বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছরের সামনে দাঁড়িয়েও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তৈরি করতে না পারা দুঃখজনক। তার চেয়েও অসম্মানের বিষয় সরকারিভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাকি পাঁচটি তালিকা রয়েছে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি ক্ষমতায়। তা-ও টানা তৃতীয় মেয়াদ পার করছে সরকার।
ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক একটি তালিকা তৈরি এবং সে মোতাবেক পরবর্তী বিষয়াবলী চূড়ান্ত হবে বলে সবাই আশা করেছিলেন। সরকার কাজও শুরু করেছিল; কিন্তু আদালতের নির্দেশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির বিষয়টি ফের ঝুলে গেল। আমরা আশাবাদী, নির্ভেজাল একটি তালিকা প্রকাশের কাজ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। একাত্তরে কোনো ব্যক্তিগত চাহিদার কারণে নয়, বরং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবনবাজি রেখেছিলেন। এমনকি অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পর্যন্ত নেননি, কেবল নিঃস্বার্থ যুদ্ধ করেছেন বলে।
কিন্তু সরকার জাতির পক্ষ থেকে সম্মানস্বরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু অনারিয়াম দেয়ার ব্যবস্থা করায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব ঘটেছে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত বিষয়।
প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থানকারী কিছু কর্মকর্তা পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন চাকরিতে দুই বছর বেশি থাকার জন্য। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুযোগ-সুবিধা নেয়া যেমন দুঃখজনক, তার চেয়েও বেশি কষ্টের প্রমাণিত হওয়ার পরও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার বিষয়টি।
আশার কথা, শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। ২৬ মার্চের আগে তালিকা প্রকাশের লক্ষ্যে চালানো কার্যক্রম আদালতের নির্দেশে আপাতত থেমে গেলেও দ্রুত তা প্রকাশে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে ত্রুটিযুক্ত কোনো তালিকা কাম্য হতে পারে না।
প্রায় অর্ধশতাব্দীতে করতে না পারা একটা কাজ মাত্র কয়েকদিনে করলে তা টেকসই হবে না- সেটি বিবেচনায় নিয়েই হয়তো আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন কমিটির পাঠানো তালিকাও ছিল ত্রুটিযুক্ত। খোদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, ছক মোতাবেক কাজ না করে ৯৭ শতাংশ কমিটিই মতামত পাঠিয়ে দিয়েছে।
আর যাই হোক, এভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন হতে পারে না। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ সচেতন সবার দাবি।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/১৭ মার্চ ২০১৯/ইএন