Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর তালিকায় গতবারের মতো এবারও শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাও দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে গতবারের মতোই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ থেকে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেশের বায়ুতে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণ বিবেচনায় তৈরি করা হয়। এমন মারাত্মক বায়ুদূষণের চিত্র কোনো দেশের জন্য সুখকর হতে পারে না।

বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ বিবেচনায় ওই তালিকার মান নির্ধারণ করা হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বায়ুর মানমাত্রা অনুসরণ করে বৈশ্বিক ওই সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বায়ুদূষণের এমন চিত্র বেশ হতাশাজনক। বিশ্বের অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ যেখানে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, সেখানে আমরা ২০১৮ সালের মতো এবারও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি।

আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, আগামীতে উন্নত দেশে রূপান্তর হওয়াটা আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু পরিবেশগত দিক বিবেচনায় আমরা আজও অনুন্নত পর্যায়েই রয়ে গেছি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশগত অবস্থা এমন হওয়ায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। এমন বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের ফলে নানা ভাইরাস সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকি থেকেই যায়। বায়ুদূষণের সৃষ্টি ও স ষ্টা আমরা নিজেরাই।ব্যক্তিগত অসর্তকতা, সামাজিক দায়িত্বহীনতা, অপরিকল্পিতভাবে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ ও পুরাতন অবকাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি গাছ কেটে বন উজাড় করে ফেলা, অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন ইত্যাদি বায়ুদূষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী।

দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান কাজ, কয়লার খনি হতে কয়লা উত্তোলন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বায়ুদূষণের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। অবৈধভাবে যেখানে সেখানে ইটভাটা স্থাপন এবং তাতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণ বেড়ে যাচ্ছে ঊর্ধ্বোগতিতে।

ইটভাটার কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে পরিবেশকে সংকটপূর্ণ আবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উৎসগুলোর মধ্যে ইটভাটার অবদান ৫৮ শতাংশ। এর পরই রয়েছে নির্মাণ ও মেরামত কাজের সঙ্গে আসা ধুলা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে বের হওয়া ধোঁয়া। অন্যদিকে শীতকালে আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশি খারাপ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় ধুলো-বালি বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ু দূষিত করে। রাজধানীতে ব্যাপক জনসংখ্যার ঘনত্ব, অতিরিক্ত যানবাহন ও যানজটের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে গাছের সংখ্যা কমে যাবে; সেইসঙ্গে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হতে পারে। এর ফলে বায়ুতে অতি ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ বেড়ে যাবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনবে।এসব সমস্যার সমাধান দ্রুত করা না গেলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই সবাইকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে বায়ুদূষণ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে হতাশ না হয়ে বরং উৎসাহ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়ি, কারখানা ও গাড়ি থেকে ধোঁয়া নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। উৎসব অনুষ্ঠানে আতশবাজির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে অন্যকেও নিরস্ত করতে হবে। যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণকার্যে পরিবেশের ক্ষতি না করে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশ ও বায়ুদূষণ হয় এমন যে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বায়ুদূষণ মোকাবেলায় সামাজিক সতর্কতার তাগিদ প্রয়োজন। সবাইকে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সব আইন মেনে চলার কথা বলতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনও রয়েছে।

সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা গেলে ৭০-৮০ শতাংশ দূষণ কমানো সম্ভব। তাই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকার ও দায়িত্বশীলদের কঠোর হতে হবে। ত্র“টিপূর্ণ যানবাহন বন্ধে প্রশাসনকে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে।

এর পাশাপাশি নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, পানি ছিটানো, নির্মাণ কাজ চলাকালে পানি ছিটানো এবং নির্মাণ সামগ্রী আচ্ছাদন দ্বারা আবৃতকরণও প্রয়োজন। যারা নিয়মিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বায়ুদূষণ করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৫ মার্চ ২০২০ /এমএম


Array