Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আমি নারী, আমার পথও একা, আমিও একা, চলেছি বিশ্বের দরবারে একা একা ভ্রমণের নেশায়, তবে আমি দুর্বল নই।২০০৯ সালে আমার বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করেছিল, তিনি মেরিনে জব করতেন তার বদৌলতে, তো একদিন তাদের বাসায় যাওয়া হয়,তার ২৬টি দেশের ভ্রমণ কাহিনী শুনে আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে বলি আমিও ভ্রমণ করব বিশ্ব দেখতে চাই তোমার মতো। আমার বন্ধুর মা আমাকে খুব অবজ্ঞা করে বলেছিল তুমি একটি মেয়ে, তোমার এ সব করার কাজ নেই, যখন তোমার বিয়ে হবে স্বামীর সঙ্গে ঘুরো, যদি সে পছন্দ করে।

তখন নিজেকে অনেক তুচ্ছ আর দুর্বল লেগেছিল, আরেকজন পছন্দ করবে কিনা আর আমি তার পছন্দের উপর নির্ভর করতে হবে? কেন? আমি কেন ঘুরতে পারব না, একা একা? কারণ, আমি একজন মেয়ে? কেন মেয়েদের টিকিটের দাম কি বেশি ছেলেদের চেয়ে?আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি আমার বাবা যেই টাকা আমার জন্য দিয়েছে একটি ছেলের জন্য সেই একই টাকা দেয়া লাগছে, একি শিক্ষক তাহলে কেন এত ভেদাভেদ শুধু আমি একজন নারী। আজকে ঠিকই ওই মহিলার মুখের উপর কুলুপ এঁটে দিয়েছি। আর এতে দিতে চাই এই টাইপের মহিলাদের কিংবা আত্মীয়-স্বজন কিংবা পুরুষ জাতিকে তারা যেন আর কখনও মহিলা আমি দুর্বল ভাবতে না পারে।

তাই যখন বিদেশে ভ্রমণ করি বিশ্বকে দেখাই যে তোমরা একটি সংগ্রাম করো তোমার ভ্রমণের জন্য, সেটি হচ্ছে অর্থনৈতিক, আর আমি তিনটি সংগ্রাম।এ যেন্ সংগ্রাম নয় যুদ্ধ, একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক যার মাধ্যমে আমি আমার নিজের স্বাধীনতা খুঁজে পাই, একটি হচ্ছে সামাজিক যার মাধ্যমে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব থেকে হাজারো কথা শুনতে পাই তার মধ্যে দিয়ে সংগ্রাম করে আমার ভ্রমণপথ চলেছে,আরও এতকিছুর পরে তিন নাম্বার যুদ্ধ আমি করি সেটি হচ্ছে নতুন নতুন দেশের ভিসা পাওয়ার যুদ্ধ, এ যেন প্রতিদিনই সকালবেলা শুরু হয় আমার জীবনে, যেটা আমি নয়, আমার বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে সংগ্রাম করা ইচ্ছা করলেই আমরা যেতে পারি না তোমার মতো যে কোনো দেশে।

মানুষ যখন আমায় জিজ্ঞেস করে তুমি নারী হয়ে কোন্ দেশে তোমার প্রবলেম হয়, আমি বলি ছোটবেলা থেকেই আমি সংগ্রাম করে বেঁচেছি।যখন রাস্তা দিয়ে ছোটবেলা যেতাম, তখন কিছু ছেলেরা খুব ডিস্টার্ব করত,আমি ঠিকই রিকশা গোড়ায় এসে জিজ্ঞাসা করতাম কি চায় তারা আর যদি উল্টাপাল্টা কথা বলে জুতাটা খুলে মুখে পেতাম। ছোটবেলা থেকে খুবই বিরক্ত লাগত কেউ যদি আর মেয়ে হিসেবে, আমাকে কোনো কিছু বলেছে তো? এখনও হাজার হাজার পুরুষ আছে এভাবে বলে যায়, তবে বুকের পাটা থাকলে সামনে এসে দেখ কি করি তোর অবস্থা?

আর পাছে লোকে কিছু বলে, কামিনী রায়ের সেই কবিতা সদা লাজ সদা ভয় পাছে লোকে কিছু বলে, আরে ওই পাশের লোকগুলো তো কাপুরুষ ভীরু, আর ওই যে নারীগুলো বলে তারা তো নিজেরা কিছু করতে পারে না সে জন্যই বলে জ্বলে পুড়ে মরে।দুবাইতে কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী আমার দিকে হেসে বলে আরে তোমায় নিয়ে তো লেখে না, আমি হেসে বলি আমিতো লিখব বলে ভ্রমণ করি না আমার ভালো লাগে বলে ভ্রমণ করি, আমার কাছে এত সময় নেই, তাদের দিয়ে লেখাব। আমি অনেক কষ্ট করে উপার্জন করি নিজ অর্থ, নিজেই চলেছি।

হাজার হাজার এরকম রয়েছে, যারা সারা দিন অন্যকে জ্বালানোর জন্য তৈরি থাকে, কারণ তাদের কিছুই করার নেই, আর এ সব এর মধ্যে দিয়েই, যে নারীরা উঠে আসে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তাদের জানাই হাজার হাজার সালাম আজ এই নারী দিবসে।আর ঘৃণা করি ওই নারীদের যারা একজন নারী হয়ে অন্য নারীর ক্ষতি করে, চরিত্রের কথা বলে, হিংসায় জ্বলে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৯ মার্চ ২০২০ /এমএম


Array