বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: একটা অদ্ভুত, অচেনা পরিবেশে যেন আমাদের কেউ ঠেলে দিয়েছে। চারপাশে মৃত্যুভয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তা লাফিয়ে বাড়ছে; প্রতিষেধক নেই। বিজ্ঞানীরা জ্ঞানমন্থন করছেন। মানুষসৃষ্ট না জীবনচক্রের বিচ্যুতি- সবটাই অজানা। তবে মানুষ বুঝেছে- করোনা বাসা বাঁধলে হয়তো রক্ষা নেই। মানুষ তাই ঘরবন্দি।প্রকৃতিগতভাবেই বাঙালি গল্পপ্রিয়, বন্ধুবৎসল। নির্মল আড্ডা আমাদের চিরচেনা পরম্পরার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ এ জনগোষ্ঠীকে ঘরে আবদ্ধ রাখা বা থাকতে বাধ্য করা- কোনোটাই সহজ কাজ নয়।
পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি লৌকিক, ছন্দবদ্ধ বা নিয়মশাসিত। ব্যক্তির নিজস্ব ও সামাজিক জীবনের ভেদরেখা স্পষ্ট। ১৮ বছরের পর সন্তানও বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনও যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে এলেও তার দর্শন টিকে আছে। সামাজিক রীতি-নীতি, আচার- এখনও যথেষ্টই সমষ্টিকেন্দ্রিক। এমন বাস্তবতায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং সত্যি কষ্টকল্পনা।গ্রামে চায়ের দোকানে ভিড় করা, খবরের কাগজে চোখ বুলানো আর টিভি দেখা এখন দৈনন্দিন চর্চার অংশ। একবেলা খাওয়া না জুটলেও যে কষ্ট অনুভূত হয় না, আড্ডার এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে সেই ব্যথা তীব্র হয়ে জেগে ওঠে। জনমত সংগঠন, পারস্পরিক সহযোগিতা, সবার সঙ্গে সবার সংযুক্ত থাকা- এসব মিলনেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে চমৎকার নির্দোষ বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এসব আড্ডা ক্ষেত্র। আবার গুজব ছড়ানোর ভয়ও এখানে বেশি। এক ধরনের গুজব নিরীহ। নিছক অজ্ঞতা থেকে, অতি উৎসাহ থেকে তা নিঃসৃত। অন্যটা দুরভিসন্ধিমূলক। যার কলকাঠি নাড়া হয় দূর থেকে। সমাজের সরলতা ও খানিকটা অসচেতনাকে পুঁজি করে প্রতিষ্ঠানবিরোধী অপপ্রচার ছড়ানোর মতলবে কেউ কেউ সক্রিয় হয়ে ওঠে। খবরের কাগজ এখন অপেক্ষাকৃত সচ্ছল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি অবলম্বন; যা জনমত সংগঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানা যাচ্ছে, ৭৫ শতাংশ খবরের কাগজ বিক্রি কমে গেছে; যা এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
এ ঘরবন্দি দশা কতদিন থাকবে বা কবে শেষ হবে- কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। গণছুটি শেষ হলে বা কঠোর বিধি-নিষেধ হালকা হলেই মানুষ আবারও পুরনো ছন্দে ফিরবে- এমন ভাবারও সুযোগ নেই। অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হয়তো চলতে হবে আরও অনেকদিন। হয়তো এ অবস্থা আমাদের দৈনন্দিন আচরণ, সংস্কৃতির কাঠামোতেও একটা মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে। কৃষি, শিল্প, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি কিংবা রাজনীতি- সর্বত্রই এ দুর্যোগের ছাপ পড়বে বলে মনে হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। প্রযুক্তি, বাজার অর্থনীতি, জলবায়ু, পরিবেশ ও বৈশ্বিক সহযোগিতা- সব ক্ষেত্রেই নতুন একটা ব্যবস্থা হয়তো গড়ে উঠবে। সহযোগিতা, অংশগ্রহণ ও কাউকে পেছনে না ফেলার বিশ্বজনীন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লড়াই আরও জোরদার হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যদি উন্নত না হয়, দক্ষ ও সমৃদ্ধ না হয়- ধনিক শ্রেণির সম্পদও টেকসই হবে না, পুঁজিরও বিস্তার ঘটবে না। এ মহাদুর্যোগ বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানোর তাড়না সৃষ্টি করবে।
প্রবাসী শ্রমিক বা কর্মজীবীদের আয় আমাদের অর্থনীতিতে অন্যতম শক্তির উৎস। বিদেশগমন বা শিক্ষাগ্রহণ শুধু ধন সংগ্রহ বা সঞ্চয়ের সুযোগ নয়, মর্যাদারও প্রতীক বলে গণ্য হয়ে এসেছে। আজ সে ধারণায়ও আঘাত লেগেছে। প্রবাসী প্রত্যাগতদের খোঁজে পুলিশ হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি পূর্ব এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যেও যেভাবে করোনা মড়ক লাগিয়েছে- বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ বা স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়েছে। এখন যে শ্রেণি প্রাণের দায়ে নয়, বরং সম্পদ নিরাপদে রাখা ও নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য সন্তানদের বিদেশে পাঠাতেন তারাও আজ দেশে থাকতে চাচ্ছেন; অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও।
বিশ্বব্যবস্থা অনাগত দিনে কেমন হবে, আর্থ-সামাজিক কাঠামো, ভূ-রাজনীতির রসায়ন, উন্নত-অনুন্নত রাষ্ট্রের আন্তঃসম্পর্ক- সর্বোপরি গোটা সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় কোনো নতুন মাত্রা সংযুক্ত হচ্ছে কিনা বলা মুশকিল। প্রযুক্তি ও আকাশপথ পৃথিবীকে একটা ছোট গ্রামে পরিণত করেছে। এর ফলে পারস্পরিক সম্পর্ক, সহমর্মিতা, নির্ভরতা যেমন বেড়েছে, অসুখ-বিসুখ দ্রুতগতিতে সংক্রমণের পথও এখন অতীতের তুলনায় অনেকটাই প্রশস্ত, উন্মুক্ত। আবার অন্যদিকে আধিপত্য বিস্তারের কৌশলও পথ পরিবর্তন করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শিক্ষা দিয়েছে- সর্বাত্মক যুদ্ধ কোনো জনগোষ্ঠীর জন্যই সুখের হয় না, বরং সভ্যতা বিলুপ্তির পথে পা বাড়ায়। কালের পরিক্রমায় বাণিজ্য যুদ্ধই শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যম হয়ে ওঠে। ব্যবসার ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করা এবং নিজেদের শিক্ষায়, দক্ষতায়, সামর্থ্যে সমৃদ্ধ রাখার মানেই হল অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ও শোষণের সুযোগ লাভ করা। সুতরাং সম্পদের লড়াই থেমে থাকেনি। মানুষ ধরিত্রীর স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতিকে অস্বীকার করেছে। বেপরোয়াভাবে শিল্পবর্জ্য ও গ্যাস নিঃসরণ, বনভূমি ধ্বংস, সমুদ্র ও বায়ুদূষণের মতো কাজ করে জলবায়ুকে বিপন্ন করে তুলেছে। নিজের তাৎক্ষণিক সমৃদ্ধির নেশায় জগতের জীবনচক্রকে বিপর্যস্ত করেছে। এভাবেই মানুষ নিজ গবেষণাগারে জীবনবিনাশী জীবাণু অস্ত্র তৈরির আয়োজনও করেছে- এমনকি তা অতীতে প্রয়োগও করেছে। আবার নতুন করে করোনার সংক্রমণ এ প্রশ্নকে উসকে দেবে কিনা ভবিষ্যৎই বলতে পারে।
সমাজের কিছু অদ্ভুত আচরণ মাঝে মধ্যে আমাদের বিভ্রান্ত করে। দেখা গেছে, গোটা বিশ্ব যখন ভাইরাসের ক্ষতি করার এ সক্ষমতা ও প্রবণতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছে, সমাজের একটা বড় অংশ এক ধরনের ঔদাসীন্য বা উপেক্ষার ভঙ্গিতে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। মনে মনে ধরে নিয়েছে- এ ব্যাধি আমার জন্য নয়, এটা অন্যদের। এরপর নিজে সান্ত্বনা খোঁজার ছলে কখনও পাপ-পুণ্য, কখনও ধর্ম বিশ্বাস বা জাতিগত পরিচিতির আশ্রয় খুঁজে বেড়িয়েছে। সরকার যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে, সমাজেরই এক অংশ তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বাহাদুরি কুড়িয়েছে। অথচ করোনায় মৃত কোনো ব্যক্তির সৎকার করতে এ সমাজের কিছু মানুষ শুধু অনীহা প্রকাশ করেনি, রীতিমতো মৃতদেহের প্রাপ্য মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। যে ডাক্তার বা নার্স করোনা রোগীর চিকিৎসা করেছে তাকে কলোনিতে বা ফ্ল্যাটে ঢোকাতে আপত্তি করেছে; বুদ্ধি বা যুক্তি যা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
আমাদের দেশের চিকিৎসকরা নিঃসন্দেহে মেধা ও যোগ্যতায় অনন্য। যে কথাই বলি না কেন- ছাত্রাবস্থায় ভালো ছাত্র হওয়া আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপূরণ অনেকটাই সমার্থক ব্যঞ্জনা তৈরি করে। পা-ফাটা কৃষক থেকে দরিদ্র শিক্ষক- সবার করের টাকায় এরা ডাক্তার হয়েছে। ডাক্তার শুধু মেধা ও মর্যাদার প্রতীক নয়, সেবার অনন্য একটি মাত্রা, প্রকৃত অর্থেই যা মহৎ। যেমন সৈনিক সমাজ জীবনকে তুচ্ছ করে চলেছে দিনরাত আমাদের প্রতিরক্ষায়। নিজেকে উৎসর্গ করেই তার সার্থকতা। করোনা দুর্যোগে ডাক্তারদের ঝুঁকি আছে। সমাজকে তার নিরাপত্তা ও সম্মান দিতে হবে। কিন্তু কোনো অসুখ মহামারী হয়ে উঠলে যদি ডাক্তার উধাও হয়, ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায়, প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার তার ফটকে নোটিস ঝুলিয়ে দেয়, ফোন বন্ধ হয়ে যায়- তবে তা দেশের জন্য স্রেফ দুর্ভাগ্যজনক। পেশাগত দায়, চাকরি অথবা রেজিস্ট্রেশনের শর্ত- এসব প্রশ্ন না তুলেই বলা যায় মনুষ্যত্ব বিপন্ন হলে সভ্যতা বাঁচবে না।
তবে স্বস্তির কথা, বাজার এখনও খুব একটা অস্থির হয়নি। বিশেষ করে দেশের সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুযায়ী যেমন আশঙ্কা ছিল অন্তত তেমনটা ঘটেনি; কিন্তু সিদ্ধান্তের অস্থিরতা আমাদের সংকটে ফেলছে। পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়ছে। যদিও রোগ সম্বন্ধে, ভাইরাসের চরিত্র সম্পর্কে বিশ্বসংস্থাগুলোও স্থির থাকতে পারেনি। সুতরাং করণীয় নির্ধারণে সমস্যা থাকবেই। মাস্ক, পিপিই-র ব্যবহার নিয়ে মতান্তর দেখা গেছে। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ করা, গণছুটি দেয়া ও গণপরিবহন বন্ধ করার নির্দেশে সমন্বয়ের অভাব ছিল। ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কর্মস্থল ত্যাগ করতে নিষেধ না করায় প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ ঠাসাঠাসি করে বাড়ি ফিরেছে। একদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বাস্থ্যবিধি খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে, অন্যদিকে নিরাপদ গ্রামীণ জনপদ সংক্রমণের ঝুঁকিতে তটস্থ হয়েছে।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের আবার কাজে যোগ দেয়ার নোটিশ সাময়িকভাবে নতুন সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। যেমন ভারতে এক নিজামউদ্দীন কাণ্ডই ২৫ শতাংশ রোগ বিস্তারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশেও এমন কোনো ভিড়, জমায়েত বা সমাবেশ রোগ ছড়ানোয় নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কোনো ব্যক্তি যদি অসুখে আক্রান্ত হয় এবং তিনি যদি তা গোপন করেন বা কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটে- সব ক্ষেত্রেই সংক্রমণের সুযোগ থেকে যাবে। আমাদের মতো সমাজ বাস্তবতায় এ ঘটনা যথেষ্ট স্বাভাবিক এবং একইভাবে রোগ ছড়ানোর জন্য সমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবতা ও সততার অভাব এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলতে পারে। তবে আশার কথা দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। যে অল্পসংখ্যক নাগরিক এ নিষেধ উপেক্ষা করে পাড়ার গলিতে আড্ডা দিচ্ছে, সংক্রমিত হচ্ছে আবার উপাসনালয় বা কোনো জমায়েতে মানুষের সঙ্গভোগ করছে তারাই পরিস্থিতিকে ভয়ংকর করে তুলতে পারে।
এ দুর্যোগ যেমন অভাবিত, আকস্মিক, তেমনি এর অভিঘাতও সুদূরপ্রসারী ও সর্বগ্রাসী। শত্রু অতিক্ষুদ্র, অদৃশ্য। কিন্তু ক্ষিপ্র, সর্বত্রগামী। সুরক্ষিত প্রাসাদ থেকে স্যাঁতসেঁতে বস্তি- সর্বত্রই এর অবাধ বিচরণ। খেলার মাঠ, সেনাছাউনি, সুরক্ষিত দুর্গ কিংবা উপাসনালয়- কোনো স্থানই এ আগ্রাসী অনুজীবের নাগালের বাইরে নেই। মানুষের কৌলীন্য, অহঙ্কার, মিথ্যা সংস্কার, কল্পকাহিনী বা লোকাচার ক্রমাগত বিধ্বস্ত হয়ে চলেছে নিমেষের তাণ্ডবে, লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়ছে এ অনুবীক্ষণিক জীবের সহজ শিকার। বিশ্বের অর্থনীতি, বাবসা-বাণিজ্য, কৃষি, উৎপাদন, শিল্প-শিক্ষা সব থমকে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, গণপরিবহন, বিমান, জাহাজ সব স্তব্ধ। ১৩০টি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ মুহূর্তে বন্ধ।
ব্রিটেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশ্বের ৪০ মিলিয়ন মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, প্রান্তিক মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে, বিশ্বের অনেক দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রায় বিপর্যস্ত। মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে। ভাইরাস ক্রমাগত চরিত্র বদল করছে। বয়সজনিত কারণে প্রথমে প্রবীণরা আক্রান্ত হয়েছিল। এখন বয়স-লিঙ্গ, তাপমাত্রা, ভৌগোলিক সীমানা- সবকিছু একাকার। এত বড় বিপর্যয় পৃথিবী হয়তো এর আগে দেখেনি। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবজাতি আজ আক্রান্ত। এ সময় একমাত্র আশ্রয় জ্ঞান, বুদ্ধি, যুক্তি ও বিজ্ঞান। আমাদের মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে, যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে সভ্যতার এ মহাসংকটে।
সব অন্ধকারের কিনারায় আলোর রেখা ভেসে ওঠে, সব মন্দের হয়তো ভালো একটা দিক থাকে। দ্বন্দ্ব-বিভেদ, অনৈক্যের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহমর্মিতার বাঁধনটা হয়তো ঢিলে হয়ে পড়েছিল। সভ্যতার এ ঘোর বিপদ, এ বিপন্নতাবোধ মানবজাতির আত্মাকে একসুতোয় আবার বেঁধে দেবে- এ বিশ্বাস রাখতে পারি। পৃথিবী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রকৃতির এ তাণ্ডবকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে মনে হয়। বিশ্ব অর্থনীতির বহুমাত্রিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ তহবিল গঠন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যা সামাজিক সমতা বিধান ও দারিদ্র্যবিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের অতি দরিদ্র, দরিদ্র, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত সব নাগরিকের বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজন তা আপৎকালীন ব্যবস্থায় পৌঁছে দেয়ার প্রস্তুতি সরকার নিয়েছে বলে জানা যায়। দেশের সব মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে শুরু করেছে। সম্পদশালী ব্যক্তিরা যদি এ দুর্যোগ মুহূর্তে এগিয়ে আসে দেশ উপকৃত হবে। সবার সহযোগিতা ও সমর্থনে যে কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠার শক্তি এ দেশের আছে। আবার নতুন উদ্যমে আলোর বৃত্তে জেগে উঠবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি- এ মুহূর্তে এমন প্রতীক্ষা আমাদের থাকবেই।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২০ এপ্রিল ২০২০/এমএম





