ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেখা যাক কত তাড়াতাড়ি সফলতা আসে !

এখন আর দোষ খুঁজে কোনো লাভ হবে না শুধু বিতর্কই বাড়বে l “মানবিকতার জয় হবেই একদিন – এই আশায় রইলাম l”

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লা রফিক
ক্যালগেরি, কানাডা।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২২ এপ্রিল ২০২০/এমএম


Array