বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: নতুন বছরে দলীয় ছাত্র রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গন চাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে মধ্যবিত্ত বা নিুমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। এ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে পরিবার বা তাদের ব্যক্তিগত নানা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর তারা জ্ঞানচর্চার পরিবেশ পায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কর্তৃত্বে থাকে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন। সেক্ষেত্রে নিরুপায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রদের বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়।রাজনীতির চর্চা যদি আজ সঠিকভাবে এগিয়ে যেত, তাহলে বর্তমানে দেশ বা শিক্ষাঙ্গন এমন বিভ্রান্তিতে পড়ত না। শিক্ষাঙ্গনে আজ যেখানেই অরাজকতা, খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে এর পেছনে মূল কারণ ছাত্র রাজনীতি।
ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোকে আজকাল কোনো মহৎ কাজ করতে দেখি না। কল্যাণের অজুহাতে যে ছাত্রসংগঠন কাউকে খুন করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, সেই সংগঠনের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো একই ধাঁচের রাজনীতি চর্চা করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের দৌরাত্ম্য ছিল, বর্তমানে ছাত্রলীগের। নামে নয় কাজে যদি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ হতো, তাহলে হয়তো বর্তমান শিক্ষাঙ্গন সত্যিই শিক্ষাবান্ধব হতো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুসারে, গত ১০ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ২৪ শিক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন। এসব হত্যাকাণ্ডের ১৭টি ঘটেছে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে।মূলত লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রকে খুন করার এখতিয়ার কি কোনো সংগঠনের গঠনতন্ত্রে আছে? সামান্য একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস যদি আবরার ফাহাদের মৃত্যুর কারণ হয়, তাহলে সেই ছাত্রসংগঠনের কাছ থেকে কতটুকু সামাজিক উন্নয়ন দেশ বা জাতি আশা করতে পারে।
ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে পাশে থাকবে এমন ছাত্র রাজনীতি চাই। যে সংগঠন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, টেন্ডারবাজিতে জড়িত তেমন ছাত্রসংগঠন কাম্য নয়। দেহবল যখন কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যথেষ্ট নয়, তখন মুক্ত কলম হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাতিয়ার।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় হোক নোংরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত। শিক্ষাঙ্গন হবে মুক্ত জ্ঞান আহরণের স্থান, যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক ও সামাজিক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা।গবেষণার জন্য একেকজনের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-চেতনা থাকাটাই স্বাভাবিক। সবার চিন্তা এক নয়। যেখানে চিন্তা ভিন্ন সেখানে মতাদর্শ ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই স্বাধীনতাটুকু না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত জ্ঞান আহরণ বা চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৭ জানুয়ারি ২০২০ /এমএম





