বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: এ মুহূর্তে সারা পৃথিবীর প্রায় আটত্রিশ হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়ে মহামারী প্রতিযোগিতায় বিশ্ব রেকর্ডটি করার লক্ষ্যে কোভিড ১৯ বেশ চতুরতার সঙ্গে, সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসকদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে, বেশ দ্রুত তার জিনের মিউটেশন ঘটিয়ে কিছুতেই চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে আসতে চাচ্ছে না, যা আধুনিক বিশ্বের তাবত অগ্রগতিকে চ্যালেঞ্জ করে মৃত্যুর পরোয়ানা ফেরি করে ফিরছে সারা বিশ্বে!
এই পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত রোগীদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশ কিছু তথ্য গবেষকরা অবগত হয়েছেন এবং এ রোগের ভয়াবহতা, জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগের সঙ্গে পড়ারফ ১৯ এর সম্পর্ক, ঝুঁকি, জটিলতা, করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করছেন, আজ এ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করব। কোভিড ১৯ এ পর্যন্ত যত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের ওপর গবেষণা করে প্রাপ্ত তথ্য (সূত্র, bmj, march’২০২০).তারা এর সাথে অন্যান্য যে রোগগুলোতে ভুগছিলেন !
ক্রনিক উচ্চ রক্তচাপ- ৪৯%, হৃদরোগ (হার্ট ফেইলিউর, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, মায়োকার্ডিয়াল ইস্কেমিয়া, ইনজুরি)-১৪% উপসর্গগুলোর ভেতরে : শ্বাসকষ্ট- ৬২%, বুকে চাপ অনুভ‚ত হওয়া – ৪৯%, অজ্ঞান অনুভ‚ত বা হয়ে যাওয়া – ২২%। এছাড়া সাধারণ জটিলতাগুলো : ARDS (একিউট রেসপাইরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম), তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ -১০০%, ও রেসপাইরেটরি ফেইলিউর (শ্বাসতন্ত্র বিকল)-৫১%, সেপসিস – ১০০%, একিউট কারডিয়াক ইনজুরি -৭৭%, হার্ট ফেইলিউর (হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া)- ৪৯% গবেষণায় এ প্রমাণিত হয়েছে, হৃদরোগ, এ সংক্রান্ত অন্য রোগীদের জন্য ইনভেস্টিগেশনের রিপোর্টস এ প্রমাণ মেলে। যেমন, যে টেস্টগুলো, Troponin I, CK, Pro-BNP, ALT,AST,LDH, আমরা ল্যাবে টেস্ট করি, ফলাফলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে লক্ষণীয় মাত্রায় অনেক বেশি এসেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও এ সংক্রান্ত জটিলতা আছে,তাদের ঝুঁকির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
কিছু পরামর্শ : আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য WHO প্রদত্ত গাইডলাইন মেনে চলব, বাড়িতে অবস্থান করে, সোস্যাল ডিসটেনসিং, জীবাণুমুক্তকরণের নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
# পর্যাপ্ত সুষমখাদ্য গ্রহণ, প্রোটিন পর্যাপ্ত, ফল, শাকসবজি বেশি করে, তবে যারা লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস রোগী আছেন, তারা অবশ্যই উনাদের জন্য নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে চলবেন!
# উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
# প্রচুর তরল পানীয়, ফলের জুস, সুপ খাদ্য তালিকায় রাখুন।
# লেবু পানি একটু উষ্ণ পানিতে বেশ কার্যকরী এবং অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।
# পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম।
# হালকা ব্যায়াম, হাঁটা বাড়িতে বা আঙ্গিনায় করা যেতে পারে।
# গলা শুকনো না রেখে অল্প করে হলেও নিয়মিত পানি বা ফ্রেশ লেমন জুস পান।
# দরজা-জানালা খুলে দিয়ে ঘরে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ঢোকার সুযোগ করে দিন।
# যে কোনো ঠাণ্ডা আইসক্রিম, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিঙ্ক বর্জন করুন।
# ধূমপান, ক্রনিক এলকোহলিক হলে সম্পূর্ণ বর্জন।
# নিয়মিত আপনার প্রদত্ত ওষুধ সেবন করুন।
# গুজবে কান দেবেন না !
# হৃদরোগীদের উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর), শ্বাসকষ্ট, কাশি দেখা দিলে অবিলম্বে হটলাইনে কল করুন, আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন, প্রয়োজনে নির্ধারিত হাসপাতালে প্রেরণ করুন।
সবাই সতর্ক, সচেতন থাকুন, আতঙ্কিত হবেন না, অন্যকেও করবেন না।
মনে রাখবেন, শুধু আপনার নিজেকে সুস্থ, ভাইরাসমুক্ত রাখা,হাজার মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে পারে। ভালো থাকুন, ঘরে থাকুন। সবাইকে সুস্থ রাখুন।
লেখক: কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৪ এপ্রিল ২০২০/এমএম





