বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ছাত্রছাত্রী হত্যার গুজব, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে যাওয়া রেনু বেগমকে ছেলেধরা বলে গুজব, লবণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাজারে গুজব- সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের গুজবের শিকার হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।সাধারণত ভুল ও অসঙ্গত তথ্যের সংমিশ্রণে তৈরি হয় গুজব। এরকম গুজবের ফলে পরিস্থিতি যে কোনো সময় যে কোনো দিকে চলে যেতে পারে। মুহূর্তে দেশ হয়ে উঠতে পারে অস্থিতিশীল।
রেনু বেগমের কথাই ধরা যাক। তিনি গিয়েছিলেন তার চার বছরের বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির তথ্য নিতে। কিন্তু তাকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে। এই নির্মম পরিস্থিতির জন্য গুজবই দায়ী। গুজবের জন্য প্রায়ই এরকম নির্মম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়; তারপরও আমরা সচেতন হচ্ছি না।দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৯ কোটি ৫ লাখ মানুষ (বিটিআরসি)। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৯ কোটি মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত থাকা নিঃসন্দেহে একটি ভালো দিক। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য হচ্ছে, ৯ কোটির বড় একটি অংশ তরুণ। ইন্টারনেট একেকজন একেকরকম কাজে ব্যবহার করেন।
কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা কেউ চাকরির প্রয়োজনে অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন। তরুণদের একটি বিরাট অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তাদের জীবনের একটি অংশে রূপান্তরিত করেছে।এর ফলে কেউ একটা কিছু লিখলে তা মুহূর্তেই লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, সেটা ভুল হোক কিংবা সঠিক। মানুষ শুধু খবরটা দেখছে, খবরটা কে দিচ্ছে তা দেখছে না। একটা বিষয়ে জানতে পারার পর সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার বাটন চেপে দিচ্ছে। ফলে ওই খবর মুহূর্তে হাজার থেকে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
খবরটি যদি সঠিক হয়, আমাদের সমাজের জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বটে; কিন্তু খবরটি যদি মিথ্যা হয়! তখন মানুষের কাছে ভুল একটি তথ্য যায় এবং মানুষ আতঙ্কিত হয়।মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য কিংবা সরলমনে শেয়ার বাটন চেপে দেয়ার ফলে অন্যরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে দেশে। এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি খুব কম মানুষই লক্ষ করে থাকে।
গুজবকে ছোঁয়াচে রোগের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হবে না। কারণ, এ রোগ একজন থেকে দু’জন, দু’জন থেকে চারজন, চারজন থেকে আটজন- এমনিভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ে। ঠিক তেমনি গুজবও এক কান থেকে অন্য কানে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়ে।গুজবের ধর্ম হল- এটি যত বেশি প্রচার হবে, তত বেশি শক্তিসম্পন্ন হবে। তবে এই প্রচার হওয়াটা নির্ভর করে যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গুজব ছড়ানোটা আরও বেশি সহজ হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য দেশ অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোয়ও অত্যাধুনিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে; কিন্তু ‘গুজব ভাইরাস’ সেসব দেশে এতটা শক্তিশালী নয়। কারণ, যারা শেয়ার বাটন চাপেন তারা চিন্তাভাবনা করে শুধু যেটা সঠিক মনে হবে সেটাই শেয়ার করেন।জাতি হিসেবে আমরা অনেকটা হুজুগে, এটা অস্বীকার করতে পারি না। এই হুজুগে কার্যকলাপের জন্য এরকম একটি অবস্থায় গুজব করোনাভাইরাস থেকেও অধিক কার্যকর হয়ে উঠবে। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত নন, তারা গুজবে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।একজন আতঙ্কিত মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই দেশ ও দশের কথা চিন্তা করে আমাদের সবার উচিত একটি সুস্থ, সুন্দর ইন্টারনেট জগৎ তৈরি করা, যাতে বিপদের সময় কেউ গুজব সৃষ্টি করে আমাদের আতঙ্কিত করতে না পারে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৪ মার্চ ২০২০ /এমএম





