আব্দুল্লা রফিক :: করোনা ভাইরাস ‘একটি অনেকগুলো ভাইরাস এর সমন্বয়ে গঠিত বড় গ্রুপ বা ফ্যামিলি’ যেটা সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে অনেক জটিল রোগের উৎপত্তি করে থাকে l Middle East Respiratory Syndrome (MERS – CoV)-মার্স এবং Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS -CoV)-সার্স এর সঙ্গে তুলনীয় l ২০১৯ সালে উৎপত্তি এই ভাইরাস একটি নতুন ধরণের l
এই ভাইরাসটিকে বলা হয় জোনোটিক (Zoonotic) যার অর্থ হচ্ছে এটা ‘পশু এবং মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়’ যেমনটি সার্স (SARS-CoV)সংক্রামিত হয়েছিল বিড়াল জাতীয় প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এবং মার্স (MERS-CoV) এসেছিলো উট থেকে মানুষের মধ্যে l
করোনা ভাইরাস এর সাধারণ উপসর্গ – জ্বর, কফ, শ্বাসকষ্ট
যার ফলে নিউমোনিয়া, জটিল শ্বাসকষ্ট, কিডনি জটিলতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে l
নিম্মবর্ণিত সাবধানতা নিয়মিত প্রাসেটিস এ পরিণত করা জরুরি :
নিয়মিত হাত ধৌতকরণ …
কাঁশি ও হাচ্চির সময় নাক মুখ ঢেকে রাখা …
সর্দি, কাঁশি, হাচ্চি আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে না যাওয়া ..
খাদ্য উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা ….
উৎপত্তিস্থল:
বিশ্বস্বাস্থ সংস্থা (WHO) চীন শাখা (China branch) ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর প্রথম কোরোনার ঘোষণা দেয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে I নিউমোনিয়া আক্রান্ত কিছু রোগীর এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, উহান শহরের সীফুড ও পোলট্রি মার্কেটকে এর উৎপত্তিস্থল বলে ঘোষণা দেওয়া হয় l প্রথম ব্যাচে ৫৯ জনকে সনাক্ত করা হয় যাদেরকে জানুয়ারী মাসে ‘জিনটান’ হাসপাতালে ভর্তি করে বিচ্ছিন্ন পরিবেশে রাখা হয় এরপর হুবেই প্রদেশের ১৭১৬ জন স্বাস্থ কর্মী এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়
কিন্তূ চীন খুব সফলভাবে এই মহামারীকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে পেরেছে আজকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮১০০০ যার মধ্যে বর্তমানে ভাইরাস মুক্ত হয়েছে প্রায় ৭০০০০ l এখনো সক্রিয় ভাইরাস যুক্ত আছে প্রায় ৮০৪৩, এর মধ্যে জটিল অবস্থায় আছে ২৬২২, এখন পর্যন্ত চীনে মারা গেছে ৩২৩৭ l
বর্তমানে ইউরোপে করোনা মহামারী ভয়ানক আকার ধারণ করেছে বিশেষ করে ইতালি, স্পেন, জার্মান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, সুইডেন সহ আরো অনেক দেশ l এর মধ্যে নতুন মৃত্যু সংখ্যা এবং আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার দিক দিয়ে ইতালি, স্পেন, জার্মানী, ফ্রান্স মারাত্মক অবস্থায় আছে
ইতালিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪২০৭, মৃতের সংখ্যা ২৯২০, মোট সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২৮৭১০ যেটা এখন পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে সর্বচ্চো সংখ্যা l স্পেন এ মৃতের সংখ্যা ৬৩৮ সক্রিয় আক্রান্ত ব্যাক্তির সংখ্যা ১৩০২৭ l
মধ্যপ্রাচের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান বড়ই নাজুক মোট মৃতের সংখ্যা ১১৩৮ আর সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ১০৫১৬, মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হরে বাড়ছে l এছাড়া কাতার, ইরাক, সৌদি আরবে বর্ধিত প্রতিদিন আকারে আক্রাম্ত হচ্ছে l
এশিয়াতে সাউথ কোরিয়ার অবস্থা নাজুক – মৃতের সংখ্যা ৮৪, সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭৮৯, এছাড়া জাপান, ইন্দোনেশীয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডে, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে l
আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা ১২৫ এবং সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭৮৮, কানাডায় মৃতের সংখ্যা ৯ এবং সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৭l
বাংলাদেশও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে, একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১০ জনl
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার বর্তমান পরিসংখান অনুযায়ী আক্রান্ত মানুষের মধ্যে যারা ‘৬০+ বয়সের বিভিন্ন ধরণের হেলথ ইস্যু দ্বারা যেমন ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাও, সহ আরো অনেক কিছু’ তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ … এছাড়া কোনো হেলথ ইস্যু ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ১৪ – ৩০ দিনের মধ্যে ভাইরাস মুক্ত হয়ে যায় …. তবে এটাও আবার নির্ভর করে ‘করোনা ভাইরাস পরিবারের’ কোনটা দ্বারা আক্রান্ত l
এতো প্যানিক এর মধ্যেও সুখবর হলো মার্কিন একটি ঔষধ কোম্পানি এই ভাইরাস চিকিৎসার ওষুধ বের করেছে l মার্কিন ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর অনুমতি সাপেক্ষে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বের করে ‘ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটল’ এর মানুষের উপর প্রয়োগ করেছে l সর্বশেষ তথ্যমতে আমেরিকা, কানাডা ,অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৪০০ জন ভলান্টারিলি এই ঔষধ গ্রহণ করার জন্য রেজিস্টার
করেছে l কোম্পানির ভাষ্যমতে আরো কয়েক ধাপ অতিক্রম করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে আরো কয়েক মাস লেগে যাবে l
খুব শিগ্রই এই সুসংবাদ বাস্তবে পরিণত হবে–এই আশায় বুক
বাঁধলাম ….
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৯ মার্চ ২০২০ /এমএম





